বিজেপির আমলে এমন রায়ে অবাক হইনি

যে বিজেপি সরকার ধর্মকে আশ্রয় করে রাজনীতি করছে এবং গোটা অঞ্চলে অশান্তি উসকে দিচ্ছে, সেই সরকারের কাছে বাবরি মসজিদ ভাঙার মামলার রায়ে আসামিরা খালাস পাবে সেটাই স্বাভাবিক। বরং আসামিরা কোনো না কোনোভাবে রাষ্ট্র, সরকারের কাছ থেকে পুরস্কৃত হবেন, আর এতে আমি অবাক হবো না। তবে বাবরি মসজিদ ভাঙার মামলায় এই রায় রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের যে কাঠামো ছিল, তাকে দুর্বল করে দিলো।

অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় ঘোষিত রায়ের এমন বিশ্লেষণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এবং বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের। আজ বুধবার (৩০ সেপ্টম্বর) বহুল আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণার পর জাগো নিউজের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি।

রায়ে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও শীর্ষনেতা লালকৃষ্ণ আদবাণী, মুরালি মনোহর যোশী ও উমা ভারতীসহ ৩২ আসামির সবাইকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

২৮ বছর আগে ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদে হামলা চালিয়ে ঐতিহাসিক এ মুসলিম স্থাপনাকে গুঁড়িয়ে দেয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে বিশেষ আদালত বলেন, মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত ছিল না।

এ প্রসঙ্গে ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ভারতের গণতান্ত্রিক একটি কাঠামো ছিল। এ নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি আশার আলো ছিল। কিন্তু নরেন্দ্র মোদির সরকার ক্ষমতায় এসে সেই কাঠামো ভেঙে দিয়েছে, যার প্রভাব আমরা আদালতেও প্রত্যক্ষ করছি।

এর আগে রামের জন্মভূমি নিয়ে আদালত যে রায় দিয়েছিলেন, তাও বিতর্কিত এবং ওই রায় থেকেই বাবরি মসজিদ ভাঙার মামলার রায় সম্পর্কে ধারণা করা যাচ্ছিল। বিজেপি সরকার ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের যেভাবে বীজ বপণ করে চলছে, তাতে এই রায়ে আমি অবাক হইনি। এই রায় সত্যিকার অর্থে কোনো সমাধান দিতে পারলো না। বরং মৌলবাদীদের আরও উৎসাহ দেবে। মৌলবাদী শক্তি আরও শক্তিশালী হওয়ার এক ধরনের বার্তা পেলো।

এই আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক বলেন, বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনাকে নিছক ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে ভুল হবে। ভারত রাষ্ট্রটি ক্রমাগতভাবে সহিংস রাজনীতিতে ভর করছে। আর এমন রাজনীতিতে ধর্মের রং আবশ্যক হয়ে পড়ে। বাবরি মসজিদ ভাঙা ছিল রাজনৈতিক হাতিয়ারকে শক্তিশালী করা। আর এর সুফল ভোগ করছে আজকের বিজেপি সরকার।

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ১৯৯২ সালের ওই ঘটনা কিন্তু গোটা দক্ষিণ এশিয়াকে প্রভাবিত করেছে। বাংলাদেশেও সহিংস প্রতিবাদ হয়েছিল। আজকে যে রায় ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে মুসলমানদের মনে অবশ্যই রেখাপাত করেছে। এরও তো প্রভাব আছে। ভ্রাতৃত্ববোধের প্রশ্নে আদালতের যে ভূমিকা রাখার কথা, তা রাখতে পারেননি। মোট কথা সমাধান না করে সমস্যাকে উসকে দেয়া হলো।

 

সূত্রঃ জাগো নিউজ