বিদেশফেরত নারী শ্রমিকদের পুনর্বাসনের পরামর্শ

পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়ে নারী শ্রমিকরা বিদেশে গেলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যে অধিকাংশের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। তাদের ওপর নেমে আসে নানা রকম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরেও নানা রকম হয়রানির শিকার হতে হয় এসব নারী শ্রমিকদের। তাই বিদেশফেরত নারী শ্রমিকের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পুনর্বাসনের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা।

আজ রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস্) আয়োজিত ‘দেশে ফিরে আসা অভিবাসী নারী শ্রমিকদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা ও উন্নয়নে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ আহ্বান জানান।

বিলস্ উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য শাহ্ মোহাম্মদ আবু জাফরের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খানের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শামসুন্নাহার ভূঁইয়া।

বিলস্ পরিচালিত গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বিলস্ উপপরিচালক (গবেষণা) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়ে নারী শ্রমিকরা বিদেশে গেলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যে অধিকাংশের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়। তাদের ওপর নেমে আসে নানা রকম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, যেমন নামমাত্র খাবার, অতিরিক্ত কাজের চাপ, নিয়মিত মারধর, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ইত্যাদি।

নির্যাতনের শিকার নারী শ্রমিকেদের অধিকাংশই একেবারে খালি হাতে ফেরেন। অনেকে ফিরছেন মানসিক রোগী হয়ে, আবার অনেকে ফিরছেন শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে। প্রবাসী নারী শ্রমিক ইস্যুতে সামাজিকভাবে একটি নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। ফলে দেশে ফিরে আসার পর, নির্যাতিত হোক আর না হোক, প্রত্যেক অভিবাসী নারী শ্রমিককে সমাজে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। সামাজিক ও পারিবারিকভাবে তাদের হেয় হতে হয়, অনেকের সংসার ভেঙে যায়। এই পরিস্থিতি দেশে ফিরে আসা একজন নারী শ্রমিকের জন্য খুবই পীড়াদায়ক। ফলে তাদেরকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে হয়।

বৈঠকে বক্তারা বলেন, প্রত্যাবাসী নারী শ্রমিকের ক্ষেত্রে বিশেষ লক্ষ দেওয়া প্রয়োজন। বিদেশফেরত নারী শ্রমিকদের প্রকৃত তথ্য এবং এর ধারাবাহিক পর্যালোচনা করা দরকার। এ সময় বক্তারা প্রত্যাবাসী নারী অভিবাসন শ্রমিকদের জন্য উপযুক্ত সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থা করা, উপযুক্ত দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর জোর দেওয়া, সহজ শর্তে ঋণের পাশাপাশি উপযুক্ত বাণিজ্যিক পরামর্শ দেওয়া, মনো-সামাজিক পরামর্শসহ উপযুক্ত স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদান, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মতো প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা মন্ত্রণালয়সহ অন্য দপ্তরগুলোর শ্রমিক নিবন্ধন, সচেতনতা বৃদ্ধি ও পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ায় ট্রেড ইউনিয়নে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ