বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার স্বপ্ন অমীয়’র

শফিক আজম:

অমীয় খান। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ক্লাব আয়োজিত বিজনেস প্ল্যাান প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় হতে ফাইনান্সে বিবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ে চাইনিজ গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ অর্জন করে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড বিষয়ে ২ বছর মেয়াদি মাস্টার্স প্রোগ্রামে পড়াশুনা করছে। বিদেশে পড়াশোনা করে একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠতে চান। উচ্চ শিক্ষা বিদেশ থেকে নিলেও দেশের ব্যবসা সম্প্রসারণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন তার মূল লক্ষ্য।

বিদেশে পড়াশুনার ইচ্ছাটা ছিল ছোট থেকেই। এজন্য অনেক আগে থেকেই স্কলারশিপের তথ্য সংগ্রহ করতেন। ব্যাচেলর যখন শেষের দিকে চীনে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। চীনের ঐতিহ্য তাদের কালচার এবং লাইফ স্টাইল সবার থেকে একটু ভিন্ন। চাইনিজ গভঃ স্কলারশিপের জন্য সরাসরি আবেদন করেন বেইজিং প্রদেশের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ে। ‘আবেদনের সময় থিসিসের জন্য অনেক বিষয় পছন্দ হয়ে ছিল কিন্তু সিদ্ধান্ত নেই ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড বিষয়েই পড়ব। বেশ কয়েক মাস পর মেইল খুলে দেখি তারা আমার আবেদন গ্রহন করেছে এরপর এ যাবতীয় প্রস্তুতি নিতে থাকেন। যদি বলতে হয় ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডই কেন অন্যটা কেন নয় তাহলে আমি বলব গ্লোবাল বিজনেস নিয়ে থিসিসে আমি খুব আগ্রহী আর চীন পৃথিবীর দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ এবং গ্লোবাল মার্কেট যা বলা যায় এখন চীনের দখলেই’।

এই বিষয়ের জব অপরচুনিটিও অনেক যেমন ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন, ব্যাংক , বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি এবং যে সকল কোম্পানি এক্সপোর্ট ইমপোর্টের সাথে জড়িত সেগুলোতে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়।

চীনের পরিবেশ সারাবিশ্বের অন্যান্য দেশ গুলোর থেকে অনেক ভিন্ন। প্রথম এক মাস অ্যাডজাস্ট করতে একটু সময় লেগেছিল। বাঙালিদের জন্য এমন পরিবেশে এ্যাডজাস্ট করাটা একটু কঠিন। চীনে আসার আগে রান্নাবান্না কিছুটা শিখে আসা ভালো। আমরা বাঙালিরা অনেক চটকদার খাবার খেয়ে অভ্যস্ত এজন্য প্রথমেই চাইনিজ খাবারে অভ্যস্ত হওয়া যায় না আর মুসলিমদের জন্য হালাল খাবার পাওয়াটা একটু কঠিন। তবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে হালাল ক্যান্টিন থাকে যেমন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি রয়েছে। তবে একবার অ্যাডজাস্টমেন্ট আসলে চীনের সব কিছুকে ভালবেসে ফেলবেন।

আরেকটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে ভাষাগত সমস্যা। যারা চীনে ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স ছাড়া আসে তারা অনেক সমস্যায় পরে। যেমন কোন কিছু কিনতে সুপারমার্কেটে, অথবা বাস, সাবওয়ে, ট্যাক্সি, এমনকি রেস্টুরেন্টেও ভাষাগত সমস্যার খেসারত দিতে হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে সকলের জন্য ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্সে বাধ্যতামুলক। ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি চাইনিজ ল্যাঙ্গুয়েজ জানার ফল যে কত মিষ্টি হতে পারে সেই স্বাদটি চাকরীর আবেদনের সময় পাওয়া যাবে।

‘‘চীনে আমাদের দেশের মতো কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নেই, সব সরকারি। চীনের প্রায় প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়েই রয়েছে অত্যাধুনিক লাইব্রেরি, অত্যাধুনিক রিসার্চ ইন্সটিটিউট এবং গবেষণা কেন্দ্র, ক্লাসরুম, খেলার মাঠ, অডিটোরিয়াম, ক্লাব। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয় গুলো থিওরির ক্লাসের চেয়ে প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসে অনেক বেশি মনোযোগী। পড়াশুনার মানবিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এখন অনেক এগিয়ে।’’


গত ২ ডিসেম্বর থেকে চীনের রাজধানী বেইজিং প্রদেশের ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ডংলিং স্কুল অব ইকোনোমিকস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ফ্যাকাল্টির আয়োজনে এবং ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট সেন্টারের সহযোগিতায় ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টসদের নিয়ে ইউএসটিবি ফাইনান্সিয়াল স্কিলস অ্যান্ড কেস অ্যানালাইসিস প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় ২৪ টি দেশের ১৪ টি দল অংশ নিয়েছিল। এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন অমীয়। বাকি ২ জন সদস্য ছিলেন ল্যাটিন আমেরিকান। প্রতিযোগিতায় তাদের দল দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। বেশ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত ছিল এই আয়োজন।


প্রথমেই প্রতিযোগীদের জমা দিতে হয় তাদের গ্রুপ এবং কেস কোম্পানির নাম। প্রতিটি গ্রুপেছিল ৩ জন করে সদস্য। এরপরই শুরু হয় রিপোর্ট প্রস্তুুতের কাজ কোম্পানির ইনকাম স্টেটমেন্ট ও উধৃর্তপত্র থেকে রেশিও এবং প্রফরমা অ্যানালাইসিস, ক্যাশ ফ্লো গণনা, কোম্পানির দায় এবং ইকুইটির পরিমাণ নির্ণয় করা ছাড়াও কোম্পানির শেয়ারের মান-নির্ণয় করে দিতে হয় জমা। এই রিপোর্ট গুলো পর্যবেক্ষণ করে ফাইনান্সের বিশেষজ্ঞ বিচারকবৃন্দ এবং নির্বাচন করা হয় ৬টি দল। ২২ তারিখে ডংলিং স্কুল অব ইকোনোমিকস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের অডিটোরিয়ামে নির্বাচিত দল গুলোকে দিতে হয় তাদের কেশওয়ার্কের ফাইনাল প্রেজেন্টেশন। প্রেজেন্টেশনটি স্কোরিং করা হয় পারফর্মেন্স, স্লাইড ডিজাইন, এটাইয়ার, সময়সীমা ও প্রশ্ন উত্তরের উপর ভিত্তিকরে। প্রতিটি দল প্রেজেন্টেশনের জন্য সময়পাই ১০ মিনিট এবং প্রশ্ন উত্তর পর্বের জন্য ৫ মিনিট।

‘আমি মনে করি এমন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করে অভিজ্ঞতা গুলোর ভেতরে সব থেকে বড় অর্জন আমি আরো সক্রিয় হয়েছি এবং আগামীতে নতুন এবং চ্যালেঞ্জিং কেস ওয়ার্ক করতে আমি প্রস্তুত। আমি বিশ্বাস করি এই অভিজ্ঞতা সামনের দিনে অবশ্যই প্রথম স্থানেই নিয়ে যাবে’।


সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন তার। দেশীয় অর্থনীতিকে আরও বেগবান করতে বিদেশের উচ্চ শিক্ষাকে কাজে লাগানো তার লক্ষ্য। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে উন্নত করে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে তুলে ধরার ইচ্ছে ।

‘আমার স্বপ্ন রয়েছে উদ্যোক্তা হবার । উচ্চ শিক্ষাবিদেশ থেকে নিলেও দেশের ব্যাবসা সম্প্রসারণ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন আমার মূল লক্ষ্য। চীনের গার্মেন্টসের পরেই বাংলাদেশের গার্মেন্টসের অবস্থান। ইচ্ছে রয়েছে বাংলাদেশের গার্মেন্টসের অবস্থানকে প্রথম স্থানে নিয়ে আসার। যে সকল দেশে বাংলাদেশের মার্কেট এখনও ক্রিয়েট হয়নি সেগুলো দেশে নতুন মার্কেট ক্রিয়েট করার এবং গার্মেন্টস ছাড়াও আমাদের অন্য নিজস্ব প্রোডাক্ট গুলো বিশ্বের বুকে ছড়িয়ে দিয়ে বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে তুলে ধরার। আর অবশ্যই আমার বাকি সময়টুকু আমাদের সমাজের মানুষের জীবনের মান উন্নয়নে কাজ করতে চাই।

স/শ