শনিবার , ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

মহানবী (সা.)-এর জীবনে অর্থনৈতিক কর্মসূচি

Paris
সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪ ১২:০০ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুকরণীয় জীবনধারা এবং নিখুঁত শাসনব্যবস্থা ইয়াসরিব (মদিনা) শহরকে বিশ্বের সেরা সফল রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রয়োজন হলো এসব ইতিহাস-খচিত সফল ইসলামী রাষ্ট্রের সব দিক সর্বদা সামনে রাখা, যাতে আমরা কঠিন পরিস্থিতিতে ‘উসওয়ায়ে হাসানা’ (উত্তম আদর্শ)-এর আলোকে আমাদের সমস্যার সমাধান করতে পারি।

এর বিপরীতে আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক জীবনব্যবস্থা দেখতে পাই একটি আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপর ব্যবস্থা, যা ইসলামী মূল্যবোধ সৃষ্টি, বিকাশ ও স্থিতিশীলতার প্রধান অন্তরায়। মানুষের আচার-আচরণ ও জীবনে যখন লোভ-লালসা, কৃপণতা, বিদ্বেষ, স্বার্থপরতা প্রবল হয়ে ওঠে, তখন সুধীসমাজ ও সমাজের জনসাধারণ থেকে মানবকল্যাণের জন্য ব্যয়ের খাতসহ অন্যান্য মূল্যবোধ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।

এর ফলে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়, সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিক বঞ্চনার শিকার হয়। ফলে পুরো সামাজিক জীবন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে এবং রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের সূত্রপাতও ঘটে। নিম্নে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সিরাতের আলোকে অর্থনৈতিক কর্মসূচি তুলে ধরা হলো—

অর্থনৈতিক ব্যবস্থার গুরুত্ব

মহানবী (সা.)-এর জীবনে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার গুরুত্ব স্পষ্ট। তিনি উত্তম উপায়ে লাভজনক সম্পদ উপার্জনের প্রশংসা করেছেন।

তিনি বলেন : ‘একজন সৎ ও পরহেজগার ব্যক্তির কাছে থাকা সম্পদ কতই না উত্তম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৯৯, আল আদাবুল মুফরাদ, পৃষ্ঠা-১১২)
রাসুল (সা.) জীবিকা নির্বাহের বিষয়টিকে মানবজীবনে ভালো-মন্দের নির্ধারক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, ‘দারির্দ্য মানুষকে কুফরির নিকটবর্তী করে দেয়।’ (আস সুনানুল কুবরা, হাদিস : ৬১৮৮)

অনুরূপ রাসুলুল্লাহ (সা.) জীবনে মিতব্যয়ী হওয়াকে মধ্যপন্থার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘মিতব্যয়িতা হলো অর্ধেক অর্থনীতি।’ (আস সুনানুল কুবরা, হাদিস : ৬১৪৮)

জীবিকা নির্বাহের চিন্তাধারা

রাসুল (সা.)-এর দেওয়া অর্থনৈতিক চিন্তাধারায় প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তার সামর্থ্য ও শক্তি অনুযায়ী জীবিকা নির্বাহ করা আবশ্যক। অবহেলা ও অলসতা মোটেই কাম্য নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) হালাল রিজিক উপার্জনকে ফরজ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ইবাদতের পর হালাল রিজিক অন্বেষণ করা (সবচেয়ে বড়) ফরজ।’ (আস সুনানুল কুবরা, হাদিস : ১১৬৯৫)

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম পবিত্র ও হালাল রিজিক হলো তোমাদের হাতের উপার্জন, যা তোমরা খাও।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৯০)

ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্ব

ইসলামে ব্যবসা-বাণিজ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর বিশ্বস্ত ও সৎ ব্যবসায়ীদের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) সুসংবাদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বস্ত, নীতিবান ও সৎ ব্যবসায়ীরা জান্নাতে নবী, সত্যবাদী ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১২০৯)

উপার্জন মানবকল্যাণের মূল উৎস

কোরআনে গরিব, অসহায় ও দারির্দ্যের সহায়তা করার নির্দেশ রয়েছে। আর এটাকেই মানবতা বা মানবকল্যাণ বলা হয়। মানবিক কাজের এই ফজিলত ও মর্যাদা তখনই পাওয়া যাবে, যখন সমাজের ব্যক্তিরা যথাসম্ভব হালাল রিজিক অর্জনের জন্য তাদের সব শক্তি প্রয়োগ করবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘অতঃপর নামাজ (পড়া) শেষ হলে জমিনে ছড়িয়ে পড়ো এবং (তারপর) আল্লাহর অনুগ্রহ (অর্থাৎ হালাল রিজিক) অন্বেষণ করো।’ (সুরা : জুমআ, আয়াত : ১০)

শ্রমিকদের বৈষম্যহীন অধিকার নিশ্চিত করা

বর্তমান বিশ্বের প্রধান সমস্যা হলো শ্রমিক। শ্রম অধিকারের ব্যাপারে সহস্র বৈষম্যের অভিযোগ রয়েছে। একশ্রেণি শ্রমিককে পূর্ণ স্বাধীনতা ও অধিকার দেয় আর অন্য শ্রেণি সর্বদা শ্রমিকদের শোষণ করে ও বৈষম্য গড়ে তোলে। তবে ইসলামে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকারের ব্যাপারে স্পষ্ট ও স্বতন্ত্র বিধান রয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন : ‘শ্রমিকদের ঘাম শুকানোর আগের তাদের প্রাপ্য দিয়ে দাও।’ (আল মুজামুস সগির, হাদিস : ৩৪)

ব্যক্তিস্বার্থের চেয়ে জনস্বার্থ প্রাধান্য দেওয়া

মহানবী (সা.)-এর জীবনী অধ্যয়ন করলে দেখা যায় যে তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে সাধারণ মানুষের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তবে তিনি কখনো ব্যক্তিগত অধিকার ও সম্পত্তিকে অগ্রাহ্য করেননি। পবিত্র কোরআন যেখানেই মানবতার সহায়তা করতে উৎসাহ দিয়েছে, সেখানেই ব্যক্তি ও সমাজের অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আর তাদের ধন-সম্পত্তিতে ভিক্ষুক ও অভাবগ্রস্তের (সব দরিদ্রের) অধিকার রয়েছে।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ১৯)

ইসলাম ব্যক্তির অধিকার ও স্বার্থকে স্বীকৃত করেছে, কিন্তু কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে ইসলামী রাষ্ট্রে এমন অর্থনৈতিক স্বার্থের অধিকারের মালিকত্ব দেওয়া হয় না, যা সাধারণ মানুষের স্বার্থের পরিপন্থী। প্রয়োজনের তাগিদে স্বয়ং নবীজি (সা.) ব্যক্তিস্বার্থের চেয়ে জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন। ইসলামী অর্থনীতির এই সোনালি নীতি নিম্নোক্ত হাদিস দ্বারা আরো সুস্পষ্ট হয়। আবইয়াদ বিন হাম্মাল (রা.) বর্ণনা করেন যে তিনি মহানবী (সা.)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে উপহার হিসেবে মারিবের লবণের হ্রদ চেয়েছিলেন। রাসুল (সা.) তাঁকে তা (লবণের হ্রদ) দিলেন। আবইয়াদ (রা.) ফিরে যাওয়ার সময় বৈঠকে উপস্থিত এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি কি জানেন তাঁকে কোন জমি দান করেছেন? আপনি তাঁকে ঝরনার অফুরন্ত পানি দিয়েছেন। লোকটি বলল, অতঃপর রাসুল (সা.) তাঁর কাছ থেকে ওই জমি ফিরিয়ে নেন। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩০৬৪)

উক্ত হাদিস থেকে এই নীতি স্পষ্ট হয় যে ইসলাম জনস্বার্থের ক্ষেত্রে কখনো আপস (ঈড়সঢ়ৎড়সরংব) করে না। অনেক জায়গায় রাসুলুল্লাহ (সা.) ব্যক্তিগত ও নির্দিষ্ট গোষ্ঠীদের চেয়ে জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছেন।

ধন-সম্পদের কেন্দ্রীকরণের নিন্দা ও নিষেধাজ্ঞা

রাসুল (সা.)-এর সিরাত অধ্যয়নে জানা যায় যে তিনি তাঁর কথা ও কাজের মাধ্যমে সব ধরনের ঘনীভূত সম্পদের নিন্দা করেছেন। নিজের আরাম-আয়েশ ও ভোগবিলাসের জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রের বঞ্চিত ও দরিদ্র মানুষের চাহিদা বিবেচনা না করে সম্পদ সঞ্চয় করাকে কেন্দ্রীভূত সম্পদ বলে। ইসলাম এ ধরনের অবৈধ সম্পদ জমা করাকে সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করেছে এবং কঠোর শাস্তিযোগ্য হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আর যারা সোনা-রুপা পুঞ্জীভূত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদের যন্ত্রণাময় শাস্তির সুসংবাদ দাও।’ (সুরা : আত তাওবা, আয়াত : ৩৪)

ধন-সম্পদের কেন্দ্রীকরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যাতে সম্পদ শুধু নির্দিষ্ট শ্রেণির অর্থনৈতিক উন্নতি না হয়ে বরং সমাজের সব শ্রেণির মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়।

বৃক্ষরোপণ ও কৃষিকাজের গুরুত্ব

অর্থনীতিতে কৃষিকাজ ও বৃক্ষরোপণের গুরুত্ব অপরিসীম। বৃক্ষরোপণ, ক্ষেত-খামার ও কৃষিকাজ ইসলামে মহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এগুলো কেবল মানুষেরই নয়, বরং প্রাণীদেরও উপকার করে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে মুসলমান বৃক্ষরোপণ করে বা ফসল চাষ করে, তারপর তা থেকে পাখি, মানুষ বা পশু খায়, এটা তার জন্য সদকা। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৩২০)

অনুর্বর জমি চাষাবাদ করা

ইসলাম অনুর্বর ভূমি (ইধৎৎবহ খধহফ) ও বৃহৎ মরুভূমি পুনরুজ্জীবন এবং চাষাবাদের উপযোগী করে তোলার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। ইসলাম অনুর্বর ও মৃত জমি চাষাবাদে মালিকানার অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে অনুর্বর ও মৃত জমি চাষাবাদ করবে, সে জমি তার মালিকানায় হবে। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৩০৭৩)

 

সূত্র: কালের কণ্ঠ

সর্বশেষ - ধর্ম