বিদ্রোহীদের মদদদাতা এমপি-মন্ত্রীরা ছাড় পাবেন না, যাচ্ছে নোটিশ

আওয়ামী লীগের যেসব সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী বিভিন্ন নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে (বিদ্রোহী) প্রার্থী হওয়া নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করেছেন, মদদ দিয়েছেন, তাঁদের কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানো হবে। দলীয় সাংগঠনিক শৃঙ্খলা মজবুত করতে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া যেসব নেতা বিভিন্ন নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, যাঁরা বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করেছেন বা মদদ দিয়েছেন, তাঁদের কেউই ভবিষ্যতে দলে কোনো পদ পাবেন না। এমনকি ভবিষ্যতে যেকোনো নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রেও তাঁরা পিছিয়ে থাকবেন। তবে অতীতের পথ অনুসরণ করে

বিদ্রোহী ও মদদদাতাদের দলের প্রাথমিক সদস্য থেকে বহিষ্কার করা হবে না।

গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় এমন আলোচনা হয়। সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা কালের কণ্ঠকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভায় দলের সম্পাদকমণ্ডলীর বেশির ভাগ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

ক্ষমতাসীন দলটির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই তাঁরা দলকে সংগঠিত করতে চান। দলের শৃঙ্খলা শক্তিশালী করতে চান। ফলে বিগত দিনে যাঁরা বিদ্রোহীদের মদদ দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থানীয় সরকারের বেশ কিছু নির্বাচন সামনে হবে। এখন কঠোর ব্যবস্থা নিলে ভবিষ্যতে বিদ্রোহীদের মদদ দেওয়া কমে যাবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলের প্রধান শেখ হাসিনা যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সেটা বাস্তবায়ন করার বিষয়েই সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় আলোচনা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যেসব এমপি-মন্ত্রী বিদ্রোহীদের মদদ দিয়েছেন, তাঁদের কয়েকজনকে নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তাঁদের দল থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রেও তাঁদের সমস্যা হবে। মোটকথা, মদদদাতারা সমস্যায় পড়তে যাচ্ছেন।

সূত্র মতে, শিগগিরই ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে বিদ্রোহে মদদদাতা এমপি-মন্ত্রীদের কারণ দর্শানোর চিঠি পাঠানো হবে। তাঁদের জবাবের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দলীয় সূত্রগুলো জানায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সর্বশেষ সভায় পাবনা পৌরসভা নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাঁর সহযোগীদের ক্ষমা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার জোরালো সুপারিশে এই ক্ষমার সিদ্ধান্ত আসে। এ ছাড়া দেশের অন্য এলাকাগুলোতে বিদ্রোহী ও মদদদাতাদের দলের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার না করার সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্য দিয়ে দেশের অন্য এলাকাগুলোর বিদ্রোহী ও সহযোগীরা যেন উৎসাহিত না হন, সেদিকে গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, অনেকে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার ক্ষোভ থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হন। কিন্তু দেখা যায়, তিনি অনেক বছর আওয়ামী লীগ করছেন। দলে তাঁর অবদানের কথা বিবেচনা করে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার না করার নীতি নেওয়া হয়েছে।

সূত্রগুলো জানায়, সভায় জেলা-উপজেলাসহ আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সম্মেলন শুরু করার তাগিদ দেওয়া হয়। আগামী এক থেকে দুই মাসের মধ্যেই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাজ শুরুর পরামর্শ দেওয়া হয়।

সভায় সুনামগঞ্জ, ভোলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা নিয়েও আলোচনা হয়। এসব সাম্প্রদায়িক ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়। জাতীয় নির্বাচনের আগে সাম্প্রদায়িক কোনো দাঙ্গা যেন সৃষ্টি না হয়, সেদিকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার গুরুত্ব দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।

মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের অনুষ্ঠান বন্ধ করলেন কাদের

গতকাল আওয়ামী লীগ নামধারী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়েন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি সম্পাদকমণ্ডলীর সভা শুরুর আগে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি করা মঞ্চ উচ্ছেদ করেন।

পরে সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে খবর পেলাম আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে এক ভুঁইফোড় দোকান আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ প্রতিষ্ঠালগ্নের কী আয়োজন করেছে। মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের ব্যাপারে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। আওয়ামী যখন যুক্ত হয় তখন এখানে আমাদের সংশ্লিষ্টতা এসে যায়। এখানে আমাদের ভাবমূর্তির বিষয়টা এসে যায়। কারণ এসব দোকান অনেকে খুলে থাকে চাঁদাবাজির জন্য, এগুলো আসলে চাঁদাবাজির প্রতিষ্ঠান।’

তিনি বলেন, ‘সবাই করে তা না, কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, এরা চাঁদাবাজিনির্ভর। এরা দলের নাম ভাঙায়। কাজেই এসব সংগঠনের কোনো প্রকার আয়োজনে, বৈঠকে, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হোক, যেটাই হোক, আমি আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের আহ্বান জানাব, আপনারা কোনো অবস্থায়ই এসব সংগঠনের সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থিত থাকবেন না। এটা আমাদের পার্টির নীতি-কৌশলের বিরুদ্ধে।’

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ