বিশ্ব বিজ্ঞান একাডেমির সদস্যপদ পেলেন রাবি প্রফেসর

বিশ্ব বিজ্ঞান একাডেমি ‘The World Academy of Sciences’ (TWAS) এর সদস্যপদ পেলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. সালেহ হাসান নকিব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) স্ট্যাটাসে বিষয়টি জানিয়েছেন তিনি নিজেই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন শিক্ষকের এটাই প্রথম বিশ্ব বিজ্ঞান একাডেমির সদস্যপদ লাভ করলেন। এরপূর্বে দেশের দু’জন পদার্থবিজ্ঞানী প্রফেসর শমসের আলী এবং সদ্য প্রয়াত প্রফেসর হারুন অর রশিদ সদস্য পদলাভ করেছিলেন। এরপর গত বছর পেয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের প্রফেসর বিখ্যাত প্লাজমা বিজ্ঞানী ড. আব্দুল্লাহ্‌ আল মামুন।

জানা গেছে, TWAS হল একটি যোগ্যতা-ভিত্তিক বিজ্ঞান একাডেমি, যা উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বিজ্ঞানের সেরা প্রতিনিধিত্ব করে। TWAS সদস্য হিসেবে নির্বাচনের প্রধান মাপকাঠি হল বৈজ্ঞানিক শ্রেষ্ঠত্ব। শুধুমাত্র সেইসব বিজ্ঞানী যারা সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মান অর্জন করেছেন এবং বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তারা ফেলো হিসেবে সদস্যপদ জীবনের জন্য মনোনীত হতে পারে।

সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়ে প্রফেসর নকীব বলেন, ‘শুরুটা বেশ অদ্ভুত ছিল। বাবাকে সাথে নিয়ে হাসপাতাল যাচ্ছি, গত বছরের শেষ দিকে এ্যাম্বুলেন্সে একটা ফোন পেলাম। বাংলাদেশ একাডেমী অফ সায়েন্সেস ফেলো প্রফেসর শমশের আলী স্যার। স্যার TWAS (The World Academy of Sciences) Membership-এর জন্য নোমিনেট করতে চান। আমার যা মনের অবস্থা, তাতে আসলে অ্যাপ্লিকেশন করার মত অবস্থায় ছিলাম না। স্যারকে সেটা একটু বলার চেষ্টা করলাম। তিনি তারপরও করতে বললেন।

তারপর বেশ অনেকটা সময় চলে গেছে। আমি কিছুই করার উৎসাহ পাইনি এর একটা কারণ অবশ্য এটাও ছিল যে, TWAS Membership যে অত্যন্ত উচ্চস্তরের কোয়ালিফিকেশন ডিমান্ড করে, নিজেকে তার যোগ্য মনে হয় নি। সারা দুনিয়া থেকে শ’খানেক ফিজিসিস্ট TWAS Membership পেয়েছেন। এদের ভেতর আবার প্রায় আধা ডজন নোবেল লরিয়েট। এই ধরণের একটা গ্রুপে আমি যে বিলং করি না, সেটা খুব ভালো বুঝি।

বাবার অসুস্থতা টপ প্রায়োরিটি। TWAS Membership-এর কথা ভুলে গিয়েছিলাম। এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে আবার স্যারের ফোন। সরাসরি বললেন – ‘তুমি অ্যাপ্লাই করো নি কেন? এখনো দু’দিন সময় আছে, এখনই অ্যাপ্লাই করো।’ স্যারকে আবারো মনের অবস্থাটা বললাম। সেই সাথে বললাম, মাত্র দু’দিনে আমি কী করে করব! স্যার নাছোড়বান্দা। সেই সাথে যুক্ত হলেন প্রফেসর হাসিনা খান (ম্যাডাম বাংলাদেশ একাডেমী অফ সায়েন্সেস ফেলো এবং বর্তমানে একাডেমীর সেক্রেটারি)। ম্যাডামের সহযোগিতার তুলনা হয়না। স্যার ও ম্যাডামের সহযোগিতায় কী করে যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটা করে ফেললাম। পাশে থেকে রায়হানা শামস্‌ ইসলাম অনেক সাহায্য করেছেন।

একটু আগে TWAS Membership-এর অফিশিয়াল নোটিফিকেশন পেয়েছি। জানি না কী করে হল! আলহামদুলিল্লাহ্‌। স্যার এবং ম্যাডামের কৃতিত্ব বলতে হবে। আমি তো অ্যাপ্লাই করার কথাই ভাবছিলাম না। আমি এখনো জানি না, কী দেখে এক্সিস্টিং মেম্বাররা আমাকে বাছাই করলেন!

ডিজার্ভিং হই বা না হই, এটা কখনোই সম্ভব হত না আমার একান্ত প্রিয়জনদের দোয়া, শিক্ষকদের অবদান, কো-রিসার্চার, কো-ওয়ার্কার এবং ছাত্রছাত্রীদের কঠোর পরিশ্রম ছাড়া। আমি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

উল্লেখ্য, উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য ওয়ার্ল্ড একাডেমি অফ সায়েন্সেস, যার সংক্ষিপ্ত নাম, TWAS দ্বারা বিশ্বব্যাপী পরিচিত, গবেষণা, শিক্ষা, নীতি এবং কূটনীতির মাধ্যমে টেকসই সমৃদ্ধি সমর্থন করে। একাডেমিটি ইতালির ট্রিয়েস্টে অবস্থিত।

থার্ড ওয়ার্ল্ড একাডেমি অফ সায়েন্সেস, যেমনটি মূলত পরিচিত ছিল, আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছিল ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘের মহাসচিব জাভিয়ের পেরেজ ডি কুয়েলার উপস্থিত একটি অনুষ্ঠানে। প্রাথমিকভাবে, TWAS-এর ৪২ জন নির্বাচিত ফেলো ছিল, তাদের মধ্যে নয়জন নোবেল বিজয়ী। নামটি দুবার পরিবর্তিত হয়েছিল: ২০০৪ সালে, “উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য বিজ্ঞান একাডেমি” এবং ২০১২ সালে, “উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য বিশ্ব বিজ্ঞান একাডেমি”।

TWAS ১৯৮৩ সালে পাকিস্তানি পদার্থবিজ্ঞানী এবং নোবেল বিজয়ী আব্দুস সালামের নেতৃত্বে উন্নয়নশীল বিশ্বের বিজ্ঞানীদের একটি বিশিষ্ট দল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তারা একটি বিশ্বাস ভাগ করে নিয়েছে যে উন্নয়নশীল দেশগুলি, বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলে শক্তি তৈরি করে, ক্ষুধা, রোগ এবং দারিদ্রের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জ্ঞান এবং দক্ষতা তৈরি করতে পারে। শুরু থেকেই, একাডেমীতে ইতালীয় বিজ্ঞানী এবং রাজনৈতিক নেতাদের অপরিহার্য সমর্থন ছিল।

আজ, TWAS-এর ১২৯৬ জন নির্বাচিত ফেলো রয়েছে— বিশ্বের সবচেয়ে নিপুণ বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে একজন—১০০ টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন; তাদের মধ্যে ১১ জন নোবেল বিজয়ী। প্রায় ৮৪ শতাংশ উন্নয়নশীল দেশ থেকে এসেছেন এবং বাকিরা উন্নত বিশ্বের বিজ্ঞানী যাদের কাজ দক্ষিণে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। TWAS ফেলোরা একাডেমির সমস্ত কাজের ভিত্তি।