ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ১৭ লাখ শিক্ষার্থী

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিয়েই উদ্বেগ-দুশ্চিন্তায় ছিল শিক্ষার্থীরা। বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে সেই ফল প্রকাশের পর এবার একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নিয়ে নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছে প্রায় ১৭ লাখ শিক্ষার্থী। কবে নাগাদ এই ভর্তিপ্রক্রিয়া শুরু হবে, তা বলতে পারছে না আন্ত শিক্ষা বোর্ডও। তবে রাজধানীতে চার্চ পরিচালিত চার কলেজকে আগামী ২০ জুনের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অনুমতি দিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।

প্রতিবছর এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগেই কলেজে ভর্তিপ্রক্রিয়া নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। কলেজগুলোও শিক্ষার্থী টানতে নানামুখী প্রচার চালায়। আর শিক্ষার্থীরাও পছন্দের কলেজ বেছে নিতে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়। এবার সেই আয়োজনের ছিটাফোঁটাও নেই। আন্ত শিক্ষা বোর্ড আগামী ৬ জুন থেকে ভর্তিপ্রক্রিয়া শুরুর পরিকল্পনা নিয়ে রাখলেও করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। এখন তারা তাকিয়ে আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দিকে।

জানা যায়, দেশের সব কলেজে একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে জিপিএর ভিত্তিতেই শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ব্যতিক্রম শুধু রাজধানীর চার্চ (খ্রিস্টান মিশনারি) পরিচালিত চার প্রতিষ্ঠান—নটর ডেম কলেজ, হলিক্রস কলেজ, সেন্ট জোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সেন্ট গ্রেগরীজ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এসব কলেজে পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি করা হতো। এবারও এসব কলেজ পৃথকভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। তবে ভর্তি পরীক্ষা নয়, তারাও এবার জিপিএর ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এক নির্দেশনায় বলা হয়, ঢাকা মহানগরীতে অবস্থিত চার্চ পরিচালিত চার কলেজকে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ভর্তি করার অনুমতি দেওয়া হলো। তবে শর্ত থাকে যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী ২০ জুনের মধ্যে ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বোর্ডকে অবহিত করতে হবে।

সূত্র জানায়, অনলাইনে কলেজে ভর্তির আবেদন শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা কম্পিউটারের দোকানে যাবে, কলেজে যাবে। কারণ সব শিক্ষার্থীর পক্ষে বাসায় বসে অনলাইনে আবেদন করা সম্ভব নয়। আবার নানা ভুলভ্রান্তির কারণে বোর্ডেও আসতে হয়। ফলে এই মুহূর্তে ভর্তিপ্রক্রিয়া শুরু হলে সব ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। এ জন্যই ভর্তিপ্রক্রিয়া থেকে সরে এসেছে বোর্ডগুলো। তবে ১৫ জুনের পর সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে মিল রেখে এবং করোনা পরিস্থিতি দেখে একাদশে ভর্তিপ্রক্রিয়া শুরুর ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ  বলেন, ‘আমাদের প্রথম চিন্তা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা। অনলাইনে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষার্থীদের নানা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। তাই এখনই ভর্তি শুরুর দিনক্ষণ বলা যাচ্ছে না।’

জানা যায়, এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। তারা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করতে পারবে। এর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন। জিপিএ ৫ পেয়েও অনেকে প্রথম সারির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাবে না। অনেকে একাধিকবার আবেদন করেও পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবে না।

শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, ভালো কলেজগুলোর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৭৫, রংপুরে ৩২, বরিশালে ১৪, রাজশাহীতে সাত, চট্টগ্রামে ১৯, খুলনায় ১৩ ও সিলেট বিভাগে রয়েছে ২৩টি। এসব কলেজে আসনসংখ্যা লক্ষাধিক। আর রাজধানীতে ভালো মানের কলেজ রয়েছে ৩০ থেকে ৩৫টি। এসব কলেজে আসনসংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ হাজার। ফলে জিপিএ ৫ পেয়েও সব শিক্ষার্থীর পক্ষে মানসম্মত কলেজে ভর্তির সুযোগ নেই। তবে দেশে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি উপযোগী কলেজের সংখ্যা চার হাজার ছয় শর বেশি। আর এতে আসনসংখ্যা প্রায় ২১ লাখ। ফলে আসনের কোনো সংকট নেই। যেহেতু সব শিক্ষার্থী একাদশে ভর্তি হয় না, তাই এবারও সাত লাখের কাছাকাছি আসন খালি থাকবে বলে ধারণা করা যায়।

কাছের কলেজে ভর্তির পরামর্শ অধ্যক্ষদের : কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে দূর-দূরান্তের নামি কলেজের চেয়ে বাড়ির কাছের কলেজেই ভর্তির পরামর্শ অধ্যক্ষদের। তথ্য-প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকা কলেজকেও অগ্রাধিকার দিতে বলেছেন শিক্ষকরা।

রাজধানীর সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লা  বলেন, ‘অন্য যেকোনো বছরের চেয়ে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। তাই শিক্ষার্থীদের কলেজ পছন্দেও ভিন্নতা আনতে হবে। করোনাভাইরাসের কারণে কবে নাগাদ স্বাভাবিক শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হবে, তা বলা যাচ্ছে না। তথ্য-প্রযুক্তিতে এগিয়ে এবং অনলাইনে ক্লাস নিতে সক্ষম—এমন কলেজকেই পছন্দের অগ্রভাগে রাখা উচিত শিক্ষার্থীদের।’

বাড্ডার ন্যাশনাল কলেজের অধ্যক্ষ শহীদুল আলম বলেন, ‘উচ্চ মাধ্যমিকের দুই বছর শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভালো কলেজ বাড়ি থেকে অনেক দূরে হলে সেখানে যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয়। প্রতিদিন যদি যাতায়াতের পেছনে চার-পাঁচ ঘণ্টা ব্যয় হয়, তাহলে পড়ালেখার সময় কোথায়? এ জন্য মোটামুটি কাছের কলেজেই ভর্তি হওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ