বিচার চাইতে গেল শিক্ষার্থীরা, ব্যানার কেড়ে নিলেন ইউএনও

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

পাবনার সাঁথিয়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যানার নিয়ে মিছিল করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস চত্বরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুব্ধ ইউএনও বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের হাত থেকে ব্যানার কেড়ে নিলেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জামাল আহমেদ পদাধিকার বলে সরকারি এই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি।   শিক্ষার্থীরা তাঁর কাছে গিয়েছিল স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিজয় কুমার দেবনাথ ও অপর একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও চরিত্রহীনতার অভিযোগের বিচার চাইতে।

বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে আপত্তিকর প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

গত ১৭ মে মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরদিন বুধবার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষার্থীদের প্রধান শিক্ষকের পক্ষ নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের শাসিয়ে যান। ১৯ মে বৃহস্পতিববার বেলা ১১টায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা স্কুলটির প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবি করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে। ২১ মে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ছাত্র-ছার্ত্রীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে যায় বিচার চাইতে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসের সামনে কয়েক শ ছাত্র-ছাত্রী বিক্ষোভ করতে থাকে অভিযোগকৃত দুজন শিক্ষকের (বিজয় কুমার দেবনাথ বাবুল পাল) বিচার চেয়ে স্লোগান দেয়। তাদের হাতে ব্যানার ছিল। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জামাল আহমেদ ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগ না শুনে অফিস থেকে বের হয়ে নিজেই ব্যানারটি কেড়ে নেন।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কল্যাণ ট্রাস্ট্রের আড়াই লাখ টাকাসহ বিভিন্ন খাতের বিপুল অর্থ আত্মসাত অভিযোগসহ নিজে প্রধান শিক্ষক হয়েও তিনি শিক্ষার্থীদের চাপ সৃষ্টি করে তার কাছে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করেন। প্রতিবছর একাধিকবার তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্তি অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। শিক্ষার্থীরা প্রতিবছরই তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, মানববন্ধন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রতিকার চায়। মাঝেমধ্যে তদন্তও হয়। কমিটি তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে বোর্ড ও অধিদপ্তরে পত্র পাঠায়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপই নেওয়া হয় না।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রধান শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়লে খারাপ আচরণ করে, ভয়ভীতি দেখায়। প্রধান শিক্ষক কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এককভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা করছেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে মাত্রাতিরিক্ত টাকা আদায় করে আত্মসাত করছেন।

তারা জানায়, গত ২০১৮ সালে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটি তাঁকে পদচ্যুত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর পত্র দিয়েছিল। কিন্তু অদৃশ্য কারণে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।

বিদ্যালয়টির সাবেক প্রধান শিক্ষক হাফিজুল কবীর জানান, আমি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কল্যাণ ট্রাস্টের ফান্ডে আড়াই লাখ টাকা রেখে এসেছিলাম। আমি চলে আসার পর আর কোনো শিক্ষার্থীকে এ খাত থেকে সুবিধা দেওয়া হয়নি।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, বিপুলপরিমাণ টাকা তিনি অত্মসাত করেছেন। প্রধান শিক্ষক বিজয় কুমার দেবনাথের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

স্কুলটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জামাল আহমেদ জানান, তাদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তসাপেক্ষে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ব্যানার কেড়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, শিক্ষার্থীদের শান্ত করে ক্লাসে ফেরানোর জন্যই মূলত তিনি ব্যানার কেড়ে নিয়ে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের শান্ত করেন; অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ