‘মহিলা ড্রাইভার বলে আমাদের কম বেতন দেয়া হয়’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ঢাকার রাস্তায় কোন মহিলা ড্রাইভার কি কখনো চোখে পড়েছে? হাজারো গাড়ির ভিড়ে একজন মহিলা গাড়িচালক ঢাকার রাস্তার সবচেয়ে বিরলতম দৃশ্য।

খুবই অল্প, হাতে গোনা কজন পেশাদার গাড়িচালক আছেন এই নগরীতে। সুফিয়া খাতুন তাদের একজন।

তার সঙ্গে কথা বলতে অনেক খুঁজে পেতে বের করি বনানীর উঁচু উঁচু দালানের পেছনে এক ছোট্ট চালাঘর।

এখানেই থাকেন সুফিয়া খাতুন। মেয়েদের গাড়ি চালাতে দেখতে অভ্যস্ত নয় ওেয সমাজ, সেখানে একেবারে পেশাদার গাড়িচালকের পেশা বেছে নেয়ার কাজটা সহজ ছিল না। তারপরও সেই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলেন সুফিয়া খাতুন।

কিন্তু এখন পদে পদে নানা বাধা-বিপত্তির শিকার তিনি।

“এই পেশায় আমাকে পুরুষদের সাথে কম্পিটিশন করতে হয়। একই কাজ করি। অথচ মেয়ে বলে আমাকে কম বেতন দিতে চায়।”

“মেয়েরা যতই কাজ করুক তারপরেও লোকে ভালো চোখে দেখেনা। যারা এই ড্রাইভারের কাজ করে তাদের মালিক বা অন্য ড্রাইভারদের কাছে নানা রকম ভাবে নির্যাতিত হতে হয়। এজন্যে অনেকে চলে যাচেছ এ পেশা থেকে।”

গাড়িচালক হিসেবে একজন মহিলাকে নিয়োগ দিতে কতটা প্রস্তুত ঢাকার নাগরিকরা?

এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকার বাসিন্দা কাজী আলীম উজ জামান বলেন তিনি এখনই প্রস্তুত নন।

” নারী ড্রাইভার নিতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু সমাজে নারী গাড়ি চালক একেবারেই নতুন। পুরুষ ড্রাইভারকে সকাল বিকাল যখন ইচ্ছে আসতে বলি। অনেক সময় গভীর রাত পর্যন্ত সে থাকছে আমার সাথে। এসব বিষয় বিবেচনা করলে নারী চালক নিতে আমি এখনই তৈরি নই। তবে নারীরা বেশি করে এ পেশায় আসলে আমি খুশী হবো।”

তবে ইতোমধ্যেই যারা নারীদের গাড়ি চালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন তার মধ্যে রয়েছেন একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা কিশোয়ার নাজনীন।

তিনি বলছেন নারী চালকরা অনেক বেশি আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করে এবং গাড়ী চালনার ক্ষেত্রেও তারা বেশি সচেতন থাকে।

মিস নাজনীন বলেন, “আমি তিনজন নারীচালক রেখেছিলাম। প্রথম চালকটি আমার ঘরের কাজেও সহায়তা করতো। আমার মেয়েকেও দেখ-ভাল করতো। তবে সমস্যা হচ্ছে দুরের যাত্রার ক্ষেত্রে হয়তো মেয়েদের নিয়ে যেতে সাহস একটু কম পাবো, যেটা পুরুষ চালককে নিয়ে হয়তো সহজেই দুরে যাওয়া যায়।”

একটি বেসরকারি সংস্থায় মেয়েদের প্রশিক্ষন ও পরে চালক হিসেবে চাকুরীতে যোগদান প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত কর্মকর্তা সন্তোষ সরকার বলেন, “অনেকে অন্য চাকরীতে যাচ্ছেন । আবার অনেক ক্ষেত্রে নারী চালকদের বাথরুম বা বা বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ না থাকা একটা সমস্যা।”

তবে সামাজিক কিংবা কাজের ক্ষেত্রে দৃস্টিভঙ্গি যাই হোক বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি সুপরিচিত উন্নয়ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে পেশাদার চালক হিসেবে কাজ করছে অনেক নারী।

আর নারী চালকদের বিষয়ে পুরুষ চালকরাই বা কি ভাবছেন। গুলশানের একটি বেসরকারি কোম্পানীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত গাড়ী চালক মন্টু সরকার বলছেন গাড়ী চালানোর তো টাইম টেবিল ঠিক থাকেনা। মেয়েদের তো ঘর সংসারও সামলাতে হয়।

তবে ঢাকায় সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ বলেছেন দেশে আরও মহিলা ড্রাইভারের প্রয়োজন রয়েছে।

আর নারী চালকরা অনেকে বলছেন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেশি করে নারীদের চালক হিসেবে নিয়োগ দিলে তার প্রভাব পড়বে বেসরকারি খাতেও এবং ব্যক্তিপর্যায়েও, যা মেয়েদের গাড়ী চালনাকে পেশা হিসেবে নেয়ার পথে বাধাগুলো দূর করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা