ব্রড ও ডুয়েলগেজে বদলে যাচ্ছে পূর্বাঞ্চলের রেল যোগাযোগ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

দেশের পূর্বাঞ্চল রেলে ব্রডগেজ ট্রেন পরিচালনা আরও একধাপ এগিয়ে গেল। এ অঞ্চলের ঢাকা-চট্টগ্রাম ৩২১ কিলোমিটার রেলপথের ৭২ কিলোমিটার ব্রড ও ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন প্রকল্পের ২৪ কিলোমিটার লাইন শুভ উদ্বোধন হচ্ছে শনিবার।

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এ ডুয়েলগেজ উদ্বোধন করবেন।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৭২ কিলোমিটার ডুয়াল গেজ ডাবল লাইন প্রকল্পটির ৭৮ শতাংশ কাজ শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি সমাপ্ত হবে আগামী বছর।

দেশে ট্রেন পরিচালনার শুরু থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেলে ব্রডগেজ ট্রেন চললেও পূর্বাঞ্চলে শুধুমাত্র ব্রড ও ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন না থাকায় ব্রডগেজ ট্রেন পরিচালনা সম্ভব হয়নি। উভয় অঞ্চলে ব্রডগেজ ট্রেন পরিচালনায় পুরো পূর্বাঞ্চল রেলে ব্রড ও ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন স্থাপনের মহাপরিকল্পনা নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে এ পথে টঙ্গী-ভৈরব, লাকসাম-চট্টগ্রাম রেলপথে ১৩১ কিলোমিটার মিটারগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ করে। অন্যদিকে ১১৮  কিলোমিটার মিটারগেজ ডাবল লাইন রেলপথ আগেই তৈরি ছিল। বাকি ৭২ কিলোমিটার রেলপথ ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনে উন্নীত করার জন্য ‘লাকসাম-আখাউড়া ডাবল লাইন প্রকল্পটি’ নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে।

২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন হয়। কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালে। এ প্রকল্পের নির্মাণকাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে সিটিএম জয়েন্ট ভেঞ্চার। এটি চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ, বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও তমা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের যৌথ একটি কোম্পানি। প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে কভিড-১৯-এর কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে দেয় সরকার।

শুক্রবার বিকালে এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রী মো, নূরুল ইসলাম সুজন যুগান্তরকে বলেন, আমরা আখাউড়া থেকে লাকসাম পযর্ন্ত ৭২ কিলোমিটার  ব্রডগেজ, ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ করছি। শনিবার এর ২৪ কিলোমিটার উদ্বোধন করা হবে। বাকি অংশ আগামী বছরের জুনের মধ্যেই  সমাপ্ত হবে। আখাউড়া-সিলেট ডুয়েলগেজ লাইণ নির্মাণ প্রকল্প চলমান রয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইনে বাকি অংশও ব্রডগেজ ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে  সমীক্ষা শেষ হয়েছে, দ্রুতই মূল কাজ শুরু হবে। মিটারগেজ লাইন পুরোপুরি ভেঙে না ফেলে ডুয়েলগেজ লাইনে রূপান্তরের প্রকল্প নেয়া হচ্ছে।

এদিকে গৃহীত পরিকল্পনা অনুযায়ী, পূর্বাঞ্চল রেলে ব্রডগেজ ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে- অন্তত ৭ থেকে ১০ বছর পর। তবে আগামী বছর আখাউড়া-কুমিল্লা পযর্ন্ত ৪৮ কিলোমিটার ব্রড ও ডুয়েল গেজ লাইন  স্থাপন সমাপ্ত হলে এ পথের পুরোটাই ডাবল লাইন হবে। ফলে এ পথে অতিরিক্ত আরও অন্তত ১২টি আন্তঃনগর ট্রেন পরিচালনা সম্ভব হবে। এতে সময় কমে আসবে প্রায় ১ ঘন্টা থেকে দেড় ঘন্টা।

রেলওয়ে মহাপরিচালক ডিএন মজুমদার জানান,  শনিবার কুমিল্লা-লাকসাম রেললাইনের ডুয়েলগেজ উদ্বোধন করা হবে। এতে রেলপথে ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-সিলেট, ঢাকা-নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহে যাতায়াতে ৩০  থেকে ৩৫ মিনিট সময় কমে আসবে।

এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে সব মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে এক বছর বাড়িয়েছে সরকার। সেই সুবাদে বাড়তি এক বছর সময় পেয়েছে লাকসাম-আখাউড়া ডাবল লাইন প্রকল্পও।

ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর জানান,  ম্যাক্স গ্রুপসহ কয়েটি দেশীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান রেলে সুনামের সঙ্গে উন্নয়ন প্রকল্পে ঠিকাদারি কাজ করছে। আমাদের দক্ষতার সঙ্গে  জনবলও পর্যাপ্ত রয়েছে। করোনার সময়ও আমরা দেশ ও জাতির কল্যালে অতিরিক্ত সরঞ্জাম ও লোকবল দিয়ে কাজ চালাচ্ছি, যাতে যথা সময়ের মধ্যে প্রকল্প শেষ করতে পারি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় রেলে আমূল পরিবর্তন আসছে। নতুন নতুন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আমরা দেশি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান একক ও যেকোনো বিদেশি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছি। আখাউড়া, লাকসাম, চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ কাজ দেশীয় প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপও করছে। ইতোপূর্বে রেলে নতুন রেলপথ নির্মাণসহ বহু উন্নয়ন প্রকল্প ম্যাক্স গ্রুক করেছে। আমরা দেশের মাটিতে দেশের অর্থায়নে বিশ্বমানের কাজ করছি।

সূত্র: যুগান্তর