বিশ্ববাজারে তেলের দাম তো এখন সর্বনিম্ন, সরকার কমাচ্ছে না কেন?

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কয়েক দফায় জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। বিশ্ববাজারে তেলের মূল্যবৃদ্ধি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ, জ্বালানি খাতের উন্নয়নের তাগিদেই তেলের দাম বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়ে বলে সরকারের পক্ষ থেকে সবসময় দাবি করা হয়। যদিও সরকারের এমন দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং বিরোধী শিবির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।

গত ৪ নভেম্বর ফের ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়িয়েছে সরকার। লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৬৫ থেকে ৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এবারও বিশ্ববাজারে তেলের বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরপর গত ১৭ নভেম্বর সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলে আমরাও কমাবো’। দুই সপ্তাহ পর গত ৪ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলে সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে

 সরকার যা করছে, তা সুস্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন। বিশ্ববাজারে তেলের দাম তো এখন সর্বনিম্ন। তাহলে দাম কমাচ্ছে না কেন? সরকার জ্বালানি তেলের মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে অর্থ লুণ্ঠন করছে বছরের পর বছর। আমরা এখন আইনের মাধ্যমেই এটি প্রমাণ করবো

এর মধ্যে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে অস্থির হয়ে ওঠে দেশের প্রতিটি খাত। দ্রব্যমূল্য নিয়ে দিশেহারা মানুষ। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে ওঠে পরিবহন সেক্টর। যার জেরে আন্দোলনও শুরু হয়।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। টানা সাত সপ্তাহ ধরে তেলের দাম নিম্নমুখী। রেকর্ড বলছে, গত ১০ বছরের মধ্যে জ্বালানি তেলের বাজারে এমন দরপতন ঘটেনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিশ্ববাজারের দামের সঙ্গে সমন্বয় করতে বাংলাদেশ সরকারের কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।

বিশ্ববাজারের তেলের এ নিম্নমুখী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের করণীয় এবং জনদায় প্রসঙ্গ নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

অধ্যাপক শামসুল আলম মনে করেন, সরকার এবার সুস্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন করে জ্বালানির দাম বাড়িয়েছে। জ্বালানি বিভাগ যেভাবে দাম বাড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার এখতিয়ার তাদের নেই। এটি আইনের মধ্যে নেই। ফৌজদারি অপরাধ করেছে তারা। জনস্বার্থের বাইরে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া মানেই ফৌজদারি অপরাধ। সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে বারবার জনগণের কাছ থেকে অর্থ লোপাট করছে। এই সিদ্ধান্ত যারা নিচ্ছেন, তারা দণ্ডনীয় অপরাধ করছেন। কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডই হতে পারে। আইনের ৪২ ধারায় তা বলা আছে। আমরা আইনের আশ্রয় নেবো।

এই বিশেষজ্ঞ মনে করেন, মূল্যবৃদ্ধির এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যে কোনো সংক্ষুব্ধ পক্ষ রিভিউ করতে পারে। শামসুল আলম বলেন, আমরাও রিভিউ চেয়েছি। অন্য আলোচনা এখন প্রাসঙ্গিক নয়। ন্যায্যমূল্য চেয়ে যে কোনো ব্যক্তি বিচার চাইতে পারেন। এই দাম তো এক ধরনের লুণ্ঠন। এই লুণ্ঠন ঠেকানো দরকার।

বামপন্থি এই রাজনীতিক মনে করেন, শতকরা ৯৯ জন মানুষকে শোষণ করতেই সরকার নানা কুযুক্তি উপস্থাপন করছে। জ্বালানির দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের যুক্তি অসার, তা প্রমাণ হয়েছে। কারণ এখনো দাম কমানো হয়নি। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার কথা বলে সরকার তখন দাম বাড়ালো। বিশ্ববাজারে এখন তো দাম কম। এখন দাম কমাচ্ছে না কেন? তার মানে সরকার জনদায় গুরুত্ব দেয় না।

বিশ্ববাজারের তুলনায় দাম বাড়ছে, সরকারের কী করার আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই আলোচনাগুলো আসলে প্রাসঙ্গিক নয়। সরকার যা করছে, তা সুস্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন। বিশ্ববাজারে তেলের দাম তো এখন সর্বনিম্ন। তাহলে দাম কমাচ্ছে না কেন? সরকার জ্বালানি তেলের মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে অর্থ লুণ্ঠন করছে বছরের পর বছর। আমরা এখন আইনের মাধ্যমেই এটি প্রমাণ করবো। একটি দেশের আইন আছে অথচ সরকারের জ্বালানি বিভাগ মানবে না, বিপিসি মানবে না, তা তো হতে পারে না। এটি একটি সভ্য জাতির আচরণ হতে পারে না।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমও একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, এই সরকার আসলে কোনো যুক্তির ধার ধারে না। সরকারের উদ্দেশ্যই হচ্ছে লুটপাট করা। সাধারণ মানুষের পকেট কেটে মুষ্টিমেয় মানুষকে ধনী করে দেওয়ার মিশনে লিপ্ত তারা। তারা সর্বত্র এমনটাই করছে, আইনের লঙ্ঘন করছে।

 

সুত্রঃ জাগো নিউজ