বিএনপি কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে

১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বক্তব্য বিএনপির এখন অনেকটাই গা-সওয়া হয়ে গেছে। এ নিয়ে তাঁরা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও বিষয়টি সিরিয়াসলি নিচ্ছে না বিএনপি। বরং এই প্রথম ১৫ আগস্টের ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও জাসদ নেতাদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী এবং অন্য নেতারা বক্তব্য দেওয়ায় বিএনপি কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে। এবারই প্রথম বিএনপির বাইরে আওয়ামী লীগ এবং মহাজোটের শরিক জাসদ নেতাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য এসেছে। ফলে এতে বিএনপির কিছুটা দায় কমেছে বলে দলটির নেতারা মনে করছেন।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট নিয়ে আমাদের নতুন করে কিছু বলার নেই।’

তিনি বলেন, ২১ আগস্টের ঘটনাটি ছিল একটা চক্রান্ত। মুক্তিযুদ্ধের দল বিএনপি, এমন দল কখনোই এ ধরনের ঘটনা সমর্থন করতে পারে না। আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থা এফবিআই, ইন্টারপোলকে তদন্তে সহযোগিতা করেনি। আর যারা সহযোগিতা করেনি, তারাই ইতিহাস বিকৃত করছে। ২১ আগস্টের মামলার ফরমায়েশি বিচার হয়েছে, সুবিচার হয়নি। সুবিচার হওয়ার কথা না আজকে এই স্বৈরাচার সরকারের সময়ে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন? এই চক্রান্ত হচ্ছে জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। কারা করেছে? যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন চায় না।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘প্রতিবছর আগস্ট মাস এলেই আমরা নতুন নতুন কথা শুনি। জিয়াউর রহমানকে নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে একতরফাভাবে চলছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি না।’ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে হাস্যকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, এভাবে বক্তব্য দিয়ে ইতিহাসকে পাল্টানো যায় না। ইতিহাস তার নিজের গতিতেই চলবে।

ফখরুল বলেন, ২১ আগস্ট যে একটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের প্রথম সোপান ছিল। প্রকৃতপক্ষে ২১ আগস্ট একটি সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত বাংলাদেশকে আবার গণতন্ত্রহীন করার জন্য, বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নগুলোকে ভেঙে চুরমার করে দেওয়ার জন্য, বাংলাদেশ যে একটি সত্যিকার অর্থে সুখী-সমৃদ্ধ রাষ্ট্র নির্মিত হবে, সেই স্বপ্নকে পুরোপুরি ভেঙে দেওয়ার জন্য ২১ আগস্ট।

বিএনপি মনে করে, আগস্ট মাস এলে জিয়াউর রহমান ও বিএনপির বিরুদ্ধে বক্তব্য আসবে সেটি জানা কথা। তাই বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নেওয়ার কিছু নেই। বরং গত ২৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আওয়ামী লীগের নেতাদের ভূমিকা এবং জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু ও কর্নেল তাহের এসব ঘটনায় জড়িত বলে আওয়ামী লীগের নেতা শেখ সেলিমের দেওয়া বক্তব্যে বিএনপি খুশি।

এ বিষয়ে গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য বিএনপিকে সুবিধা করে দিয়েছে। এই প্রথম বিএনপির বাইরে সরকারের নেতারা নিজ দল ও জাসদের নেতাদের দায়ী করেছেন। ফলে বিএনপির দায় কিছুটা হলেও কমবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জ্ঞানচক্ষু খুলে গেছে। সাহসের সঙ্গে, সততার সঙ্গে উনি নিজের দলের দিকে তাকাতে পেরেছেন; উনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর বাড়ি যখন আক্রান্ত হয়েছিল তখন বঙ্গবন্ধু ফোন করেছিলেন তাঁর দলের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে। ফোন করেছিলেন তোফায়েল আহমেদকে, আব্দুল রাজ্জাককে, সেনাপ্রধান সফিউল্লাসহ আরো অনেককে। উনি ফোন করে বলেছিলেন, আমার এখানে আসো, কী হচ্ছে তোমরা দেখ। প্রধানমন্ত্রী আপনি তো বললেন না উনি (বঙ্গবন্ধু) জিয়াউর রহমানকে কেন ফোন করেননি। জেনারেল ওসমানী, বিডিআর প্রধান জেনারেল খলিল, খালেদ মোশাররফ, তাজউদ্দীন, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে কেন ফোন করেননি। উনি কি বিব্রত বোধ করছিলেন?

উল্লেখ্য, জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের দোসর, স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন, তিনি যুদ্ধ করেননি—এ ধরনের অভিযোগ আওয়ামী লীগ বেশ কয়েক বছর ধরেই করে আসছে। শেরেবাংলানগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতার কবর নেই, এ কথা বলে বহুবার সেটি সরানোর উদ্যোগ নিয়েও বাস্তবায়ন করেনি আওয়ামী লীগ সরকার। জিয়ার কবরে লাশ নেই, আগস্ট মাস এলেই আওয়ামী লীগের তরফ থেকে আসে। বিএনপিও এর জবাব দেয়। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ