বিশ্ব ইজতেমার ইতিহাস

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

সংরক্ষিত ইতিহাস অনুসারে মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভি (রহ.)-এর হাত ধরে ১৯২৭ সালে উপমহাদেশে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজের সূচনা হয়। মাওলানা আবদুল আজিজের মাধ্যমে ১৯৪৪ সালে বাংলাদেশে তাবলিগের কাজ শুরু হয়। তাবলিগ জামাতের কাজ প্রসার লাভ করলে তাবলিগ জামাতের অনুসারীদের এলাকাভিত্তিক সম্মেলনের সূচনা করেন মাওলানা ইলিয়াস (রহ.)। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর দুই পাকিস্তান ও ভারতে সম্মিলিত ইজতেমার উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাংলাদেশের কাকরাইল, ভারতের ভুপাল এবং পাকিস্তানের রাইভেন্ডে ইজতেমার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ধর্মীয়, সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অন্যান্য কারণে প্রথম থেকেই বাংলাদেশের ইজতেমার আয়তন অন্য দুই দেশের চেয়ে বেশি ছিল। ফলে ক্রমেই তা প্রাধান্য লাভ করতে থাকে এবং বিশ্ব ইজতেমায় রূপ নেয়।

বাংলাদেশে ইজতেমা : ১৯৪৬ সালে প্রথমবারের মতো কাকরাইল মসজিদের ভেতরে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজি ক্যাম্পে এবং ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে তাবলিগ জামাতের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। দিন দিন লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৬৬ সালে টঙ্গীর পাগাড় গ্রামের কাছে (টঙ্গীর মনসুর জুট মিলের নিকটে) একটি মাঠে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই ইজতেমায় বিদেশি কয়েকটি জামাতও অংশ নেয়। এখান থেকেই এর নাম হয় বিশ্ব ইজতেমা। ১৯৬৭ সালে টঙ্গীর তুরাগ নদের পারে প্রথমবারের মতো বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার তুরাগ পারের ১৬০ একর জমি তাবলিগ জামাতের জন্য বরাদ্দ দেয়। ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমা এক পর্বে অনুষ্ঠিত হতো। তবে লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১৬ থেকে একাধিক পর্বে ইজতেমা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ইজতেমা যেভাবে বিশ্ব ইজতেমা : কথিত আছে, বাংলাদেশকে বিশ্ব ইজতেমার স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল লটারির মাধ্যমে। তবে তাবলিগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, বিষয়টি তাদের অজ্ঞাত। তাদের দাবি, দেশভাগের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ), পশ্চিম পাকিস্তান ও ভারতে পৃথক ইজতেমার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তখন একই সঙ্গে তিন ভূখণ্ডে ইজতেমা শুরু হয়। তবে অধিকসংখ্যক লোকের অংশগ্রহণ, স্বল্প ব্যয়ভার, ভিসাপ্রাপ্তির সহজতা, সাধারণ মুসলমানের আন্তরিকতা, অনুকূল পরিবেশ, সামাজিক ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশের ইজতেমা সারা বিশ্বের তাবলিগ জামাতের অনুসারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ক্রমেই বাংলাদেশ ইজতেমা বিশ্ব ইজতেমায় পরিণত হয়।

সূত্র: কালের কণ্ঠ