বিএনপির সময়ে বিদ্যুৎ কখন আসবে তার নিশ্চয়তা ছিল না : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের সরকার হিসেবে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য বলেই আমি মনে করি। গত একযুগে আমরা জনগণের জন্য কী করেছি, তা মূল্যায়নের ভার আপনাদের। আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে- সে রকম কয়েকটি খাতের কথা সংক্ষেপে তুলে ধরছি।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আমাদের সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির কথা একবার স্মরণ করুন। কী দুঃসহ পরিস্থিতি ছিল সে সময়। বিদ্যুৎ কখন আসবে আর কখন যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। আমরা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বল্প, মধ্যম এবং দীর্ঘ-মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে আজ বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন করেছি।

২০০৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত প্রায় ১৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। বর্তমানে দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৪২১ মেগাওয়াটে। বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ২০০৫-০৬ সালের ৪৭ শতাংশ থেকে বর্তমানে ৯৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পায়রাতে ইতোমধ্যে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের গ্রামগুলি বরাবরই উন্নয়ন ভাবনার বাইরে ছিল। আমরাই প্রথম গ্রামোন্নয়নকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করি। ২০১৮ সালে আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বিষটি অন্তর্ভুক্ত করে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের অঙ্গীকার করি। আজ দেশের প্রায় সকল গ্রামে পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত পল্লি এলাকায় ৬৩ হাজার ৬৫৫ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন, ৩ লাখ ৭৬ হাজার ব্রিজ-কার্লভার্ট, ১ হাজার ৬৮৫টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, ৯৩৬ টি সাইক্লোন সেন্টার এবং ২৪৯টি উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, রামপাল, পায়রা, বাঁশখালী, মহেষখালী এবং মাতারবাড়িতে আরো মোট ৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট শক্তিসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে। মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হবে। সব ঘর আলোকিত হবে। ২০০৯ সালে জাতীয় গ্রিডে ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো বর্তমানে যা ২ হাজার ৫২৫ মিলিয়ন ঘনফুটে দাঁড়িয়েছে। গ্যাসের অব্যাহত চাহিদা মেটাতে ২০১৮ থেকে তরলীকৃত গ্যাস আমদানি করা হচ্ছে।

দেশ আজ খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ং-সম্পূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনে ৪র্থ থেকে ৩র্থ স্থান উন্নীত হয়েছে। অব্যাহত নীতি সহায়তা ও প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে এই বিপ্লব সাধিত হয়েছে। শুধু ২০১৯-২০ বছরে কৃষিখাতে ৭ হাজার ১৮৮ কোটিরও বেশি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। মাছ-মাংস, ডিম, শাকসবজি উৎপাদনেও বাংলাদেশ স্বয়ং-সম্পূর্ণ। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে এবং ইলিশ উৎপাদনকারী ১১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম।

তিনি উল্লেখ করেন, ২০০৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ৪৫৩ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক ৪ বা তদুর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। আরো ৬৬১ কিলোমিটার মহাসড়ক চার এবং তদুর্ধ্ব লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। ঢাকায় বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ৪৬.৭৩ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ ২০২৩ সাল নাগাদ শেষ হবে। ২০০৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৪৫১ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ এবং ১ হাজার ১৮১ কিলোমিটার রেলপথ পুনর্বাসন করা হয়েছে। ৪২৮টি নতুন রেলসেতু নির্মাণ করা হয়েছে। কিছুদিন আগে আমরা যমুনা নদীর উপর ৪.৮ কিলোমটির দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। লোকোমোটিভ যাত্রীবাহী ক্যারেজ এবং মালবাহী ওয়াগন সংগ্রহ করা হয়েছে ১ হাজার ৪০টি। এ সময় বাংলাদেশ রেলওয়েতে ১৩৭টি নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের বিমানবহরে ১২টি নতুন অত্যাধুনিক বোয়িং এবং ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ সংযোজিত হয়েছে। গত মাসে ১টি ড্যাশ-৮-৪০০ উড়োজাহাজ সংযোজিত হয়েছে। চলতি মাসে আরও ২টি ড্যাশ-৮-৪০০ উড়োজাহাজ সংযোজিত হবে। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশের ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। সারা দেশে সাড়ে ১৮ হাজার কমু্যুনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র হতে গ্রামীণ নারী-শিশুসহ সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়। আমাদের স্বাস্থ্যসেবার সম্প্রসারণ এবং গুণগত মানোন্নয়নের ফলে মানুষের গড় আয়ু ২০১৯-২০ বছরে ৭২.৬ বছরে উন্নীত হয়েছে। ৫-বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৮ ও অনুর্ধ্ব ১ বছর বয়সী শিশু মৃত্যুর হার ১৫-তে হ্রাস পেয়েছে। মাতৃমৃত্যু হার কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি লাখে ১৬৫ জনে বলেও জানান তিনি।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ