বিদ্যুৎ বিল না দিলে গুলি করে মারার হুমকি মিয়ানমারে

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক: গত  বছরের ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের সর্বময় ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর থেকে সামরিক শাসনের প্রতিবাদে চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন মিয়ানমারের অসংখ্য মানুষ। সামরিক জান্তাকে রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত রাখতে অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ বিল দেওয়াও বন্ধ করেছেন তারা।

জনসাধারণের এসব উদ্যোগ সামরিক শাসনের পতন ঘটাতে পারবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সেনা অভ্যুত্থানের ১১ মাস পরে এসে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী টাকা আদায়ের জন্য এতটাই মরিয়া যে তারা এখন কঠোর পাওনাদারের মতো আচরণ করছে।

মিয়ানমারবাসীরা জানান, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইয়াঙ্গুন ও মান্ডালেসহ বিভিন্ন শহরে সৈন্যরা বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে হাজির হচ্ছে বিল উঠাতে। সেনাবাহিনীর এই মরিয়া আচরণের কারণও খুব সহজেই অনুমেয়। মিয়ানমারে প্রতিবাদ-ধর্মঘট ও অসহযোগ আন্দোলনকে রুখে দিতে ইতোমধ্যেই ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়েছে সেনাবাহিনী। এবার বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য হুমকিও যুক্ত হয়েছে এই তালিকায়।

অনলাইনে ভিন্টেজ জামাকাপড় বিক্রি করেন ২৪ বছর বয়সী কো সি থু অং। আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ফেব্রুয়ারি থেকে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ছিল তার। কিন্তু ক্রিসমাসের দিন সৈন্যরা এসে তার বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয়। দুদিন বিদ্যুতবিহীন থাকার পর বিল পরিশোধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না তার।

বিল পরিশোধের জন্য অপেক্ষারত আরও ৩০০ জনের লাইনে দাঁড়িয়ে অং বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকলে আমি কাজ করতে পারবো না। কিন্তু আমাদের এই টাকাই গুলি-বন্দুক কিনতে ব্যবহৃত হবে এবং তা দিয়ে আমাদেরই মারা হবে ভেবে কষ্ট লাগছে।’

সকালে মাত্র ঘুম থেকে উঠেছিলেন মিয়ানমারের স্কুল শিক্ষক দাও থিদা পিওনি, আর তখনই বাইরে চার সৈন্যের বুটের আওয়াজ। দরজায় ঠকঠক শুনে বাইরে বেরিয়ে এলেন দাও থিদা; তার বিদ্যুৎ বিল বাকি ছিল। সৈন্যরা তাকে বললো দ্রুত সরকারি বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে বিল পরিশোধ করে আসতে।

জবাবে দাও থিদা জানতে চাইলেন বিল না দিলে কী হবে? সঙ্গে সঙ্গে সৈন্যদের একজন তার দিকে বন্দুক তাক করে বললো, ‘তোমার কাছে যদি নিজের জীবনের চেয়ে টাকার মূল্য বেশি হয় তাহলে বিল দিও না!’ একথা শুনে আতঙ্কিত হয়ে ঘরের পোশাকেই বিদ্যুৎ অফিসে ছুটে যান এই শিক্ষিকা এবং বিল পরিশোধ করেন।

মিয়ানমারভিত্তিক অর্থনীতিবিদ ইউ হেইন মং বলেন, ‘গত ১০ মাসের ঘটনাবলি মিয়ানমারের গত ১০ বছরের অর্জনকে ধ্বংস করে দিয়েছে। একই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচও অনেক বেড়ে গেছে। মাদক পাচার, অবৈধ কাঠের ব্যবসা এবং অর্থ পাচারসহ নানা বেআইনি ব্যবসার প্রসার ঘটেছে।’

তিনি জানান, বিদ্যুৎ বিল আদায়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাওয়ায় সামরিক সরকারের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ আগের সরকারের চাইতে এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে।

সুত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন