‘বিষয়টি যাতে প্রথম আলোকে দেখে নেবার মতো না হয়’

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও পত্রিকাটির সহযোগী প্রকাশনা কিশোর আলো’র সম্পাদক আনিসুল হকসহ দশজনের বিরুদ্ধে ঢাকার একটি আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পর বিষয়টি নিয়ে নানা মহলে আলোচনা হচ্ছে।

অনেকে মনে করছেন, প্রথম আলো যেহেতু সরকারের সমালোচক গণমাধ্যম হিসেবে পরিচিত – সেজন্য তাদের উপর চাপ করতেই একটি হত্যা মামলাকে সামনে আনা হয়েছে।

আবার অনেকে বলছেন, যে ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে সেটির সাথে গণমাধ্যমে স্বাধীনতার কোন সম্পর্ক নেই।

গত পহেলা নভেম্বর ঢাকার রেসিডেনশিয়াল মডেল স্কুল ও কলেজে প্রথম আলোর কিশোর ম্যাগাজিন ‘কিশোর আলো’র বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয়ে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাঈমুল আবরার নিহত হবার ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

নিহত ছাত্রের পিতার দায়ের করা সে মামলায় অবহেলা জনিত হত্যার অভিযোগ আনা হয়।

সে ঘটনার পর অনেকে প্রথম আলো কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তখন বলেছিলেন যে এমন ‘গর্হিত অপরাধ’ সহ্য করা যায়না।

বিশ্লেষক ও সাংবাদিকরা কী বলছেন?

প্রথম আলো সম্পাদকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং মামলার বিষয়টি নিয়ে কোন সোজাসাপ্টা উত্তর নেই বলে মনে করেন সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল।

তিনি মনে করেন, বিষয়টিকে সার্বিক প্রেক্ষাপট থেকে বিবেচনা করতে হবে।

“এটা অন্য ধরণের মামলা। এর সাথে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কোন সম্পর্ক নেই। কারণ প্রথম আলোর কোন প্রতিবেদন বা লেখালেখির কারণে এ মামলা দায়ের করা হয়নি। একটা ইভেন্টে দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ মামলা হয়েছে। ইভেন্ট ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির কারণে সে দুর্ঘটনা ঘটেছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখার বিষয় রয়েছে,” বলছিলেন মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল।

“সড়কে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে যেভাবে মামলা দায়ের করা হয়, এক্ষেত্রেও সেটি হয়েছে।”

তবে এটিকে ব্যবহার করে প্রথম আলো পত্রিকার স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং স্পষ্ট কথা বলার অধিকারের উপর যদি চাপ তৈরি করা ঠিক হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বিবিসি বাংলাকে বলেন, বিষয়টি যাতে শুধু সে ঘটনার সাথে সীমাবদ্ধ থাকে।

তিনি বলেন, “বিষয়টি যেন প্রথম আলোকে দেখে নেবার মতো না হয়। এর মাধ্যমে যাতে প্রতীয়মান না হয় যে বিরুদ্ধ মতকে দমন করা হচ্ছে।”

শিক্ষার্থী নিহত হবার বিষয়টিকে দু:খজনক হিসেবে বর্ণনা করে কাবেরী গায়েন আশা করেন, এক্ষেত্রে আইনগত প্রক্রিয়া যাতে যথাযথ অনুসরণ করা হয়।

গ্রেফতারি পরোয়ানা ও ফেসবুকে নানা মন্তব্য

আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে নানা রকম মন্তব্য করেছেন।

বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতায় বিপ্লব হাসান নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, “অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য র‍্যাব, পুলিশ,স্বেচ্ছাসেবক, এমনকি বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা পর্যন্ত নিয়োগ দিয়েছে। ডাক্তার, অ্যাম্বুল্যান্স ছিল। একটি পত্রিকার পক্ষে আর কী করা সম্ভব?”

তবে অনেকে মনে করেন, এই ঘটনায় প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারেন না।

আহমেদুল হক আয়েল বিবিসি বাংলার ফেসবুক পেজে লিখেছেন , “একজন মানুষ মারা যাবার পরেও কেন গোপন রাখা হয়েছিল? অনুষ্ঠান কেন সাময়িক বন্ধ করা হয়নি। তাহলে এটা কি হেঁয়ালি নাকি ইচ্ছাকৃত?”

মো. রহমতউল্লাহ লিখেছেন, “পত্রিকার সম্পাদক কি আইনের বাইরে পড়েছে নাকি? সবার জন্য আইন সমান”

তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথম আলো কর্তৃপক্ষকে যাতে হয়রানি না করা হয় সেটি উল্লেখ করেছেন জাকির আল ফারুকী নামে এক ব্যক্তি।

তিনি মন্তব্য করেন, “এ অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর কোন দায় ছিল কিনা তার যথাযথ তদন্ত হওয়া দরকার। কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেটাও বিবেচনায় রাখতে হবে।”

প্রথম আলো পত্রিকা যেহেতু বিভিন্ন সময় সরকারের সমালোচনা করে সেজন্য এ মামলা দায়ের করা হয়েছে কিনা সে প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে।

বিবিসি বাংলার ফেসবুক পাতায় মুনির হাসান লিখেছেন, ” প্রথম আলো ধর্ষণ, দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে লেখা শুরু করেছিল

এমএস সিরাজ লিখেছেন, “দেশ সেরা সংবাদ মাধ্যম প্রথম আলোকে ধ্বংস করার চেষ্টায় যে মহলটি লিপ্ত তারাই এসব করাচ্ছে বলে মনে হয়।”

সূত্র: বিবিসি বাংলা