মাত্র ১৯ নম্বর পেয়ে রাবিতে ভর্তির সুযোগ!

রাবি প্রতিনিধি:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মাত্র ১৯ নম্বর পেয়েও ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন এক পরীক্ষার্থী। এছাড়াও খেলোয়াড় কোটায় আরও তিনজনকে ভর্তির সুযোগ দিচ্ছে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু তাদের কারোরই ন্যুনতম পাশ নম্বর ৪০ নেই। গত রোববার ভর্তি উপ-কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সুুপারিশপ্রাপ্ত ভর্তিচ্ছুরা হলেন, নৌখা নায়েল ত্রিপুরা, মো. আশরাফুল হক, অনিক দাস ও মো. রিফাত হোসাইন আশিক।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন করছে বলে মনে করছেন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা। তারা বলছেন, এতে চরমভাবে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে। তারা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন না। এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিশ^বিদ্যালয়ের মর্যাদা ক্ষুণ্নের অধিকার তাদের নেই। এসব ভবিষ্যৎ শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শরীরচর্চা শিক্ষা বিভাগ রাবির বিজ্ঞান অনুষদের অধিভুক্ত। এ বিভাগে বিকেএসপি কোটায় ভর্তি হতে হলে ন্যুনতম পাস নম্বর ৪০ পেতে হবে। তবে শিক্ষার্থীদের বিকেএসপি’র সনদপত্রের ফটোকপি এবং অন্যান্য অ্যাকাডেমিক কাগজপত্র থাকতে হবে। এদিকে বিশেষ বিবেচনায় গত ৬ নভেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি উপ-কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুধুমাত্র পোষ্য কোটার ক্ষেত্রে পাস নম্বর ৪০ থেকে ৩০ নম্বর করা হয়েছে। তবে খেলোয়াড় কোটায় কোনো পাস নম¦র কমানো হয়নি। কিন্তু ওই বিভাগে ন্যূনতম পাস নম্বর ৪০ না পেয়েও চারজনকে ভর্তি করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খেলোয়াড় কোটায় চারজনকে ভর্তির জন্য সুপারিশ করেছেন শরীর চর্চা শিক্ষা বিভাগের পরিচালক এম আসাদুজ্জামান। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন বিশেষ বিবেচনায় তাদেরকে ভর্তির সুযোগ দেয়। তাদের মধ্যে ‘বি’ ইউনিটের রিফাত হোসাইন আশিকের প্রাপ্ত নম্বর মাত্র ১৯.৩৫ এবং একই বিভাগের অনিক দাস পেয়েছেন ২৬.২৫। তাদের দুজনের বিকেএসপি কোটা রয়েছে। এছাড়াও ‘এ’ ইউনিটের নৌখা নায়েল ত্রিপুরা ভর্তি পরীক্ষায় পেয়েছেন ৩৭.৬৫ নম্বর এবং একই ইউনিটের আশরাফুল হক পেয়েছেন ৩৪.২৫ নম্বর। তাদের জন্য কোনো ধরণের কোটা না থাকলেও তাদেরকে বিশ্ব বিদ্যালয়ে খেলোয়াড় বিবেচনায় ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘ফেল করা শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানোর ফলে বিশ^বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। যারা এমনটি করছেন তাদের অধিকার নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার।’

রাবি শহীদ হবিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী রেজওয়ান গাজী মহারাজ বলেন, পাস না করার পরও কীভাবে বিভাগে ভর্তি হয় আমার বুঝে আসে না। এখানে হয়তো কোনো দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি আছে। তারা কার যোগসাজসে ভর্তি হয়েছে সেটা খতিয়ে দেখার দাবি জানান রাবির এই শিক্ষার্থী।

শরীরচর্চা শিক্ষা বিভাগের পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, চারজন খেলোয়াড়কে ভর্তির জন্য মনোনীত করা হয়েছে। কিন্তু এখনো ভর্তি করা হয়নি। ভাইস চ্যান্সলরের ক্ষমতাবলে দেওয়া হয়েছে, জাতীয় অথবা আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় হলে তিনি সেটা বিবেচনা করে ভর্তি করাতে পারেন। খেলোয়াড় কোঠায় কোন নাম্বার থাকে না। উপ-উপাচার্য গুরুত্ব বুঝে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এর আগেও, ১৮ পেয়ে ভর্তি করানো হয়েছিল। সে এখন জাতীয় খেলোয়াড় । আগের বার ২ জনকে বিবেচনা করা হয়েছিল। পরে ১ জনকে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি উপ-কমিটির প্রধান ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘ভর্তি কমিটির সকলের সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেহেতু ভর্তি উপ-কমিটির সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে তাই তারা ভর্তির সুযোগ পাবেন।’

জি/আর