সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :
সমকালীন সময়ে আমাদের শিশু ও তরুণদের বিনোদন সময় কিভাবে কাটছে এমন প্রশ্ন দৃশ্যপটে আনা হলে যে কেউ উত্তরে বলবেন মোবাইল ফোনে মগ্ন থাকছে নতুন এই প্রজন্ম।
কিন্তু মোবাইল ফোনে ওই শিশুটি কি দেখছেন তা নিয়ে সতর্ক থাকছেন না অধিকাংশ অভিভাবক। ফলে অসতর্কতাবশত শিশু ও তরুণরা গেমস, কৌতুক ভিডিও থেকে পর্যায়ক্রমে অশ্লীল ভিডিও দেখতে শুরু করে। আর এই অশ্লীল ভিডিও প্রদর্শনে দিনে দিনে অপরাধ গজতে চলে যাচ্ছে তরুণ ও শিশুরা।
বিজ্ঞানিদের ভাষ্য শিশু ও তরুণরা যা দেখেন তারা তা অনুসরণ করার চেষ্টা করেন। তারা যদি অশ্লীল বা খারাপ কিছু দেখেন তারা সেই খারাপ কাজ বাস্তবে অনুকরণের চেষ্টা করেন। ফলে আমাদের তরুণরা যে পথ হারাচ্ছেন তা অকপটেই বলা যায়।
ফেসবুক খুললেই দেখবেন অশ্লীল ভিডিওর ছড়াছড়ি। ভিউ বাড়াতে ঘৃণ্য এই প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত কথিত কনটেন্ট ক্রিয়েটররা। এসব যৌন উত্তেজক কনটেন্ট শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব পর্যায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
মোবাইল নিয়ে সব চেয়ে বেশি মাতামাতি করছেন বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। কখনও প্রয়োজনে কখনও সময়ের সঙ্গে তাল মিলাতে গিয়ে অভিভাবকরা বাধ্য হয়েই অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের হাতে তুলে দিচ্ছেন মোবাইল। কিন্তু কখনও কি অভিভাবকরা চিন্তা করে দেখেছেন মোবাইলের পার্শ্ব কিছু অপব্যবহারের কারণে তার সন্তান বিপথগামী হয়ে পড়ছে?
সংবাদমাধ্যমে নজর দিলেই দেখা যায় মোবাইল মানুষের নৈতিকতাকে কিভাবে ধ্বংস করছে। খুন, ধর্ষণ, ইভটিজিং সহ যে সকল ঘটনা অহরহ ঘটছে তার পিছনে মোবাইলের একটা ভূমিকা বরাবরই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ জড়িয়ে পরেছে মোবাইল পর্ণোগ্রাফি বা ব্লু ফিল্ম আসক্তিতে।
ইন্টারনেট এবং বিভিন্ন মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার থেকে গান ঢুকানোর নামে শিক্ষার্থীরা সুলভেই তাদের মোবাইল মেমরিতে নগ্ন ভিডিও ক্লিপস লোড করে নিচ্ছে। এসব নগ্ন ভিডিও এক সঙ্গে অনেকে মিলে দেখছে এবং ব্লুটুথের মাধ্যমে তা এক হাত অন্য হাতে ছড়িয়ে পড়ছে।
শুধু তাই নয়, ক্লাসের পিছনের বেঞ্চে বসে শিক্ষকের চোখ ফাঁকি দিয়ে মোবাইলের অপব্যবহারের কথাও শোনা যাচ্ছে। ভাবার বিষয় হচ্ছে, এ আসক্তি শুধু ছেলেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, মেয়েদের ও একটা বড় অংশ ব্লু ফিল্ম আসক্তিতে জড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে খুব অল্প বয়সেই ছেলে মেয়েদের মাঝে যৌন আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারণে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, ইভটিজিং, আত্মহত্যা, অপহরণসহ অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছে অল্পবয়সী ছেলে মেয়েরা।
আধুনিকতার নামে এই উগ্র আধুনিকতার কবলে পড়ে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দিন দিন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে এই ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে হলে নৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। পাশাপাশি সন্তানদের মোবাইল কিনে দেওয়ার সময় অভিভাবকদের ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যাতে করে মোবাইলের অপব্যবহার না হয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে যাতে করে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা সার্ভিসিং সেন্টারগুলো থেকে মোবাইলে পর্ণোগ্রাফি ছড়িয়ে পড়তে না পারে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বিশেষ করে মাধ্যমিক পড়ুয়াদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ব্যবহারের ব্যাপারে বিধি নিষেধের ব্যাপারে সরকারিভাবে ভেবে দেখার সময় এসেছে।
আমাদের সমাজের আরেক ব্যাধি পাবজি, ফ্রি-ফায়ারের মতো গেমস। এসবে আসক্ত হয়ে অনেক সময় মাদকসহ অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ছে শিশু ও যুব সমাজ। অনলাইন গেমস যুব সমাজের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অনলাইন গেম শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করছে। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, শিশু ও তরুণদের বিনোদনের জন্য ইতিবাচক কিছু আবিস্কার জরুরি।
লেখক: হাসান আল বান্না, সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সূত্র: যুগান্তর