সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :
পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহ ভরা কোলে তব, মাগো বল কবে শীতল হব, কত দূর আর কত দূর”- ঠিক এমনই আকুতি ঈদে ঘরমুখো মানুষের মনে। যুদ্ধ করে বাড়ি যাওয়ার টিকিট কিনে একগাল হাসি দিয়ে সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরার সামনে পোজ দিলেও, এখন সেই একই মুখমণ্ডলে দেখা যাচ্ছে বিরক্তি আর ভোগান্তির আঁকাবাঁকা রেখা। দীর্ঘ যানজট আর গরমে বাসের মধ্যে বসে মনে মনে ভাবছেন মা-বাবা অথবা প্রিয়জনের কাছে কখন পৌঁছাবেন।
কষ্ট ও বিড়ম্বনায় নাজেহাল হলেও বাড়ির ত্রিসীমানায় পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যেন সব কষ্ট দূর হয়ে যায়। তাই হাজারো দুর্ভোগ পেছনে ফেলে রাজধানী থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নগরবাসী ছুটে যাচ্ছে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে।
শুক্রবার রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় ঘরমুখো মানুষের স্রোত। জীবনের ঝুঁকি, অতিরিক্ত ভাড়া, টিকিট ও পরিবহন সংকট, শিডিউল বিপর্যয়, যানজট, দুর্ঘটনাসহ পদে পদে নানা সমস্যা নিয়ে ছুটছে মানুষ। কোনো কষ্টই যেন মানুষের বাঁধভাঙা জোয়ার থামাতে পারছে না। যাত্রাপথের সব বিড়ম্বনা উপেক্ষা করে সবাই তাই ছুটছে স্বজনের কাছে।
এবার কোরবানির ছুটি ছয় দিন হওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস ছিল। কাল অনেকেই গেছেন ঢাকা ছেড়ে। তবে আজও পরিবার পরিজনদের নিয়ে রাজধানী ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
গাবতলী থেকে উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে বাস ছাড়ে। সকাল ৮ থেকেই ভিড় ছিল এখানে।
হানিফ, সাকুরা, নাবিল, শ্যামলী, রয়েল ও ডিপজল পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, একটি বাসেও আসন খালি নেই।
হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার শামিম ইসলাম জানান, তাদের বাসের টিকিট অনেক আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। একটি আসনও খালি ছিল না।
বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে আসা সজল ইসলাম বলেন, ‘পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের আগেই গ্রামে পাঠিয়েছি। আজ আমি বাড়ি যাচ্ছি। কিন্তু এখানে এসে দেখি বাসের শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে। সকাল সাড়ে ৭টায় বাস ছাড়ার কথা কিন্তু এখন বাসে ৯টা বাজে কিন্তু বাসের দেখা পাচ্ছি না।’
বাগেরহাটগামী মোহাম্মদ সাব্বির হোসেন জানান, সকাল ৮টার সময় হানিফ পরিবহনের একটি বাসের টিকিট কেটেছেন প্রায় সপ্তাহখানেক আগে। তাই খুব সকাল সকাল কাউন্টারে এসে হাজির হয়েছেন।
ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখন বাজে সকাল সাড়ে পৌনে ৯টা। কিন্তু বাস ছাড়াতো দূরের কথা, বাস এখনো টার্মিনালে এসেই পৌঁছায়নি। কখন বাস আসবে আর কখন বাড়িতে গিয়ে পৌঁছাতে পারব, বুঝতে পারছি না।’
কথা হয় হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজারের সঙ্গে। তিনি বলেন, যানজটের কারণে বাস আসতে দেরি করছে। তবে বাস আসার সঙ্গে সঙ্গেই আবার ছেড়ে যাবে। এ ছাড়া কোরবানির হাটের কারণে যানজট থাকায় বাস সময় মতো ছাড়া যাচ্ছে না।
গাবতলীতে যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু তাদের কাঙ্ক্ষিত সেই বাসটি আসছে না। তাদের মনের ভেতরে শুধু একটাই প্রশ্ন ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে, কখন বাস আসবে আর কখন নিজ গন্তব্যে গিয়ে পৌঁছাবে তারা।
গাবতলী বাস কাউন্টারে বাসের অপেক্ষায় থাকা মাহামুদ খান নামের একজনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি খুলনা যাওয়ার জন্য গত ১ সেপ্টেম্বর ঈগল পরিবহনের কাউন্টারে এসে টিকিট সংগ্রহ করি। টিকিটটি তখন হাতে পেয়ে খুব আনন্দ পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, এবারের ঈদে বাড়িতে যেতে হয়তো খুব বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। কিন্তু এখন দেখি আমার সে ভাবনা ছিল ভুল।’
তিনি বলেন, ‘আজ সকাল ৭টায় গাড়ি ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন বাজে সোয়া ৯টা। কিন্তু এখন পর্যন্ত গাড়ির কোনো হদিস পাচ্ছি না। ভেবে পাচ্ছি না কী করব।’
গাড়ি কখন আসবে এ ব্যাপারে কাউন্টারের কাউকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাউন্টারে জিজ্ঞাসা করলে শুধু একটা কথাই বলে, যানজটের কারণে একটু দেরি হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়ি এসে পড়বে।
যাত্রীদের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঈগল কাউন্টারের ম্যানেজার মোহাম্মদ হান্নান জানান, ঈদের জন্য আরিচা ফেরিঘাটে অতিমাত্রায় যানজট সৃষ্টি হওয়ার কারণে বাস আসতে পারছে না।
তিনি বলেন, সাধারণত ঈদুল ফিতরের চেয়ে ঈদুল আজহার সময় যানজট বেশি হয়। কারণ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কোরবানির গরু আসে রাজধানীতে। তাই এই সময়টা ফেরিতে বাস পারাপারে খুব সমস্যায় পড়তে হয়। তবে আসা করা যাচ্ছে, এই সমস্যা আজকের পর আর থাকবে না।
সূত্র:রাইজিংবিডি