ব্যবসায়ীদের কথাই থাকল, চামড়ার দাম বাড়ল ৫ টাকা

গত বছরের চেয়ে প্রতি বর্গফুটে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে আসন্ন কোরবানির ঈদের পশুর চামড়ার ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এর আগে চামড়ার দাম আরো বাড়িয়ে নির্ধারণের জন্য সরকার প্রস্তাব দিলেও এ খাতের ব্যবসায়ীরা বিরোধিতা করেন। পরে তাঁরা প্রতি বর্গফুটে পাঁচ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিলে তা মেনে নেওয়া হয়। তবে সম্ভব হলে কিছু ক্ষেত্রে আরো ভালো দাম দেবেন বলে ব্যবসায়ীরা আশ্বাস দিয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ট্যানারি মালিকসহ এ খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে চামড়ার নির্ধারিত ক্রয়মূল্য ঘোষণা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

এবার ঢাকায় লবণযুক্ত গরু ও মহিষের চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৪০-৪৫ টাকা, গত বছর যা ছিল ৩৫-৪০ টাকা। আর ঢাকার বাইরে গরু ও মহিষের চামড়ার ক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৩৩-৩৭ টাকা, গত বছর যা ছিল ২৮-৩২ টাকা।

এ ছাড়া সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৫-১৭ টাকা, আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২-১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ১৩-১৫ টাকা এবং বকরির চামড়া ১০-১২ টাকা বেঁধে দিয়েছিল সরকার।

পরে বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের সেই প্রস্তাবই গ্রহণ করেন। মন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের প্রস্তাবই মেনে নিলাম। তবে আল্লাহর ওয়াস্তে যা বলেছেন সেটা যেন বাস্তবায়ন করেন। আপনারা মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা বলে চামড়ার দাম বেঁধে দেওয়ার বিরোধিতা করছেন, সেটাও ঠিক আছে। সম্ভব হলে বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে বেশি দামে চামড়া কিনে সেটা প্রমাণ করে দেখান। এতে সরকারের বদনাম হলে হোক।’

এ বছর লবণ ছাড়া চামড়ার দাম নিয়ে আলোচনা হয়নি। বরং কোরবানিদাতা হতে শুরু করে মসজিদ ও এতিমখানা, যেখানে চামড়া মজুদ করা হয়, সেখান থেকেই চামড়ায় লবণ দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ এ বছর ঢাকার ভেতরে গরুর চামড়ার দাম ২০১৮ সালের মতো ৫০-৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০-৪৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিলেন, কিন্তু ব্যবসায়ীরা সেই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে গত বছরের চেয়ে প্রতি বর্গফুটে পাঁচ টাকা বাড়ানোর কথা বলেন।

লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, কোরবানির দিন চামড়া সংরক্ষণের দিকে নজর দিতে হবে। কারণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস মতে, কোরবানির আগে-পরে তিন-চার দিন আর্দ্রতা থাকবে ৯৫ থেকে ৯৭ শতাংশ। তাপমাত্রা থাকবে ৩২ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থায় চামড়া সংরক্ষণ করা চ্যালেঞ্জিং হবে। যেহেতু মাত্র ৮২ হাজার টন লবণ লাগবে, এই লবণ মসজিদগুলোতে বণ্টন করতে সরকারের মাত্র ৯ কোটি টাকা লাগবে। এটা করা গেলে চামড়া সংরক্ষণটা খুব কার্যকর হবে।

কোরবানির চার ঘণ্টার মধ্যে চামড়ায় লবণ দিয়ে দেওয়ার জন্য প্রচার চালাতে পরামর্শ দেন চামড়া খাতের ব্যবসায়ী নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন।

সভায় কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী আফতাব খান বলেন, গত বছর বেশি দাম পাওয়ার জন্য সরাসরি ঢাকায় চামড়া নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছিল। শৃঙ্খলার জন্য এটা রোধ করতে হবে। গত বছর সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে দাম না পেয়ে কিছু চামড়া নষ্ট হয়েছিল। এবার সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

দেশে সারা বছর যে সংখ্যক পশু জবাই হয়, তার অর্ধেক হয় এই কোরবানির মৌসুমে। কোরবানি যারা দেয়, তাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন পাইকারদের কাছে। পাইকাররা সেই চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণের প্রাথমিক কাজটি সেরে বিক্রি করেন ট্যানারিতে। ট্যানারি কেমন দামে চামড়া কিনবে, তা প্রতিবছর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বছরে বাংলাদেশ থেকে মোটামুটি ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪.৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১.৮২ শতাংশ ছাগলের, ২.২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১.২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কোরবানিতে এক কোটি ১৮ লাখ পশু কোরবানির যোগ্য বিবেচনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে গরু ও মহিষ ৪৫ লাখ এবং ছাগল ও ভেড়া ৭২ লাখ।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ