সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এই সরকার একটি নতজানু ও ব্যর্থ জাতি তৈরির জন্য পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে। তারা আমাদের শিকড় ধরে টান দিয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করতে শিক্ষাব্যবস্থায় হাত দিয়েছে। কেউ কোনো প্রতিবাদ করছে না। আমাদের আলাদা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এবং পরিচয় আছে। কেন সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে ভয়? আজ শিশুদের ভ্রান্তধারণা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের পরিচয় ভুলিয়ে দিতে চায়। এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে জেগে উঠতে হবে। এটা জাতির অস্তিত্বের লড়াই। প্রয়োজনে রাস্তায় নামতে হবে। অবিলম্বে এসব পাঠ্যপুস্তক বাতিল করতে হবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে এক আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির উদ্যোগে এবং ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) সহযোগিতায় ‘অপরিণামদর্শী কারিকুলাম ও মানহীন পাঠ্যপুস্তক: দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধ্বংসের নীলনকশা’ শীর্ষক এই সভা হয়। আলোচনায় নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে তৈরি করা পাঠ্যপুস্তকের ‘ভুল-অসংগতির’ ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. সিরাজুল ইসলাম ও অধ্যাপক শাহ শামীম আহমেদ।
এর মাধ্যমে তারা নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবইয়ের বিভিন্ন ‘ভুল-অসংগতি’ তুলে ধরেন। তাদের মূল বক্তব্য ছিল, নতুন শিক্ষাক্রম জাতীয় শিক্ষানীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও অবাস্তবায়নযোগ্য। এটি রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে নিষ্ক্রিয় করার কৌশল। যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই তাড়াহুড়ো করে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। তারা অভিযোগ করেন, নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে সরকার শিক্ষাকে ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে। এ সময় কয়েকজন বক্তা অবিলম্বে ভুলে ভরা পাঠ্যবই বাতিল এবং যারা দায়ী, তাদের বিচারের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত এবং শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির পদত্যাগ দাবি করেন।
ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক তাজমেরী এসএ ইসলাম, অধ্যাপক নূরুল আমিন বেপারী, অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, অধ্যাপক আব্দুল করিম, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, গোলাম হাফিজ কেনেডি, অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, সাংবাদিক কাদের গণি চৌধুরী, শিক্ষক নেতা মো. জাকির হোসেন, অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান, অধ্যাপক আবুল হাসনাত মোহাম্মদ শামীম, অধ্যাপক মাসুদুল হাসান, অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক শরিফুল করিম, অধ্যাপক শের মাহমুদ, অধ্যাপক ড. তৌফিকুল ইসলাম মিথিল, অধ্যাপক তোজাম্মেল হোসেন, অধ্যাপক আনিসুর রহমান, ড. ফজলুল হক সৈকত প্রমুখ।
পাঠ্যপুস্তক নিয়ে ইস্যু না বানানোর বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির বক্তব্যের জবাব দেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আপনি আমার শিকড় ধরে টান দেবেন, আমি ইস্যু বানাব না? কথা বলব না? আপনি আমার অবয়ব বদলে দিতে চাইবেন, স্বাতন্ত্র্যকে বদলে দিতে চাইবেন, আমি ইস্যু বানাব না? অবশ্যই এটি সবচেয়ে বড় ইস্যু। এটা জাতির অস্তিত্বের ইস্যু।’
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার যা খুশি তা-ই করে যাচ্ছে, যেমন খুশি তেমন করে যাচ্ছে। দিনকে রাত বলছে, রাতকে দিন বলছে, মুরগির ডিমকে অশ্বডিম্বও বলছে।
তিনি বলেন, সরকার আমাদের খোলনলচে পালটে দিতে চায়। যার প্রমাণ এই পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস বিকৃতি ও ভুল তথ্য সংযোজন। আজ যেসব সন্তান প্রাথমিক শিক্ষা নেয়, সেটা তার ভেতর সারা জীবন থেকে যায়। এই শিক্ষাকে পুঁজি করেই তারা সামনে এগিয়ে যায়। প্রাথমিক বিদ্যালয় হলো শিক্ষার মূল। দুর্ভাগ্যবশত এখনো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। বারবার পরীক্ষা ও শিক্ষানীতি হচ্ছে। এখনো সেটা চলছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজ পাঠ্যপুস্তকে ভুলে ভরা ইতিহাস ও তথ্য সংযোজন করা হয়েছে। আর সেগুলোই নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের শেখানো হচ্ছে। যারা কারিকুলাম তৈরি করেন, তাদের কেউ ভাবে না যে ছেলেমেয়েরা কী শিখছে? জাতির মূল জায়গা হলো শিক্ষা। আর সেখানেই হাত দিয়েছে সরকার।
পাঁচ উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ৫ শতাংশের বেশি ছিল না : বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথ সভা শেষে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। এতে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বুধবার উপনির্বাচনগুলোয় ভোটারের সংখ্যা ইসির হিসাবমতো কোথাও ১৫ থেকে ২৫ শতাংশের বেশি হয়নি। আর বিএনপির হিসাবমতে, এটা ৫ শতাংশের বেশি হয়নি।
মির্জা ফখরুল বলেন, যেখানে দুর্নীতি লাগামহীন, যেখানে চুরি হচ্ছে প্রধান লক্ষ্য। সেখানে বিশ্ব মন্দার কথা বলে কোনো লাভ নেই। দুর্নীতির কারণে প্রত্যেক দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি সংসদে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘বিএনপি মহাসচিব ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সিনজো আবেকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন’-এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, শুধু জাপানকে কেন? আমরা তো চিঠি দিয়েছি বহুদেশকে। এটা সত্য। আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে মানুষের ওপর অন্যায় অত্যাচার করে, দুর্নীতি-লুটপাটের মধ্য দিয়ে মানুষের পকেট কেটে নিয়ে দেশকে ধ্বংস করছে। তারা রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যা করছে, গুম করছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে-এ বিষয়গুলো তো অবশ্যই আমরা সারা পৃথিবীকে জানিয়েছি।
তিনি বলেন, এই সরকার সমানে মিথ্যাচার করছে। সংসদে মিথ্যাচার করছে, বিদেশিদের সামনে মিথ্যাচার করছে। সব সময় বলছে যে, এখানে নাকি কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়নি। বাংলাদেশে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, সেটার নজির আছে।
সূত্র: যুগান্তর