ভাই চাচাকে নিয়ে ই-অরেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া ১৮ কোটি টাকা সরিয়েছেন

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া মেহজাবীন, তার ভাই বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানা এবং চাচা মোহাম্মদ জায়েদুল ফিরোজ ১৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা সরিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের হিসাব থেকে তারা এসব টাকা সরিয়েছেন বলে উচ্চ আদালতে প্রতিবেদন দিয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

বুধবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চে বিএফআইইউ প্রতিবেদনটি দাখিল করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাথমিক পর্যায়ে ই-অরেঞ্জ.শপ ও অরেঞ্জ বাংলাদেশের মালিকানায় সোনিয়া থাকলেও পরে তা পরিবর্তন করে পুলিশ কর্মকর্তা (বরখাস্ত) শেখ সোহেল রানার স্ত্রী নাজনীন নাহার বীথির নামে হস্তান্তর করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে অল্প সময়ের ব্যবধানে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১৩টি হিসাব খুলে লেনদেন করা হয়। ১৩টি হিসাবের মাধ্যমে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ১১১ কোটি টাকা জমা এবং ১ হাজার ১০৯ কোটি টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ২ হাজার ২২১ কোটি টাকার লেনদেন করা হয়েছে। হিসাবগুলোয় ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুলাই অধিকাংশ লেনদেন হয়েছে। সোনিয়া ও তার স্বামী মাসুকুর রহমানের নামে ২৪টি হিসাব পরিচালনা করা হয়। এ হিসাবগুলোর মাধ্যমে সময়ে সময়ে সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তি প্রায় ১২০ কোটি টাকা লেনদেন করেছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের তিনটি ব্যাংক হিসাবে নিয়মিতভাবে ফান্ড ট্রান্সফার, আরটিজিএসের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়েছে। লেনদেন গেটওয়ে সফটওয়্যার শপ লিমিটেড (এসএসএল কমার্স) ৩ লাখ ৪ হাজার ৫২৫টি অর্ডার আইডির বিপরীতে ৯০০ কোটি টাকা ই-অরেঞ্জ শপকে পরিশোধ করা হয়েছে এবং ৬৬১টি অর্ডার আইডির ৬৫ দশমিক ৯৯ লাখ টাকা গ্রাহককে রিফান্ড করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ব্যাংক হিসাবে জমা অর্থ থেকে বিভিন্ন মার্চেন্টকে সময়ে সময়ে ৪৯৭ দশমিক ৭৯ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে অল জোনকে ১৮৮ দশমিক ৬৪ কোটি, বাজাজ কালেকশনকে ১২৬ দশমিক ৩৭ কোটি, বাবু টেলিকমকে ৮ দশমিক ৭৩ কোটি, টিভিএস অটো বাংলাদেশ লিমিটেডকে ৯ দশমিক ৫৩ কোটি, এনবিএস ডিস্ট্রিবিউশনকে ১৮ দশমিক ১৭ কোটি, বাইক ভ্যালি ঢাকাকে ২ দশমিক ৩৪ কোটি, ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডকে ১৮ দশমিক ৯ কোটি, এসিআই লজিস্টিকস সার্ভিসেস লিমিটেডকে ৩০ দশমিক ৪১ কোটি, বাটারফ্লাই মার্কেটিং লিমিটেডকে ৫ দশমিক ৩৩ কোটি, গিয়ার এক্স বাংলাদেশ লিমিটেডকে ১ দশমিক ৮৩ কোটি, নিলয় মোটরস লিমিটেডকে ১ দশমিক ৬৯ কোটি, আজিয়াটা ডিজিটাল সলিউশন্স লিমিটেডকে শূন্য দশমিক ৭২ কোটি এবং একেএস গ্লোবাল ট্রেডিং লিমিটেডকে ১ দশমিক ৫৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

সিটি ব্যাংক লিমিটেডের ই-অরেঞ্জ শপের হিসাব থেকে সোনিয়া তার ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে অর্থ স্থানান্তর ও নগদে ৩ দশমিক ১৬ কোটি টাকা উত্তোলন করেছেন এবং ফান্ড ট্রান্সফার করে আইপিডিসি ফিন্যান্স লিমিটেডের হিসাবে ২ দশমিক ৫০ কোটি টাকা স্থানান্তর করেছেন। মাসুকুর রহমান অরেঞ্জ বাংলাদেশের হিসাব থেকে দুই দফায় ৪০ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। এছাড়া সোনিয়া জমি ও অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয়ের উদ্দেশ্যে আফরোজা খাতুন, ডা. জাহিদ হোসেন ও সাবনাজ মেহজাবিন এবং সাউথ ব্রিজ হাউজিং সোসাইটিকে ৯ দশমিক ৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করেছেন।

প্রতিবেদনের সার্বিক পর্যালোচনা অংশে বলা হয়েছে, ই-অরেঞ্জ.শপ, অরেঞ্জ বাংলাদেশ ও রেড অরেঞ্জ ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক কম মূল্যে গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহের বিভিন্ন লোভনীয় অফারে প্রলুব্ধ করে বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের কাছ থেকে অর্ডারের মূল্য বাবদ প্রাপ্ত অর্থ ব্যাংক হিসাবে জমা করেছেন।

পরে জমা করা অর্থ থেকে বিভিন্ন মার্চেন্টকে পরিশোধ করার পাশাপাশি সোনিয়া, তার স্বামী মাসুকুর রহমান, ভাই শেখ সোহেল রানা ও চাচা মোহাম্মদ জায়েদুল ফিরোজ নগদ উত্তোলন ও ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করেছেন।

গ্রাহকদের অগ্রিম মূল্য পরিশোধিত অর্ডারের কাক্সিক্ষত পণ্য সরবরাহ না করে সন্দেহভাজনরা উল্লিখিত অর্থ তাদের ব্যক্তিগত হিসাবে স্থানান্তর, নগদ উত্তোলন ও ব্যক্তিগত স্থায়ী সম্পদ ক্রয় করেছেন, যা প্রতারণার শামিল।

জি/আর