মঙ্গলবার , ২৬ জুলাই ২০১৬ | ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

বিএনপির ‘বৃহত্তর ঐক্য’ থেকে বাদ জামায়াত!

Paris
জুলাই ২৬, ২০১৬ ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

প্রায় ১৭ বছরের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতকে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য থেকে দূরে রাখার কৌশল নিয়েছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত এ দলকে বাদ দিয়েই সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় ঐক্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয়তাবাদী দলটি। আজ-কালের মধ্যেই এ লক্ষ্যে সমমনা দলগুলোকে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাঁর গুলশানের বাসায় চা-চক্রে আমন্ত্রণ জানাবেন। ওই আমন্ত্রণের তালিকায় প্রধান শরিক জামায়াতকে রাখা হবে না বলেই জানা গেছে।

যদিও জামায়াতকে বাদ দিয়ে বিএনপি কী পাবে—এ প্রশ্নও দলের মধ্যে ঘুরেফিরে উঠছে। বলা হচ্ছে, এক দল বাদ দিয়ে ১০ দল পাওয়া গেলে ভালো। কিন্তু কেউ না এলে সঙ্গে থাকা দলকে রুষ্ট করে লাভ নেই।

পাশাপাশি তারেক রহমানের পর খালেদা জিয়ার সাজা হতে পারে—এমনটি ধরে নিয়েও আপাতত বড় ধরনের আন্দোলনে যাচ্ছে না বিএনপি। বরং সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় ঐক্য নিয়ে কাজ শুরু এবং শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে দল গোছানোর প্রক্রিয়া; এই দুই ইস্যুতে দলটি ব্যস্ত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ‘সাজা’ ইস্যুতে ছোটখাটো কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে।

নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছে, চলতি মাসের মধ্যেই স্থায়ী কমিটিসহ নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে দলের সিনিয়র নেতাদের জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। সমর্থক প্রবীণ বুদ্ধিজীবীদের প্রশ্নের জবাবেও তিনি এমন আভাস দিয়েছেন।

সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় ঐক্য ছাড়াও বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াতই বড় বাধা বলে সরকারের বাইরে থাকা বিভিন্ন প্রগতিশীল দল বরাবর বলে আসছে। ফলে এবার কৌশলগতভাবে জামায়াতকে দূরে রেখে বৃহত্তর ঐক্য করার উদ্যোগ নিচ্ছে দলটি। গত রবিবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে অনুুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

খালেদা জিয়া ছাড়াও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ এবং গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

জানতে চাইলে তাঁরা তিনজনই বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে দু-এক দিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে। খালেদা জিয়া তাঁর বাসায় সমমনা বিভিন্ন দলকে আপাতত চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানাবেন। এরপর প্রয়োজন হলে সব রাজনৈতিক দলকে চিঠিও দেওয়া হবে। সে সময় আওয়ামী লীগের প্রশ্ন উঠবে; কিন্তু এর আগে চা-চক্রে আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানানো হবে না।

খালেদা জিয়ার প্রস্তাবিত জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি তৎপর ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গত এক সপ্তাহে সিপিবি, বাসদ, জেএসডি, গণফোরাম ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সর্বশেষ গত রবিবার তিনি গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে তাঁর বাসায় এবং আগের দিন শনিবার জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের সঙ্গে কথা বলেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি বৈঠকেই জামায়াতের প্রসঙ্গ এসেছে। দলগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জামায়াত থাকলে বিএনপির সঙ্গে কথা বলাও সম্ভব নয়। বিকল্পধারার সভাপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও তাঁর ছেলে দলের মুখপাত্র মাহী বি চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। আগামী ৯ আগস্ট তাঁদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

সূত্র মতে, খালেদা জিয়ার আনুষ্ঠানিক দাওয়াতের প্রাক-প্রস্তুতি বা গ্রাউন্ড ওয়ার্ক হিসেবে ডা. জাফরুল্লাহ একাই ওই দলগুলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। যার ফলাফলের ভিত্তিতে আলোচনা করে জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। অবশ্য জামায়াতকে দূরে রাখার ব্যাপারে বিএনপির কৌশল বা প্রক্রিয়া প্রগতিশীল দলগুলোর মনঃপূত হয়নি। এসব দলের নেতাদের মনোভাব হলো, বিএনপি অন্তর থেকে বা রাজনৈতিকভাবে জামায়াতকে ছাড়তে এখনো রাজি নয়।

সূত্র জানায়, বিএনপিপন্থী দুই বুদ্ধিজীবী ও মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকে দলের আটকে থাকা কমিটি নিয়ে কথা উঠলে খালেদা জিয়া বলেন, এ সমস্যা চলতি মাসের মধ্যেই কেটে যাবে। তারেকের পর দলের চেয়ারপারসনেরও সাজা হবে, এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করা হলে খালেদা জিয়া মন্তব্য করেন, সুবিচার যে পাবেন না, এটি তিনিও জানেন। ফলে তিনি তা প্রত্যাশাও করেন না।

আন্দোলন প্রসঙ্গে উপস্থিত নেতারা বলেন, বিএনপি যাতে আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে যায় এবং জাতীয় ঐক্য থেকে দূরে সরে যায়, সে লক্ষ্যেই সরকার তারেক রহমান ইস্যুকে সামনে এনেছে। কিন্তু জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে হবে। তা ছাড়া বর্তমান অবস্থায় আন্দোলন করার বাস্তবতা নেই বলেও উপস্থিত সবাই একমত পোষণ করেন। আন্দোলন করতে হলেও সংগঠন প্রয়োজন; এমন মতামত তুলে ধরেন উপস্থিত তিনজন। খালেদা জিয়া তাঁদের সঙ্গে একমত পোষণ করে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে সম্মত হন। বৈঠক তিনি বলেন, এসব জেল-জুলুম দিয়ে ঐক্যপ্রক্রিয়া থেকে তাঁকে দূরে রাখা যাবে না।

সূত্র মতে, লন্ডনে বসবাসরত সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাঁর নিজের এবং খালেদা জিয়ার সম্ভাব্য সাজার ইস্যুতে আন্দোলন হোক—এমনটিই চাইছেন। কিন্তু দলটির সিনিয়র নেতারা মনে করেন, ঢাকায় এখন আন্দোলনের বাস্তবতা যে নেই, এটি হয়তো তিনি বুঝতে পারছেন না। অবশ্য জামায়াতকে বাদ দিয়ে অন্য দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য করতে তারেক রহমানও সম্মত হয়েছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছে।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন চাইলেই হবে না। তার জন্য সংগঠন প্রয়োজন, যা বিএনপির এখন নেই। ফলে সংগঠন গোছানোর পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যকেই তাঁদের এগিয়ে নেওয়া উচিত। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্য দলগুলো খালেদা জিয়ার পাশে থাকলে জনগণ এমনিতেই বিএনপির পাশে থাকবে।

ডা. জাফরুল্লাহ জানান, দলগুলোকে চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন খালেদা জিয়া। কিন্তু সেখানে তিনি জামায়াতকে ডাকবেন না। এভাবেই ওই জোট মিত্রকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে তারা যুগপৎ কর্মসূচি পালন করতে পারে। তাঁর মতে, ‘কথা নেই বার্তা নেই, বললাম, তোমরা বেরিয়ে যাও; এটি কোনো পদ্ধতি হতে পারে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যের পক্ষে তৎপর সুধীসমাজের এই প্রতিনিধি বলেন, প্রগতিশীল দলগুলো জামায়াত নিয়ে প্রশ্ন তুলবে—এটি যেমন সমর্থনযোগ্য; তেমনি তারা কী নিশ্চয়তা দিতে পারবে যে বিএনপি ছেড়ে দেওয়ার পর সরকার জামায়াতকে নিয়ে রাজনৈতিক খেলা খেলবে না? কিংবা তাদের সঙ্গে সমঝোতা করবে না?

শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, জামায়াতকে কিভাবে জোটের বাইরে রাখা হবে সেই প্রশ্নের নিষ্পত্তি ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। কিভাবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ প্রশ্নে সম্ভবত সমঝোতা হচ্ছে। অর্থাৎ তারা যেন সন্ত্রাসবিরোধী ওই জোটের বাইরে থেকে যুগপত্ভাবে কর্মসূচি পালন করে সেটিই তাদের বুঝিয়ে বলা হচ্ছে। জামায়াতকে দেশের পরিস্থিতি বুঝে চলা উচিত—এমন মতামত ব্যক্ত করে বিএনপিপন্থী বলে পরিচিত সুধীসমাজের এই প্রতিনিধি বলেন, সরাসরি জোট থেকে বের করে দেওয়া হলে জামায়াতের জন্য সেটি হবে অসম্মানজনক। ফলে তা না করে সম্মানজনকভাবে তাদের বাইরে রাখার কৌশল নেওয়া হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের এমনি কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু চেয়ারপারসনের প্রস্তাবিত জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে কতগুলো প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে, যেখানে জামায়াত ইস্যু ঘুরেফিরে উঠছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে সরকারি দলসহ সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আমরা আহ্বান জানিয়েছি। আনুষ্ঠানিক উদ্যোগও বিএনপির পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সরকার সেই পথে হাঁটছে বলে মনে হয় না। বরং উসকানিমূলক কথা বলে সমাজে তারা অস্থিরতা ছড়িয়ে দিচ্ছে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের মতে, সরাসরি জামায়াতকে জোটের বাইরে ঠেলে দিতে হলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত লাগবে। কেননা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই চারদলীয় জোট গঠিত হয়েছিল। তবে অন্য কোনো প্রক্রিয়া বা কৌশলে জামায়াতকে দূরে রেখে বৃহত্তর ঐক্য করা গেলে ভালো। কিন্তু সেখানেও দেখতে হবে বিএনপির রাজনৈতিক লাভ-অলাভ কতখানি আছে; যোগ করেন দলের প্রভাবশালী ওই দুই নেতা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মতে, আন্দোলন, সংগঠন ও ঐক্যপ্রক্রিয়া তিনটিই সমান্তরালভাবে এগিয়ে ন

সর্বশেষ - রাজনীতি