বিমানবন্দরে পিসিআর ল্যাবের দাবিতে প্রবাসীদের বিক্ষোভ

করোনাভাইরাসের কারণে কয়েক মাস বন্ধ রাখার পর সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ শর্তসাপেক্ষে বিদেশি কর্মীদের দেশে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। তবে কিছু নিয়ম বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যাত্রা শুরুর ৬ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরের আরটি-পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা করতে হবে। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে ৬ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু আট দিন পরও ল্যাব স্থাপন করা হয়নি।

এমন পরিস্থিতিতে পিসিআর ল্যাব দ্রুত স্থাপনের দাবিতে মঙ্গলবার সকালে প্রবাসীরা বিক্ষোভ ও আমরণ অনশন করেন। পরে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী তাদের অনশন ভাঙান।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুধু ল্যাব স্থাপনের জায়গা নির্ধারণ করা ছাড়া কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানা গেছে। এ কারণে দেশে আটকে পড়া হাজার হাজার প্রবাসী চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবিতে রাজধানীর প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ভবনের সামনে অনশনে বসেন প্রবাসীরা। পরে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ তাদের অনশন ভাঙান। মন্ত্রীর আশ্বাস পেয়ে প্রবাসীরা শান্ত হন এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি স্থগিত করেন।

আন্দোলনরত আরব আমিরাত প্রবাসী এসএম মহিউদ্দিন বেলাল  বলেন, করোনা মহামারির সময় দেশে ফিরে হাজারও প্রবাসী আটকা পড়েছেন। অনেকের ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। আবার অনেকের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। শুধু দুবাই সরকার ভিসার মেয়াদ বাড়ালেও অন্য রাজ্যগুলো ভিসার মেয়াদ বাড়ায়নি। ফলে অনেক প্রবাসীর ফিরে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এদিকে ভ্রমণের ৪৮ ঘণ্টা আগে পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি-দ্রুততম সময়ের মধ্যে যেন বিমানবন্দরে সরকারিভাবে ল্যাব স্থাপন করা হয়। তা না হলে আমাদের চাকরি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। আবার যাদের ব্যবসা রয়েছে, তারাও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন।

মহিউদ্দিন বেলাল আরও জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তান ইতোমধ্যে বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন করেছে। ওই দুই দেশের প্রবাসীরা সহজে কাজে ফিরেছেন। কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে নাইজেরিয়া, ভিয়েতনাম, জাম্বিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার প্রবাসীরা সংযুক্ত আরব আমিরাতে যেতে পারছেন। অথচ আমাদের দুর্ভাগ্য যে কাজে ফিরতে আন্দোলনে নামতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কর্মক্ষেত্রে ফিরতে না পারলে কয়েক হাজার প্রবাসী বেকার হয়ে পড়বেন। রেমিট্যান্সের ওপর প্রভাব পড়বে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশের তিনটি বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাব বসাতে হবে।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার শফিকুল ইসলাম বলেন, ১৩ বছর ধরে দুবাইয়ে অফিস ক্লার্ক হিসাবে কাজ করছি। দেশে ছুটি কাটাতে এসেছিলাম। করোনার কারণে দেশে আটকা পড়েছি। কাজে যোগ দিতে বারবার তাগাদা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু করোনা পরীক্ষা করাতে না পারায় যেতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিলেনও এখনো বিমানবন্দরে একটা আরটি-পিসিআর ল্যাবও স্থাপন করা হয়নি। এতে পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে মন্ত্রণালয়। আমরা চাকরি হারালে এর দায় কে নেবে? একই দাবিতে আগে আমরা মানববন্ধন করেছি। এখন প্রবাসীকল্যাণ ভবনের গেট অবরোধ করে আমরা অনশন করছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।

প্রবাসীরা আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তারা আমরণ অনশন চালিয়ে যাবেন। কবে নাগাদ ল্যাব স্থাপন হবে, আর কবে নাগাদ পরীক্ষা করে কর্মস্থলে যেতে পারবেন, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে তারা জানতে চান।

মিরপুরের বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন জানান, ১০ বছর ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে তিনি কাজ করছেন। তার ভিসার মেয়াদ ১৯ জুলাই শেষ হয়েছে। যে প্রতিষ্ঠানে তিনি কাজ করেন, সেখান থেকে তাকে বারবার ফোন করে কাজে যোগ দিতে বলা হচ্ছে। কিন্তু দেশে দ্রুত করোনা পরীক্ষার সুবিধা না থাকায় তিনি যেতে পারছেন না।

তিনি বলেন, দুবাইয়ের নিয়ম অনুযায়ী যাত্রা শুরুর ছয় ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরের আরটি-পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা করতে হবে, যা বাংলাদেশের কোনো বিমানবন্দরে নেই। তাই দ্রুত ল্যাব স্থাপনের দাবিতে অনশনে বসেছি।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তৌহিদ-উল আহসান বলেন, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ল্যাব স্থাপনের কাজটি হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে গুণগতমান পরীক্ষা করা হবে। এর জন্য জায়গাও নির্ধারণ করা হয়েছে। বহুতল কার পার্কিয়ে জায়গা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, যাত্রীরা পরীক্ষা করার জন্য নির্ধারিত জায়গায় যাবেন, ওখান থেকে আবার হেঁটে টার্মিনাল ভবনে প্রবেশ করবেন। যাত্রীদের আনাগোনা থাকবে, যাত্রীর চাপ থাকবে, এটা আমরা মনিটর করব। পাশাপাশি সবকিছু নিয়ম মতো হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে আমরা তদারকি করব।

 

সূত্রঃ যুগান্তর