ব্রিটেনের নতুন রাজার সামনে যত আনুষ্ঠানিকতা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই ব্রিটিশ সিংহাসনের অধিকারী হয়েছেন চার্লস। তিনি এখন সাবেক প্রিন্স অব ওয়েলস। কিন্তু একজন মুকুটধারী রাজা হতে কিছু ঐতিহ্যবাহী আনুষ্টানিকতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে তাকে।

রাজার নাম
তিনি পরিচিত হবেন রাজা তৃতীয় চার্লস নামে। এটা নতুন রাজার নেওয়া প্রথম সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে অন্যতম। তিনি নিজের চারটি নামের যে কোনো একটি বেছে নিতে পারতেন – চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ।

অবশ্য পদবী পরিবর্তন কেবল চার্লসের একার ক্ষেত্রেই ঘটছে না। সিংহাসনের পরবর্তী দাবিদার হলেও প্রিন্স উইলিয়াম স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রিন্স অব ওয়েলস হবেন না। যদিও তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে বাবার অন্য একটি পদবী ‘ডিউক অব কর্নওয়াল’ পেয়েছেন। তার স্ত্রী ক্যাথরিন পরিচিত হবেন ডাচেস অব কর্নওয়াল হিসেবে।

jagonews24

চার্লসের স্ত্রীর জন্যও নতুন পদবী আসবে। তার পূর্ণাঙ্গ পদবী হলো কুইন কনসর্ট। কনসর্ট শব্দটি রাজা বা রানির স্ত্রী অথবা স্বামীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

আনুষ্ঠানিকতা
মায়ের মৃত্যুর প্রথম ২৪ ঘণ্টা বা কমবেশি কিছু সময়ের মধ্যে চার্লসকে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটেনের রাজা ঘোষণা করা হবে। এটি ঘটবে লন্ডনের সেন্ট জেমস প্যালেসে এবং অ্যাকসেশন কাউন্সিলের সামনে। এই সংঘে রয়েছেন প্রিভি কাউন্সিলের সদস্যরা, যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন জ্যেষ্ঠ পার্লামেন্ট সদস্য, রাজকীয় সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি, কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা, কমনওয়েলথ হাইকমিশনাররা এবং লন্ডনের লর্ড মেয়র।

এই আনুষ্ঠানিকতায় ৭০০’র বেশি মানুষ যোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এবার স্বল্প সময়ের কারণে সেই সংখ্যা অনেক কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সবশেষ ১৯৫২ সালের অ্যাকসেশন কাউন্সিলে ২০০ জনের মতো লোক যোগ দিয়েছিলেন।

jagonews24

প্রথামতে, এই অনুষ্ঠানে রাজা যোগ দেবেন না। সভায় প্রিভি কাউন্সিলের লর্ড প্রেসিডেন্ট (বর্তমানে পেনি মরডন্ট, এমপি) রানি এলিজাবেথের মৃত্যুর ঘোষণা দেবেন এবং একটি ঘোষণা পড়ে শোনানো হবে।

এই ঘোষণার কিছু শব্দ হয়তো পরিবর্তন হতে পারে। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে এতে বেশ কিছু প্রার্থনা ও প্রতিশ্রুতি, সাবেক রাজন্যের প্রশংসা এবং নতুন শাসকের প্রতি সমর্থন জানানো হয়। পরে এই ঘোষণাপত্রে প্রধানমন্ত্রী, আর্চ বিশপ অব ক্যান্টারবারি, লর্ড চ্যান্সেলরসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব সই করেন।

রাজার প্রথম ঘোষণা
অ্যাকসেশন কাউন্সিল আবার বসবে। এটি ঘটে সাধারণত একদিন পর এবং এবার প্রিভি কাউন্সিলের সদস্যদের সঙ্গে রাজাও যোগ দেবেন।

ব্রিটিশ রাজার রাজত্বের শুরুতে তেমন কোনো শপথ পড়তে হয় না, যেমনটি হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে। কিন্তু ১৮ শতকের গোড়ার দিকে থেকে চালু হওয়া একটি প্রথা অনুসরণ করে নতুন রাজা একটি শপথ নেন যে, তিনি চার্চ অব স্কটল্যান্ড সংরক্ষণ করবেন।

jagonews24পরে বাদ্যদলের আনুষ্ঠানিকতার পর চার্লসকে নতুন রাজা ঘোষণা করে জনসাধারণের জন্য একটি ঘোষণাপত্র জারি করা হবে। এই ঘোষণা দেওয়া হবে সেন্ট জেমস প্রাসাদের ফ্রিয়ারি কোর্টের একটি বারান্দা থেকে। গার্টার কিং অব আর্মস হিসেবে পরিচিত এক কর্মকর্তা এই ঘোষণা পাঠ করবেন।

১৯৫২ সালের পর এই প্রথমবারের মতো যখন ব্রিটিশদের জাতীয় সঙ্গীত বাজবে, তখন সেখানে বলা হবে ‘ঈশ্বর রাজাকে রক্ষা করুন’।

হাইড পার্ক, টাওয়ার অব লন্ডন এবং নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে গান স্যালুট দেওয়া হবে এবং এডিনবরা, কার্ডিফ ও বেলফাস্টে চার্লসকে রাজা ঘোষণা করা ঘোষণাপত্র পড়ে শোনানো হবে।

অভিষেক
অভিষেক হলো রাজা হিসেবে চার্লসের দায়িত্ব গ্রহণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকী ধাপ, যখন তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মুকুট পরবেন। তবে এর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে, তাই সম্ভবত খুব শিগগির এই অভিষেক অনুষ্ঠান হচ্ছে না। রানি এলিজাবেথ সিংহাসনে বসেছিলেন ১৯৫২ সালে, কিন্তু ১৯৫৩ সালের জুনের আগে তার অভিষেক হয়নি।

৯০০ বছরের রীতি অনুসারে অভিষেক অনুষ্ঠান হয় ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে। প্রথম রাজা উইলিয়াম দ্য কনকোয়ারারের অভিষেক হয়েছিল সেখানে। আর চার্লস হবেন ৪০তম।

এটি অ্যাংলিকান ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যা পরিচালনা করেন আর্চ বিশপ অব ক্যান্টারবারি। আনুষ্ঠানিকতার চুড়ান্ত পর্বে তিনি চার্লসের মাথায় সেন্ট এডওয়ার্ড মুকুট পরিয়ে দেবেন। এটি খাঁটি স্বর্ণের তৈরি, যা ১৬৬১ সাল থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে।

টাওয়ার অব লন্ডনে যেসব মণিমাণিক্য রয়েছে, এটি তার মধ্যমণি। মুকটটির ওজন ২ দশমিক ২৩ কিলোগ্রাম। একমাত্র রাজা বা রানির অভিষেকের সময় এটি তারা পরেন।

jagonews24

রাজকীয় বিয়ে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান না হলেও অভিষেক একটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের খরচ সরকার বহন করে এবং সরকারই এর অতিথি তালিকা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়। এই অনুষ্ঠানে গানবাজনা হয়, চলে পাঠ ও রীতি পালন। ব্যবহার করা হয় কমলা, গোলাপ, দারুচিনি, কস্তুরি ও অম্বর।

সবার সামনে নতুন রাজা অভিষেক শপথ গ্রহণ করবেন। এসব আনুষ্ঠানিকতার সময় তিনি নতুন দায়িত্বের প্রতীক হিসেবে রাজদণ্ড গ্রহণ করবেন। আর্চ বিশপ অব ক্যান্টারবারি তার মাথায় খাঁটি স্বর্ণের মুকুট পরিয়ে দেবেন।

কমনওয়েলথ প্রধান
রাজা হিসেবে চার্লস এখন ৫৬টি স্বাধীন রাষ্ট্র ও ২৪০ কোটি মানুষের সংগঠন কমনওয়েলথের প্রধান হয়েছেন। যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি ১৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানও তিনি। দেশগুলো হলো অস্ট্রেলিয়া, অ্যান্টিগা ও বারবুডা, বাহামা, বেলিজ, কানাডা, গ্রেনাডা, জ্যামাইকা, পাপুয়া নিউ গিনি, সেন্ট ক্রিস্টোফার অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড গ্রেনাডাইনস, নিউজিল্যান্ড, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ এবং টুভালু।

 

সূত্রঃ জাগো নিউজ