সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়েও না পাওয়া বিএনপি বিকল্প জায়গার জন্য আবেদন করবে।
‘সরকার গণতন্ত্র ও ভিন্নমতে বিশ্বাস করে না বলেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি’- উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এর থেকে আবার প্রমাণিত হলো সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। ভিন্নমতে বিশ্বাস করে না। এই নিষেধাজ্ঞা জারির মধ্য দিয়ে তারা তাদের স্বরূপ উন্মোচিত করেছে। এবং এর মধ্য দিয়ে তারা একদলীয় সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চাচ্ছে তারই প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
‘আমরা অবশ্যই এর বিকল্প জায়গাও চাইব। আমরা আশা করব, আমরা সেখানে সভা করার অনুমতি পাব’, বলেন মির্জা ফখরুল।
আজ শুক্রবার জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। এদিন দুপুরে স্বেচ্ছাসেবক দলের নবগঠিত কমিটির নেতাদের শ্রদ্ধা নিবেদনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জড়ো হন হাজারো নেতাকর্মী।
‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ পালন করার জন্য আগামী ৭ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছিল বিএনপি। তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদীও ছিলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া গণমাধ্যমকে জানান, আগামী ৭ ও ৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে না পুলিশ। একই সময়ে একাধিক দল ওই এলাকায় সমাবেশ করার অনুমতি চাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কার্যত পুলিশের এই বক্তব্যের মাধ্যমে বিএনপির সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পাওয়ার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। যদিও এর আগেই আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছিলেন, ৭ নভেম্বর পালনের ক্ষেত্রে বিএনপিকে প্রতিহত করা হবে। একই সঙ্গে সরকারের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলও (জাসদ-ইনু) ‘সিপাহী-জনতা বিপ্লব দিবস’ উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বরাদ্দ চেয়ে ডিএমপিকে চিঠি দিয়েছিল।
এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই আজ বিকল্প জায়গার কথা জানালেন বিএনপি মহাসচিব। এ সময় তিনি সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ করেন। একে ‘পরিকল্পিত’ অভিযোগ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলন তিনি।
গত ২৮ অক্টোবর (শুক্রবার) নাসিরনগর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের রসরাজ দাস নামের এক যুবক পবিত্র কাবাঘরের ছবি সম্পাদনা করে ফেসবুকে পোস্ট করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এরপর স্থানীয় লোকজন তাঁকে পুলিশে সোপর্দ করে। এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে শনিবার দিনভর নাসিরনগর সদর উত্তাল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় পরদিন রোববার উপজেলা সদরের কলেজ মোড়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। সমাবেশ চলাকালে সদরের কয়েকটি মন্দির ও হিন্দুদের বাড়িতে হামলা হয়।
ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কাজল দত্ত ও নির্মল দত্ত বাদী হয়ে গত সোমবার নাসিরনগর থানায় দুটি মামলা করেন। স্থানীয় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও পুলিশ সদর দপ্তরের উদ্যোগে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাদেরকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ঘটনার তিনদিন পর এলাকায় যান স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক। চারদিনের মাথায় গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতেই নাসিরনগর উপজেলার পশ্চিমপাড়ার দুটি ঘর ও দক্ষিণপাড়ার তিনটি ঘরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। রাত আড়াইটা থেকে ৩টার দিকে দুটি পাড়ার গোয়ালঘর ও রান্নাঘরে আগুন দেয় দুবৃর্ত্তরা। তবে এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
আজ শুক্রবার বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ আহমেদ বীর বিক্রমের নেতৃত্বাধীন আট সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নাসিরনগরের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে। প্রতিনিধিদল এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে। এর আগে কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদও একই দাবি জানিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বাংলাদেশে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আছে, তাকে বিনষ্ট করা। সেই সঙ্গে একটি মহল যারা বাংলাদেশে সমস্যা তৈরি করতে চায়, এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে জনগণের যে মূল দাবি গণতন্ত্রের দাবি, তার থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে চায়। তারা এই ধরনের হীন কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত হয়েছে।’
‘প্রশাসনের মানুষেরা যে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল, সেই ব্যবস্থা তারা নেয়নি’ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, ‘সরকার যেহেতু একদলীয় শাসনব্যবস্থার দিকে এগিয়ে চলেছে এবং জনগণের অধিকারগুলো কেড়ে নিচ্ছে, সেই ক্ষেত্রে এই অবস্থাই স্বাভাবিক।’
‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তীব্রভাবে নিজের দিকে নেমেছে। এবং মানুষের সমস্যার সমাধান না করে তারা এখন রাজনৈতিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে। যার ফলশ্রুতিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই ধরনের ঘটনাগুলো ঘটছে’, যোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
নাসিরনগরের ঘটনার সু্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের শাস্তির দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।