মাঠ সঙ্কটে পিছিয়ে পড়ছে রাজশাহীর ক্রীড়াঙ্গন, যুবসমাজ ঝুঁকছে মাদকে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী নগরীর প্রধান খেলার মাঠ বলতে এখন যেটিকে বোঝানো হয়, সেটি হলো মুক্তিযুদ্ধ স্টেডিয়ামে। কিন্তু স্কুল ক্রিকেট, স্কুল ফুটবল, বিভিন্ন জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে নানা আয়োজনের বছরজুড়ে মাঠটিতে ব্যস্ততা যেন লেগেই থাকে। কখনো মাঠ ফাঁকা না পাওয়ায় ঠিকমতো জেলা ক্রীড়া সংস্থাও খেলার আয়োজন করতে পারছে না। এভাবে মাঠের সঙ্কটের কারণে রাজশাহীতে ক্রীড়াঙ্গনে প্রচুর সম্ভাবনা থাকলেও শুধুমাত্র মাঠ সঙ্কটের কারণে ক্রীড়ায় মনোযোগ দিতে পারছে না হাজার হাজার যুবক-যুবতি। এতে করে ঝুঁকে পড়ছে মাদকসহ নানা অপরামূলক কর্মকাণ্ডে।

তারপরেও নানা সঙ্কটের মাঝে কিছু যুবকরা মাঠে যেতে পারলেও মেয়েদের সেই সুযোগটা যেন একেবারেই নাই। অথচ রাজশাহীতে বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স এবং বিশালাকার একটি মাঠ থাকলেও সেটিতে নারীদের খেলার কোনো সুযোগ থাকছে না। এতে করে রাজশাহী নারীরা ক্রমেই ক্রীড়ার দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছে।

আবার মাঝে মাঝে মাঝে দুই একটি লীগ ছাড়া বছরজুড়ে ফাঁকা পড়ে থাকছে রাজশাহী বিভাগীয় স্টেডিয়াম।
সরেজমিন রাজশাহীর কয়েকটি খেলার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি মাঠেরই যেন বেহাল দশা। একমাত্র রাজশাহী কালেক্টরেট মাঠ এবং রেলওয়ে মাঠটি কিছুটা খেলার উপযোগী রয়েছে। এ কারণে এই মাঠ দুটিতে রাত-দিন চলে সমানে নানা ধরনের খেলা ও প্রশিক্ষণ।

রাজশাহী কালেক্টরেট মাঠে বৈকালী সংঘের উদ্যোগে চলে হকি এবং ক্রিকেট প্রশিক্ষণ। পাশাপাশি চলে দুটি খেলা। যখন যেটির প্রয়োজন হয়, সেই খেলার জন্য মাঠ প্রস্তুত রাখে বৈকালী সংঘ। তবে এখানে মাঝে মাঝে থাবা পড়ে বাণিজ্য মেলার। এতে করে বছরে অন্তত দুই মাস মাঠটিতে সব ধরনের খেলা বন্ধ হয়ে যায়। তখন ক্রিকেট এবং হকি খেলার প্রশিক্ষণার্থীরা অলস বসে থেকে সময় কাটান। মাঠ দখল হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে কখনো বৈকালী সংঘের খেলোয়াড়রা রাস্তায় নেমে পড়েন হকি প্রশিক্ষণে। এবারও চলতি মাসের শেষের দিকে বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে মাঠটিতে। সে অনুযায়ী প্রশাসন থেকে বৈকালী সংঘকে বলেও দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় আবারো চরম সঙ্কটে পড়বে এই ক্লাবটিসহ আশে-পাশের তিন শতাধিক ক্রীড়াবিদরা।

রাজশাহীর বৈকালী সংঘের সধারণ সম্পাদক রইচ উদ্দিন বাবু অভিযোগ করে বলেন, রাজশাহীতে ক্রীড়া ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এই ক্ষেত্রটি শুধুমাত্র মাঠের অভাবে দিন দিন পিছিযে পড়ছে। দুই-একটি মাঠ খেলার উপযোগী থাকলেও বছর বছর বাণিজ্য মেলা, সরকারি বিভিন্ন দিবস পালন করতে গিয়ে মাঠগুলোর বারোটা বাজানো হচ্ছে। বিশেষ করে প্রতি বছর কালেক্টরেট মাঠ দখল করে বাণিজ্য মেলা হওয়ার কারণে এখানে প্রায় দুই মাস খেলা বন্ধ থাকে। এরপর বর্ষা মৌসুম তো আছে। ফলে মাঠ সঙ্কটের কারণে রাজশাহীর ছেলে-মেয়েরা ক্রীড়ার দিক থেকে মনোযোগ হারাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ছেলেরা নানা সমস্যার মধ্যে কিছুটা মাঠে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু মেয়েদের সেই সম্ভাবনা থাকছে না মাঠ না থাকায়। এতে করে নারীরা আরও বেশি করে পিছিয়ে পড়ছে ক্রীড়া ক্ষেত্রে।
রাজশাহীর বিভাগীয় স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা যায়, স্টেডিয়ামটির চার কর্ণারে চারটি ছোট ছোট মাঠ থাকলেও সেগুলো সংস্কারের অভাবে খেলার অনুযোগী হয়ে আছে। স্থানীয় এবং একটি কম্পানীর উদ্যোগে দুটি কর্ণারে সংস্কার করে কোনো মতে খেলার পরিবেশ ঠিক রাখা হয়েছে। তবে অন্য দুটি কর্ণারে একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে খেলার পরিবেশ।

জানতে চাইলে রাজশাহীর বিলসিমলা এলাকার বাসিন্দা আকবর বলেন, আমাদের নিজেদের উদ্যোগে স্টেডিয়ামের একটি কর্ণার সংস্কার করে সেখানে কোনো মতে খেলার পরিবেশ ঠিক রাখা হয়েছে। এর ফলে প্রতিদিন সকালে এখানে শরীর চর্চার জন্য ফুটবল খেলা হয়। এরপর একটি কম্পানীর উদ্যোগে স্টেডিয়ামে গড়ে তোলা ক্রিকেট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের খেলোয়াড়রা সেখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার সুযোগ পায়। আবার বিকেলে স্থানীয়রা ক্রিকেট খেলতে পারে। এগুলোর সবই হয় শুধুমাত্র স্থানীয়দের কল্যাণে।

রাজশাহী বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, এই মাঠটিতে সকাল-বিকেল স্থানীয় এবং একটি কম্পানীর উদ্যোগে গড়ে তোলা ক্রিকেট প্রশিক্ষণার্থীদের নিয়ে খেলা-ধুলার আয়োজন করা হয়। কিন্তু এখানে নারীদের খেলার কোনো ব্যবস্থা নাই। জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা সুমন হোসেন বলেন, মাঠটি সারা স্থানীয়রাই ঠিক রাখে। না হলে সারা বছর অবহেলায় পড়ে থেকে মাঠটটি নষ্ট হয়ে যায়। কয়েক বছর বিশালকারের আগাছায় পরিপূর্ণ হয়ে ছিল। পরে স্থানীয়রা সেখানে খেলার পরিবেশ সৃষ্টি করেন।

এর বাইরে রাজশাহী রেলওয়ে মাঠে লাল-সবুজ এবং আল রশিদের উদ্যোগে ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠি হয়। এখানে ক্রিকেট প্রশিক্ষণও হয়। রাজশাহী কলেজ মাঠেও সাদ স্পোর্টসের উদ্যোগে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ এবং খেলা হয়। এছাড়া শাহমখদুম মাদ্রাসা মাঠে ফুটবল প্রশিক্ষণ এবং স্থানীয়রা ক্রিকেট খেলায় মেতে উঠেন। এর বাইরে রাজশাহীতে খেলার মতো মাঠ খুঁজে পাওয়া বলে দুস্কর। কিন্তু যেসব মাঠ আছে, সেগুলোও সরকারিভাবে সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। ফলে খেলা চালু রাখতে স্থানীয় বা বিভিন্ন সংগঠনের ওপরই ভরসা করেনে ক্রীড়াবিদরা।

জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রাফিউস সামস প্যাডি বলেন, ‘রাজশাহীতে খেলার পরিবেশ নাই শুধু মাত্র মাঠ সঙ্কটের কারণে। এতে করে অধিকাংম যুবকরা ঝুঁকে পড়ছে মাদকের নেশায়। মাঠ থাকলে জেলা ক্রীড়া সংস্থাও আরও বেশি বেশি খেলার আয়োজন করতে পারবে। কিন্তু মাঠের অভাবে সেগুলো সম্ভব হচ্ছে না। এক জেলা স্টেডিয়ামের ওপর হচ্ছে একের পর এক খেলা। ফলে এ স্টেডিয়ামটিতেও খেলার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে।’

স/আর