মনে রাখতে হবে জঙ্গিদের হুমকি শেষ হয়নি : আইজিপি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

‘আমাদের মনে রাখতে হবে জঙ্গিদের হুমকি শেষ হয়নি। যত দিন পর্যন্ত বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ বন্ধ না হবে তত দিন পর্যন্ত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সচেতন থাকতে হবে। আমরা যদি কেউ আত্মতুষ্টিতে ভুগি তাহলে সেটা অন্যায় হবে। ’

সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইজিপি এসব কথা বলেন।

২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পুলিশের বিশেষ এ ইউনিট গঠন করা হয়।

এ সময় জঙ্গিরা যেন আমাদের অবাক না, ‘সারপ্রাইজ’ করতে না পারে জানিয়ে আইজিপি বলেন, হোলি আর্টিজান হামলা-পরবর্তী সেই দিনগুলোতে কী একটা সময় গেছে। বিদেশি দূতাবাসগুলো সপ্তাহে সপ্তাহে ট্র্যাভেল অ্যাডভাইজরি ইস্যু করে। কোনো কোনো দূতাবাস তাদের কর্মীদের পরিবার সরিয়ে নিতে বলে। শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বিদেশে কার্গো পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে নির্বাচনের আগে জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিতে পারে জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) মোহা. শফিকুল ইসলাম এটিইউ এরপর এই অনুষ্ঠানে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যস্ততার সুযোগে উগ্রবাদীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তাই জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচন যখন আসে তখন রাজনৈতিক কর্মসূচি, সংঘাত, জ্বালাও-পোড়াও নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশের সবগুলো ইউনিট ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ সুযোগে জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে জঙ্গিরা হুট করে এমন কিছু করে পুলিশকে যাতে ‘বিস্মিত’ করতে না পারে সে জন্য জঙ্গি দমনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিটি ইউনিটকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন তিনি।

বাংলাদেশের কোনো অভ্যন্তরীণ কারণে জঙ্গিবাদের উদ্ভব হয়নি জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সব সময়ই আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহে প্রভাবিত হয়ে এ দেশে উগ্রবাদীরা বিভিন্ন সময় মাথাচাড়া দিয়েছে।

অনুষ্ঠানে এটিইউর প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি এস এম রুহুল আমিন নতুন এ সংস্থার প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরো সহায়তা দরকার বলে জানান।

আইজিপি আরো বলেন, আমাদের দেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়, তারা রক্তপাত পছন্দ করে না, নির্মম হত্যাযজ্ঞ পছন্দ করে না। আমাদের দেশে যে ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত, সেটি সুফি-সাধকদের দ্বারা প্রচারিত ও প্রসারিত। ফলে আমাদের দেশে ইসলামী যে মূল্যবোধ প্রভাবিত সেটি অত্যন্ত শান্তিবাদী। সে কারণে বারবার জঙ্গিবাদ প্রিয় মাতৃভূমিকে ক্ষত-বিক্ষত করার চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অ্যান্টি-টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এটি ছিল আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, জাতীয় নিরাপত্তা, সঙ্গতির অভিযাত্রা তার একটি বিশেষ মুহূর্তের বিশেষ প্রয়োজন। এ দেশ বারবার সন্ত্রাসবাদ কর্তৃক আক্রান্ত হয়েছে। বারবারই শান্তিপ্রিয় মানুষ তাদের প্রতিহত করেছে। আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করেছি, এই সন্ত্রাসবাদ বাইরে থেকে এসে আছড়ে পড়েছে। আমাদের দেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়, তারা রক্তপাত পছন্দ করে না, নির্মম হত্যাযজ্ঞ পছন্দ করে না।

পুলিশ প্রধান বলেন, ষাটের দশকের শেষ দিকে দেখেছি কমিউনিস্ট আন্দোলন। সেই সময়ে পশ্চিম বাংলায় নকশালবাদীদের মুভমেন্টের কারণে মার্ক্সবাদী কমিউনিস্টরা অস্ত্র হাতে তুলে নেয় এবং স্বাধীনতার পরে এই মার্ক্সবাদী আন্দোলন বিলুপ্ত হয়। তালেবানরা যখন যুদ্ধ করছিল, বাংলাদেশ থেকে অনেকে সেখানে যায়। তারা ফিরে এসে হুজি গঠন করে। কিছু নিরীহ মানুষকে হত্যা করার চেষ্টা করে। সেটাও প্রতিহত করা হয়। এরপর দেখি জেএমবি, বাংলা ভাই, আব্দুর রহমানদের আবির্ভাব ঘটে। তার পেছনে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের দেশে এই সময়ে যে জঙ্গিবাদের উত্থানটা হয় তার পেছনে অনাকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। এ ধরনের ঘটনা এর আগে আমরা দেখিনি। এটিও সাধারণ মানুষ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থামাতে সক্ষম হয়। ’

আইজিপি বলেন, ২০১৬ সালে আল-কায়েদা ও আইএসে উদ্বুদ্ধ হয়ে কিছু দেশীয় সন্ত্রাসী আবার বাংলাদেশকে ক্ষতবিক্ষত করার চেষ্টা করে। সেটিও সাধারণ মানুষ ও সরকারের নেতৃত্বে পরাস্ত করা হয়। এই যে জঙ্গিবাদের সঙ্গে লড়াই, এটি সহজ ছিল না। লড়াইয়ের পেছনে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স পলিসি চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে।

বেনজীর আহমেদ বলেন, আমরা জানি যে ইসলাম শান্তির ধর্ম। যখন সাধারণ মানুষকে খুন করা হয় তখন আমাদের বুঝতে হবে, কারা তাদের মোটিভেশন দিয়ে এই কাজগুলো করাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ভয়াবহ অবস্থা হয়েছে। আইএস ও আল-কায়েদার বিস্তারে সাধারণ মানুষ ভুক্তভোগী। এই সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো নির্দিষ্ট একটি ধর্মের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। যারা সদস্য হিসেবে মুসলিম নিরীহ মানুষদের হত্যা করছে, তারা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের হয়ে কাজ করছে। এর কারণে আমাদের শান্তিপ্রিয় ধর্মকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হেয় করা হয়েছে। এই সন্ত্রাস দমনে সরকার এটিইউ প্রতিষ্ঠা করেছে। যার কারণে বর্তমানে দেশে সাতটি থেকে আটিটি ইউনিট লড়াই করছে।

তিনি আরো বলেন, কয়েক বছর আগে সপ্তাহে সপ্তাহে দেশে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতো। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো বিমান বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এখানকার দূতাবাসগুলোকে নন-ফ্যামিলি মিশন ঘোষণা করেছিল। আমরা সরকারের পলিসি ও মানুষের সহযোগিতায় বিপজ্জনক পরিবেশ থেকে জঙ্গিবাদকে আবারও পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছি।

 

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ