সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের মধ্যস্থতা থেকে কাতার সরে দাঁড়ানোর পর গাজা যুদ্ধ ও জিম্মি মুক্তির সম্ভাবনা প্রায় স্থগিত হয়ে গেছে। গত ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক আক্রমণে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে কাতার এই অস্থায়ী আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিল। কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটির পাশাপাশি হামাসের রাজনৈতিক কার্যালয় থাকায় এই আলোচনায় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছিল। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
কাতার জানিয়েছে, ইসরায়েল ও হামাস যদি তাদের দ্বন্দ্ব শেষ করতে আগ্রহ ও আন্তরিকতা না দেখায়, তাহলে মধ্যস্থতা স্থগিত থাকবে।
গত বছর এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির সময় কিছু জিম্মি বিনিময় করা হলেও পরবর্তী আলোচনা স্থগিত হয়ে আছে। এই মাসে হামাস মিসর ও কাতারের প্রস্তাবিত স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করে, কারণ এতে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ছিল না। ইসরায়েল বলেছে, হামাসকে নির্মূল করা এবং জিম্মিদের মুক্ত না করে যুদ্ধ বন্ধে কোনও পরিকল্পনা নেই।
গাজার সীমান্তবর্তী মিসর ও ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এই আলোচনায় কাতারের সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।
কিংস কলেজ লন্ডনের সিনিয়র অধ্যাপক আন্দ্রেয়াস ক্রিগ বলেন, গাজার আলোচনা চালিয়ে যেতে মধ্যস্থতা দরকার এবং কাতার ছাড়া অন্য কাউকে সেই ভূমিকায় কল্পনা করা যাচ্ছে না।
হামাসের নেতৃত্বগত সংকট নিয়ে ক্রিগের বক্তব্য, হামাসের নেতাদের বেশ কয়েকজনের মৃত্যুতে তাদের সংগঠনের অভ্যন্তরে একটি শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, যা আলোচনাকে প্রভাবিত করছে।
উপসাগরীয় বিশ্লেষক আনা জ্যাকবস উল্লেখ করেন, গ্রীষ্মে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় হামাস একমত হয়েছিল। তবে সেই প্রস্তাব কোনও চুক্তি কার্যকর করতে পারেনি।
শনিবার কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি হামাসকে কাতার থেকে বহিষ্কারের গুজব উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, কাতারে হামাস অফিসের মূল লক্ষ্য একটি যোগাযোগের চ্যানেল হিসেবে কাজ করা এবং এটি ইতোপূর্বে যুদ্ধবিরতি অর্জনে সহায়তা করেছে।
হামাসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, কাতার থেকে সরে যাওয়ার কোনও ইঙ্গিত তারা পায়নি। তবে গত এপ্রিল মাসেও কাতার একটি সতর্কতা জারি করেছিল। এরপর হামাসের কিছু সদস্য তুরস্কে চলে যায়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের অনুরোধে তারা পুনরায় ফিরে আসে।
আন্দ্রেয়াস ক্রিগের মতে, হামাস এখন একটি অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে এবং তাদের বহিষ্কারের দাবি উঠছে। ইরান তাদের নতুন গন্তব্য হতে পারে। তবে তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে উত্তেজিত করতে চায় না।
আনা জ্যাকবস মনে করেন, ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের আগে পর্যন্ত হামাসের কর্মকর্তারা দোহায় থাকবেন না।
কাতার এপ্রিলেই তাদের মধ্যস্থতার ভূমিকা পুনঃমূল্যায়নের ঘোষণা দিয়েছিল। তবে তারা আলোচনায় ফিরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
আন্দ্রেয়াস ক্রিগ বলেন, কাতার মূলত বিশ্বকে জানাতে চাচ্ছে যে তারা মধ্যস্থতা চালাতে প্রস্তুত। তবে হামাসের ওপর তারা চাপ প্রয়োগ করতেও প্রস্তুত রয়েছে।
আনা জ্যাকবস আরও জানান, হামাসের সঙ্গে কাতারের সম্পর্ক আমেরিকান নীতিনির্ধারকদের বিশেষ করে কংগ্রেসের রিপাবলিকান সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কাতার তাদের অবস্থান শক্ত করার এবং ভবিষ্যতের ঝুঁকি থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য আগাম এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন