পেশা যখন মাছ কাটা

আব্দুর রহিম
“মাছ কাটছি ৩০ বছর। ছোট থেকে এই পেশায় থাকায় এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। এটাই আমার রটি-রুজি। প্রতিদিন যা পাই সেটা দিয়েই সংসার চলে যায়।” কথাগুলো বলছিলেন, মো: তুজিন (৫৩)। নব্বইয়ের দশক থেকে মাছ কেটে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। প্রায় ৩ দশক পার করেছেন এই পেশায়।

দুই ছেলে, স্ত্রী শ^শুর-শাশুড়ীসহ মোট ৬ জনের পরিবার। বাবার সংসারের অভাব অনটন দূর করতেই ছোটকালে এসেছিলেন এই পেশায়। এখন নিজের সংসার চলে। বড় ছেলেকে সংসারের অভাবে পড়াশোনা না করাতে পারলেও ছোট ছেলেকে পড়াশোনা করান।

করোনার প্রভাব পড়েছে তুজিনের মতো এই পেশার শ’খানেক পরিবারে। শিক্ষা নগরী হওয়ায় রাজশাহীতে মেস বন্ধ থাকায় কমে গেছে মাছের বিক্রি। অনেক মাছব্যবসায়ী ব্যবসা ছেড়েছেন। ফলে এই পেশায় নিয়জিতরা এখন বেকার হয়ে পড়েছেন। রাজশাহী মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির তথ্য অনুযায়ী শুধুমাত্র রাজশাহী শহরেই এরকম দিনমজুর রয়েছে প্রায় দেড়শতাধীক।

তবে বর্তমানে রাজশাহী সাহেববাজার মাস্টারপাড়া মাছের বাজারে গেলে দেখা মিলবে এরকম ৪০ থেকে ৫০ জন শ্রমিকের। ক্রেতার মাছ পরিস্কার করে পিস পিস করে দেওয়ার দায়িত্ব এই শ্রমিকদের।

বিনিময়ে মাছ বিক্রেতারা বেতন দিয়ে থাকেন। এসব মজুররা করোনার পূর্বে দিনে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পেলেও এখন পাচ্ছেন ২০০-৩০০ টাকা। এতে করে পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন এই পেশার মানুষরা।

কথা হয় তুজিনের সাথে। তিনি বলেন, লকডাউনেতো সারা বছর বন্ধু ছিলোই। যদিও এখন লকডাউন খুলে দিয়েছে কিন্তু বাজাওে মানুষ খুবি কম। করোনার এই মহামারিতে মানুষজন বাজারে আসেনা, বাজার করে না। মাছ বিক্রি কমে যাওয়ার কারণে মহাজন আগের মতো টাকা দিতে পারেনা। আগে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা দিন দিলেও এখন অর্ধেকও দেয় না। কোন মতে দিনাতিপাত করে চলছে। মনে হয় আত্মহত্যা করি।

কতদিন থেকে এই পেশায় জানতে চাইলে বলেন, প্রায় ৩০ বছর যাবত এই পেশায়। আগে হাতেগুনা দু-একজন মাছ কেটে নিত। কিন্তু এখন ছোট হোক বড় হোক সব মাছ কেটে দিতে হয়। মাছ কাটার চাহিদা অনেক। মাছ কাটতে খারাপ লাগলেও দিনে ৫০ থেকে ৬০ মণ মাছ কাটার অভিজ্ঞতাও রয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে দীর্ঘদিন এই পেশায় থাকার কারনে আর খারাপ লাগে না। তবে সারাদিন মাছ কেটে হাতে ঘা হয়ে যায়। শীতের দিনে আরো বেশি কষ্ট হয়।

জানতে চাইলে মাছ ব্যবসায়ী বাবু বলেন, “শিক্ষা নগরী শিক্ষার্থী ছাড়া অচল হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থী ছাড়া বাজার জমে না। সাধারণ মানুষ আর কয়টা বাজার করে। শিক্ষার্থী নিয়েই আমাদের মূল ব্যবসা কিন্তু কবে নাগাদ শিক্ষার্থী ফিরবে কেই বা জানে।

মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক বাবলু বলেন, আমার সমিতির ৩’শ জন ব্যবসায়ী আছে। তাদের কাছে এরকম মাছ কাটার জন্য মজুর থাকে। দিনে ৩’শ থেকে ৫’শ টাকা দিতে হয়। কিন্তু বাজার আস্তে আস্তে ছোট হয়ে আসছে।

ব্যবসা কমে যাচ্ছে। কারণ আমাদের মাছ আনলোড করার জন্য যদি কোন জায়গা থাকতো তাহলে আমাদের জন্য ভাল হত। আর যদি গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা থাকতো সেটাও ভালো হতো।

সেখানে আমাদের মত ব্যবসায়ীরা লসে পড়তো না। রাজশাহীতে ফুটপাতে অনেক অনেক জায়গাতে মাছের বাজার বসে গেছে। যার ফলে রাজশাহী সাহেব বাজার লসের ভিতরে পড়ে গেছে। সরকারের কাছে আকুল আবেদন করছি এ ধরনের ফুটপাতের বাজারগুলো যেন দ্রুততার সহিত উঠিয়ে দেয়া হয়। যাতে করে মুল বাজারে মানুষের যাতায়াতের সুযোগ-সুবিধা ভালো হয়।

স/এআর