মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় সুনসান নীরবতা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

রাজধানীর ফকিরাপুলের ইয়াংমেনস ক্লাবের অবৈধ ক্যাসিনো মালিক যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার এবং বিভিন্ন ক্যাসিনোয় র্যা বের অভিযান চালানোর পর মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। ক্লাবগুলোতে যারা নিয়মিত আসতেন, তাদের যাতায়াত চোখে পড়েনি। গা ঢাকা দিয়েছেন জুয়াড়িরা। এক ধরনের থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে অপরাধের এই আতুড়ঘরগুলোতে।

বৃহস্পতিবার দুপুর ও রাতে সরেজমিন মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় দেখা যায়, সেখানে আগের মতো কর্মব্যস্ততা নেই। পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সেখানে কিছু উৎসুক মানুষের ভিড়। তাদের অধিকাংশই বিভিন্ন সময় ক্যাসিনোতে জুয়া খেলে নিঃস্ব হয়েছেন।

এদিকে ক্লাবগুলোয় দেখা যায়, সেখানে দায়িত্বশীল কেউ নেই। স্টাফরা কাজ করলেও তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইয়াংমেনস ক্লাব ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সামনে র্যা বের কয়েকটি গাড়ি দেখা গেছে। দুটি ক্লাবেই অবস্থান করছিলেন র্যা ব সদস্যরা।

ইয়াংমেনস ক্লাবে গিয়ে জানা যায়, র্যা ব সদস্যরা ক্যাসিনো সিলগালার কাজ করছেন। ওয়ান্ডারার্স ক্লাবেও র্যা ব সদস্যরা একই কাজ করছেন। ওই এলাকার কয়েকটি ক্লাবের কার্যালয়ে তালা লাগানো ছিল।

ক্লাবপাড়ায় সরেজমিন দেখা যায়, মতিঝিল থানা থেকে ইয়াংমেনস ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাব ৩০০ গজের মধ্যে। অথচ বছরের পর বছর এসব ক্লাবে ক্যাসিনো ব্যবসা চলেছে। সরেজমিন এর সত্যতা মিলেছে।

দুপুরে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সামনে দাঁড়িয়ে এক তরুণ বলেন, আমাদের চোখের সামনে ধীরে ধীরে ক্লাবপাড়ার ক্যাসিনোগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে গেল। এগুলো আগে এমন ছিল না। শুরুতে কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা না হলে কেউ ক্যাসিনোতে খেলতে পারত না।

কিন্তু ধীরে ধীরে ক্যাসিনোর সংখ্যা বাড়তে থাকায় বেশি মানুষকে সম্পৃক্ত করতে সর্বনিম্ন রেট কমানো হয়। কমতে কমতে এখন ১০০-২০০ টাকায়ও ক্যাসিনো খেলার ঘুঁটি পাওয়া যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, এমন জায়গায় মাত্র ১০০-২০০ টাকায় খেলার সুযোগ থাকায় অনেকেই এদিকে ঝুঁকেছে। বিশেষ করে নিচু আয়ের মানুষও এদিকে ঝুঁকেছে। এতে ক্ষতিটা তাদেরই বেশি হয়েছে। এভাবেই ক্লাবপাড়ার হোটেলের বয়-বেয়ারা পর্যন্ত ক্যাসিনোতে ঢুকে পড়েছে।

তাদের পুঁজি কম, তাই অল্প কয়েক দিনেই সর্বস্ব হারিয়ে ফেলে। হাতের ঘড়ি, স্ত্রীর কানের দুল কিংবা নাকের ফুল বেচাকেনাও হয় ক্লাবপাড়ার ক্যাসিনোগুলোয়। টাকা ফুরিয়ে গেলে এসব জিনিস বিক্রি করে আবার কোমর বেঁধে নেমে পড়েন অনেকেই।

জুয়া খেলতে খেলতে ঘরবাড়ি-সংসারের কথাও ভুলে যান এরা। এখানকার ক্যাসিনোগুলোয় দেখা যায় প্রায়ই কিছু নারী ছবি নিয়ে এসে তাদের স্বামীর খোঁজ করেন। অনেকে অভিযোগ করেন, দু-তিন মাস তার স্বামী বাসায় যায় না। শুনেছেন এখানে জুয়া খেলে, এখানে খায়, এখানেই ঘুমায়।

বুধবার রাতে দীর্ঘ অভিযান শেষে গুলশানের বাসা থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে র্যা ব। এ সময় অস্ত্র, গুলি, মাদকসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়।

বুধবার খালেদকে গ্রেফতারের আগে ফকিরাপুলের ইয়াংমেনস ক্লাবে নিষিদ্ধ ক্যাসিনোতেও অভিযান চালায় র্যা ব। এখান থেকে দুই নারীসহ ১৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। ক্যাসিনোতে মদ আর জুয়ার বিপুল সরঞ্জামের পাশাপাশি প্রায় ২৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

ক্লাবটির সভাপতি খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। অনেক দিন ধরে এখানে জুয়াসহ নানা অপকর্ম চলছিল। সাম্প্রতিককালে অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ার পর বুধবার অভিযান পরিচালিত হয়। ইয়াংমেনস ক্লাবের পর ওই রাতেই ঢাকায় আরও তিনটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র্যা ব।

র্যা বের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ইয়াংমেনস ক্লাব থেকে মাদক ও জুয়ার সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে। ক্লাবের কাউন্টার থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা জব্দ করা হয়।

এদিন মতিঝিলের ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব এবং বনানী এলাকার একটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালানো হয়। ওয়ান্ডারার্স ক্লাব থেকে মাদক, জালটাকা, বিপুল পরিমাণ টাকা ও ক্যাসিনো সামগ্রী জব্দ করা হয়েছে।

এর পর ক্যাসিনোটি সিলগালা করে দেয়া হয়। বনানীর আহমেদ টাওয়ারে অবস্থিত গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ নামে ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের নেতৃত্বে আছেন মমিনুল হক সাঈদ ও আবু কাউসার মোল্লা নামে দুই ব্যক্তি।

দুজনই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এদিকে বুধবার রাতেই গুলিস্তানে পীর ইয়েমেনি মার্কেটসংলগ্ন একটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র্যা ব। স্থানীয় কয়েকজন জানান, এ ক্যাসিনোর নেতৃত্বে আছেন ইসমাইল হোসেন সম্রাট।