বিএনপি ও বামপন্থি কাউন্সিলররা নৌকার প্রচারণায়

নাসিক নির্বাচনে বিএনপিপন্থি কাউন্সিলররা নৌকার ভোট চাইতে মাঠে নামায় একই সঙ্গে সরকারি দল ও বিএনপির মধ্যে চলছে তুমুল গৃহদাহ।

অনেক ওয়ার্ডে সরকারি দলের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর নৌকার প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে একপাশে আওয়ামী লীগপন্থি কাউন্সিলর প্রার্থী আর অপর পাশে বিএনপিপন্থি কাউন্সিলর প্রার্থীকেও।

ফলে এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভীর সঙ্গে সরকারের কট্টর সমালোচনাকারী গণসংহতি আন্দোলন ও বাসদের ২ কাউন্সিলর প্রার্থীও নৌকার প্রচারণায় ছিলেন। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সমর্থকদের মাঝেও চলছে ক্ষোভের বাতাস।

সরেজমিন জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের বিএনপিদলীয় সাবেক এমপি মু. গিয়াস উদ্দিন ও তার ছেলে ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ সাদরিল সরাসরি নৌকা প্রতীকের ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন প্রকাশ্যে না আসলেও তার ছেলের পক্ষে ভোট চাওয়ার পাশাপাশি নৌকার প্রার্থী আইভীর জন্য ভোট চাইছেন বলে বহু নাগরিক স্বীকার করেছেন।

ইতোমধ্যেই আইভী সিদ্ধিরগঞ্জে প্রচারণা চালানোর সময় বর্তমান কাউন্সিলর ও পুনরায় প্রার্থী হওয়া সাদরিল নৌকার প্রচারণায় ছিলেন এবং ভোট চেয়েছেন আইভীর পক্ষে।

সিদ্ধিরগঞ্জের ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিএনপি নেতা ইকবাল হোসেনও নৌকার প্রচারণায় ছিলেন আইভীর সঙ্গেই। তিনিও এবার কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। সম্প্রতি হেফাজতের মামলা জেল থেকে মুক্ত হয়েছেন ইকবাল ও সাদরিল উভয়েই।

এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ শহরে আইভীর গণসংযোগের পুরোটা সময় তার সঙ্গে নৌকার ভোট চেয়েছেন বাসদের নেতা ও বর্তমান কাউন্সিলর (১৫নং ওয়ার্ড) অসিত বরণ বিশ্বাস এবং গণসংহতি আন্দোলনের নারী কাউন্সিলর প্রার্থী পপী রানী সরকার।

এদিকে বন্দর এলাকায় নৌকার প্রচারণায় আইভীর সঙ্গে নৌকার ভোট চেয়ে গণসংযোগে অংশ নিয়েছিলেন ২২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপি নেতা সুলতান আহমেদ ও ২১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও বিএনপি নেতা হান্নান সরকার, ২০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম নবী মুরাদ।

এদিকে এ নিয়ে আওয়ামী লীগদলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী ও স্থানীয় কর্মীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।

২২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা খান মাসুদ জানান, ২০০১ সালের পর এই হান্নান ও সুলতানের কারণে আমরা বাড়িতে থাকতে পারিনি। আমরা নৌকার জন্য দিনরাত এক করছি আর বিএনপির কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে আমাদের নৌকার প্রার্থী প্রচারণা চালাচ্ছেন। সেখানে আওয়ামী লীগপন্থি কাউন্সিলর প্রার্থীদের ডাকও দিচ্ছে না কেউ। বিচার দেওয়ার জায়গা নেই তাই নিজের মনে নিজেকেই অভিশাপ দিচ্ছেন কর্মীরা।

সিদ্ধিরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, বিএনপির সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন আর তার ক্যাডারদের অত্যাচারে আমরা ৫ বছর বাড়ি ও এলাকা ছাড়া ছিলাম। সেই গিয়াসের কর্মীরা যখন নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে ঘুরে, গিয়াসের ছেলে নৌকার ভোট চেয়ে আমাদের প্রার্থীর পাশে বসে ঘুরে তখন রক্তক্ষরণ হয় হৃদয়ে।

কর্মীরা বলেন, হেফাজত আর বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও ঠেকাতে আমরা মাঠে থাকি আর সেই মামলার আসামি ইকবাল জেলে থাকাবস্থায় আমাদের প্রার্থী বলেন, ইকবাল এমন কাজ করেছে বলে তিনি বিশ্বাস করেন না। সেই ইকবাল তার সঙ্গে নৌকার প্রচারণা করেন।

অপরদিকে ক্ষোভের আগুন শুধু আওয়ামী লীগে নয়, বিএনপিতেও জ্বলছে। বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমুরের পাশে না থেকে নৌকার প্রার্থীর পাশে থাকায় ক্ষুব্ধ কর্মীরা জানান, দল নির্বাচনে যাচ্ছে না বলে তৈমুরের পাশে থাকেন না- এরা কিন্তু প্রতিপক্ষ দলের প্রচারণায় থাকেন। তারা বলেন, কাউয়া আর হাইব্রিড বিএনপিতেও আছে।

 

সূত্রঃ যুগান্তর