বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ক্লাস, ভর্তি, পরীক্ষার গাইডলাইন দিল ইউজিসি

করোনার কারণে বন্ধ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবার অনলাইনে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের চলমান অনলাইন ক্লাসে ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকলে অনলাইনে পরীক্ষার আয়োজন করা হবে।

এ পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের আগের ফলাফল, ক্লাস পারফরম্যানস, মিড-টার্ম পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্টের নম্বরের ওপর ভিত্তি করে এবং অনলাইন ক্লাসের পঠিত অংশের ওপর অ্যাসাইনমেন্ট, কেসস্টাডি এবং ভাইভার মাধ্যমে নম্বর দিয়ে ফলাফল প্রকাশ করা যাবে।  বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) তাদের ওয়েবসাইটে -সংক্রান্ত গাইডলাইন প্রকাশ করে।

তারা জানায়, অনলাইন পরীক্ষায় নকল প্রতিরোধ নিশ্চিত করতে হবে। চলমান সেমিস্টারে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা সয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী সেমিস্টারের কোর্স রেজিস্ট্রেশন ও ক্লাস করার সুযোগ পাবে। এ ছাড়া অনলাইনে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম ১ জুন থেকে শুরু করা যাবে।  এসব বিধান রেখেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস, পরীক্ষা ও ভর্তির এ গাইডলাইন প্রকাশ করে।

এর ফলে করোনায় অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ ও ভর্তিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোনো বাধা থাকল না। গাইডলাইনে দুটি বিকল্প প্রস্তাব রাখা হয়েছে। ইউজিসিকে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেকোনো একটি পদ্ধতিতে তাদের কার্যক্রম অব্যহত রাখতে পারবে।

প্রথম প্রস্তাবে বলা হয়, চলতি সেমিস্টারের কোর্সসমূহের অসমাপ্ত পাঠ্যসূচির ওপর অনলাইনে ক্লাস চলমান থাকবে। তবে ল্যাবরেটরিভিত্তিক সব কোর্সের ব্যবহারিক ক্লাস করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর শ্রেণিকক্ষে সম্পন্ন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পর্যায়ের পরীক্ষা ও মূল্যায়ন করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর চলমান নিয়ম অনুযায়ী গ্রহণ করবে।

দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলা হয়, স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব সক্ষমতা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের উপযোগী ডিজিটাল পদ্ধতিতে ক্লাস পরিচালনা করবে। চলমান সেমিস্টারের অসমাপ্ত প্রায় ৩০ শতাংশের মতো পাঠ্যসূচি সম্পন্ন হয়ে গেলে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। তবে চলমান সেমিস্টারের বিভিন্ন বিষয়ের আগের ক্লাস উপস্থিতি, পারফরম্যান্স, ক্লাস টেস্ট এরং মিডটার্ম পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে মূল্যায়ণ করতে হবে। একইসঙ্গে অনলাইনে পঠিত অংশের ওপর অ্যাসাইনমেন্ট, কেইস স্টাডি, ভাইভা, ভার্চুয়াল প্রেজেন্টেশনের নিয়ে মূল্যায়ণ সম্পন্ন করে ফল প্রকাশ করা যাবে। তবে ব্যবহারিক পরীক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর ক্লাসে নিতে হবে।

উভয় প্রস্তাবের যেকোনো একটি গ্রহণ করতে হলে অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমপক্ষে ৬০ শতাংশ হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে পদ্ধতি গ্রহণ করবে তা লিখিতভাবে ১৭ মে’র মধ্যে ইউজিসিকে জানাতে হবে। আর যারা এখনো অনলাইনে ক্লাস শুরু করেনি বা করতে চান না তারা কোন প্রক্রিয়ায় চলমান সেমিস্টার শেষ করবে তা-ও আগামী ১৭ মের মধ্যে লিখিতভাবে ইউজিসিকে জানাতে বলা হয়েছে।

ভর্তির ব্যাপারে গাইডলাইনে বলা হয়, ১ জুন থেকে অনলাইনে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে পারবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। চলমান সেমিস্টারে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা পরবর্তী সেমিস্টারের কোর্স রেজিস্ট্রেশন ও ক্লাস করার সুযোগ পাবে। পরবর্তী সেমিস্টারের ক্লাস ১ জুলাই থেকে শুরু হবে। করোনা পরিস্থিতি অব্যহত থাকলে ওই সেমিস্টারের ক্লাসও অনলাইনে নেয়া যাবে।

এ ছাড়া বিশ্বিবিদ্যালয়গুলোর প্রতি ১৪টি নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেখানে টিউশন ফি আদায়ে শিক্ষার্থীদের প্রতি মানবিক আচরণ করা; অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফ, হ্রাস ও ইনস্টলমেন্টে প্রদানের সুযোগ রাখা; শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধসহ নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এই গাইডলাইনের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইউজিসির গাইডলাইনটি আমরা বিশ্লেষণ করে দেখব। গাইডলাইনে কোথাও আমাদের আপত্তি আছে কি না তা আমরা আলোচনা করব। এরপর যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন করব।‘

৩০ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এক ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে করোনার সময়ে অনলাইনে পরীক্ষা ও ভর্তির ব্যাপারে সবাই সম্মত হয়েছিলেন। এক সপ্তাহের মধ্যেই এ ব্যাপারে বিস্তারিত গাইডলাইন প্রকাশ করল ইউজিসি।

আরও পড়ুন:

মেস ভাড়া ও ফি নিয়ে হুমকিরমুখে রাজশাহীর লাখো শিক্ষার্থীর পড়া-শোনা