মাটির নিচে রূপকথার জাদুঘর!

বিখ্যাত রূপকথা লেখক হান্স ক্রিস্টিয়ান আন্ডারসন ডেনমার্কের ওডেনজে শহরে জন্মেছিলেন। তার জীবনের কাজ তুলে ধরতে গত জুন মাসে ওডেনজেতে একটি নতুন মিউজিয়াম উদ্বোধন করা হয়। ওডেনজের একেবারে কেন্দ্রে শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত সন্তান হান্স ক্রিস্টিয়ান আন্ডারসনকে নিয়ে একটি মিউজিয়াম গড়ে তোলা হয়েছে। নতুন এই মিউজিয়ামের বেশিরভাগ অংশ আছে মাটির নিচে। মাটির উপরেও আছে কিছুটা। সেখানে গেলে দর্শকরা আন্ডারসনের বিভিন্ন রূপকথার দৃশ্য নিজেদের মতো করে উপভোগ করতে পারবেন।

মিউজিয়ামের প্রধান হেনরিক ল্যুবকা জাদুঘরের মারমেইড এরিয়া সম্পর্কে বলেন, ‘‘এখানে (মারমেইড এরিয়া) আপনি আসতে পারেন। এসে পাথরের ওপর শুয়ে থাকতে পারেন, আবার আকাশের দিকেও তাকিয়ে থাকতে পারেন। অন্য মারমেইডরা ওই জায়গার সৌন্দর্য সম্পর্কে কী গল্প করছে, তা শুনতে পারেন। সুন্দর মৎস্যনারীদের গানও শুনতে পারেন। আর আকাশ যেন আপনার নিজের স্বপ্ন পূরণের ক্যানভাস – আপনি সেদিকে তাকিয়ে আপনার ইচ্ছার কথা ভাবতে পারেন, ঠিক যেমনটা ছোট্ট মারমেইড ওখানে জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখেছিল।

ডেনমার্কের রানি দ্বিতীয় মারগ্রেটে গত জুন মাসে এই মিউজিয়াম উদ্বোধন করেন, যদিও কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি।

 

হান্স ক্রিস্টিয়ান আন্ডারসনের রূপকথা, মোটিফ ও বিভিন্ন চরিত্র, যেমন ‘দ্য নাইটেঙ্গেল’, ‘দ্য প্রিন্সেস অ্যান্ড দ্য পি’ কিংবা ‘দ্য লিটল গার্ল উইথ দ্য সালফার স্টিকস’ এখনো বিশ্বের সব বয়সের মানুষকে অনুপ্রেরণা দেয়।

হেনরিক ল্যুবকা প্রায় দশ বছর এই প্রকল্পে আর্টিস্টিক ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছেন। তিনি এমন এক মিউজিয়াম গড়ে তুলতে চেয়েছেন, যেখানে একটি রূপকথার বাগান থাকবে, থাকবে আধুনিক স্থাপত্য আর হান্স ক্রিস্টিয়ান আন্ডারসনের বিভিন্ন কাজ।

ঐতিহাসিক শহর ওডেনজের একেবারে কেন্দ্রে নতুন এই মিউজিয়াম গড়ে তোলা হয়েছে। হেনরিক ল্যুবকা বলেন, ‘‘আমরা এমন এক মিউজিয়াম গড়ে তুলতে চেয়েছি যেন সেটা আন্ডারসন যেভাবে গল্পগুলো বলতে চেয়েছেন তার সঙ্গে খাপ খায়। তাই আমরা তার সৃষ্টির মূল্য, তার সাহিত্য লেখার কৌশল, এগুলো মাথায় রেখে কাজ করেছি। তিনি কীভাবে তার গল্পগুলো বলেছেন, এবং আমরা কীভাবে তার গল্পগুলো সাহিত্যের পাতা থেকে অন্যরকম অভিজ্ঞতায় নিতে পারি, তা বিবেচনা করেছি।’

নতুন মিউজিয়ামের ডিজাইনের জন্য সারা বিশ্ব থেকে আবেদন চাওয়া হয়েছিল। পরে জাপানের বিখ্যাত ‘কেঙ্গো কুমা অ্যান্ড এসোসিয়েটস’কে কাজ দেওয়া হয়। কারণ, তাদের ডিজাইনটি হান্স ক্রিস্টিয়ান আন্ডারসনের খোলা ন্যারেটিভ স্টাইলের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সংগতিপূর্ণ ছিল।

এই ডিজাইন বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছেন জাপানি স্থপতি ইয়ুকি ইকেগুচি। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বৃত্তাকার ডিজাইন বেছে নিয়েছি। কারণ, আমরা চেয়েছি এটা একটা চেনের মতো কাজ করবে। অর্থাৎ সবকিছুকে একসঙ্গে জুড়ে রাখবে। মাটির উপর ও নিচে থাকা মিউজিয়ামের বিভিন্ন অংশকে এক করে রাখবে। এতে বাস্তবতা ও ফ্যান্টাসি, দুটি বিষয়ই ফুটে উঠবে।’

সাড়ে পাঁচ হাজার বর্গমিটারের মিউজিয়ামের বেশিরভাগই মাটির নিচে। আর রূপকথার বাগানটি মাটির ওপর বানানো হচ্ছে। স্টিল, কাচ আর কাঠ দিয়ে বানানো বৃত্তাকার কাঠামো পুরো মিউজিয়ামজুড়ে রয়েছে। স্থাপত্য আর প্রকৃতি এখানে মিলেমিশে আছে। এভাবে দর্শকদের স্বপ্নের জগতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

ইয়ুকি ইকেগুচি বলেন, ‘‘এমন আকার ও সিকোয়েন্সের স্থাপত্য নির্মাণ করতে পেরে আমি খুব খুশি। যখন আমি কোনো এক জায়গায় দাঁড়াই তখন আমার কাছে অনেক বিস্ময় ধরা দেয়। পরিকল্পনার সময় আমি জানতাম যে, মিউজিয়ামের ভেতর অনেক ভালো জায়গা আছে। কিন্তু তারপরও এসব জায়গার মধ্যে অপ্রত্যাশিতভাবে ভালো কিছুর দেখা আমি পাই, যে কারণে আমি খুব খুশি।’

হেনরিক ল্যুবকা বলেন, ‘‘ঢালু পথ অনেকটা আন্ডারসনের জীবনের মেটাফোরের মতো। যখন আপনি নিচে নামতে থাকেন তখন যেন আপনি তার জীবনের মধ্যে প্রবেশ করতে থাকেন। একসময় আপনি নির্দিষ্ট থিম নিয়ে তৈরি জায়গায় ঢুকে পড়েন। এভাবে আপনি নিজের জীবন থেকে দূরে সরে গিয়ে রূপকথার জগতে চলে যান।’

এ বছরের মধ্যেই মিউজিয়ামের কাজ পুরো শেষ হবার কথা। অর্থাৎ একটা সুখী সমাপ্তির আশা করা হচ্ছে।

 

সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন