বায়েজিদের প্রক্সি পরীক্ষায় রাবির ‘এ ’ ইউনিটে তানভীর প্রথম, ফল স্থগিত

রাবি প্রতিনিধি:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ‘এ’ ইউনিটের (মানবিক) ভর্তি পরীক্ষার দ্বিতীয় শিফটে বায়েজিদ খানের দেওয়া প্রক্সিতে প্রথম হয়েছেন তানভীর আহমেদ। ভর্তি জালিয়াতির মাধ্যমে প্রথম হ‌ওয়ার কারণে বুধবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি কমিটি তার ফল বাতিল করে। তিনি ‘এ’ ইউনিটে ৯২ দশমিক ৭৫ পেয়ে প্রথম হয়েছেন।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, তানভীরের হয়ে প্রক্সি দিতে এসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফোকলোর বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বায়েজিদ খান ধরা পড়েন। বায়েজিদকে আটকের পর প্রক্সির সাথে জড়িতদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক তাহমিদ তন্ময়ের নাম নেন। গত ২৬ জুলাই অনুষ্ঠিত ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় বায়েজিদ ছাড়াও আরো তিনজন প্রক্সি দিতে এসে আটক হন। তারা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের মাস্টার্সের (স্নাতকোত্তর) শিক্ষার্থী এখলাসুর রহমান ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মেহজাবিন এবং খুলনার কাজী মেডিকেল কলেজের প্রভাষক সমীর রায় । বায়েজিদসহ তাদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ‘এ’ ইউনিটের ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে দেখা যায়, ‘এ’ ইউনিটের ৩৯ হাজার ৫৩৪ রোল নম্বরধারী তানভীর আহমেদ নামের একজন দ্বিতীয় শিফটে প্রথম হয়েছেন। এই রোল নম্বরধারী তানভীরের হয়ে প্রক্সি দিতে এসে আটক হয়েছেন বায়েজিদ খান। বিষয়টি জনসংযোগ দপ্তরের দপ্তরের প্রশাসক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিশ্চিত করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ‘এ’ ইউনিটের পরীক্ষার্থী তানভীর আহমেদ, রোল ৩৯ হাজার ৫৩৪-এর ফলাফল বাতিল করা হয়েছে।’’

তানভীর আহমেদের প্রথম হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ‘এ’ ইউনিটের সমন্বয়ক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ‘তাঁর ফল বাতিল করা হয়েছে। তাঁর ওএমআর শিটে কোনো সুপারিশ ছিল না। ফ্রেশ খাতা হিসেবে এসেছে, সেটি মূল্যায়ন করে ফল প্রকাশ করা হয়েছিল। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন প্রক্সিদাতার শাস্তির বিষয়ে অফিসিয়ালি কিছু জানায়নি। ফলে ভুলবশত এমনটা হয়ে গেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘পরীক্ষা চলাকালীন কাউকে সন্দেহ হলে তার ওএমআর শিট আলাদা রাখতে হয়। বায়েজিদ খানকে (তানভীরের হয়ে পরীক্ষাদাতা) পরীক্ষা চলাকালীন সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়। সে প্রক্সি দিয়েছে প্রমাণ পেয়ে মামলা-জেল দেওয়া হলো। এগুলোর পরও তাঁর ওএমআর আলাদা হয়নি। প্রক্টর দপ্তর থেকেও আমাদেরকে জানানো হয়নি এই রোল নম্বরধারীর হয়ে প্রক্সি দেওয়ায় একজনকে জেলে পাঠানো হয়েছে। ফ্রেশ ওএমআর এসেছে, মূল্যায়ন করে ফল ঘোষণা করা হয়েছিল। এখন সেটি বাতিল করা হয়েছে।’

এঘটনায় পরীক্ষকের দায় দেখছেন ভর্তি উপকমিটির সদস্যরা। তানভীর আহমেদের হয়ে প্রক্সি দিতে এসে আটক হয়েছিলেন বায়েজিদ। এরপরও ওই ওএমআর বাতিল না হওয়ায় পরীক্ষকের দায় রয়েছে। এজন্য দায়িত্ব অবহেলার কারণে পরীক্ষককে তলব করা হবে বলে জানিয়েছে ভর্তি উপকমিটি।

এবিষয়ে ভর্তি উপকমিটির সভাপতি ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, তাঁর ফল বাতিল করা হয়েছে। পরীক্ষার হলে আটক হওয়ার পরই ওই কক্ষের পরীক্ষক তাঁর খাতা বাতিলের সুপারিশ করবেন এটাই স্বাভাবিক। ওএমআরে কোনো সুপারিশ নেই। এটেনডেন্সে (উপস্থিতি) সুপারিশ আছে কিনা জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এখানে পরীক্ষকের দায় অবশ্যই রয়েছে। পরীক্ষক দায়িত্ব অবহেলার দায় এড়াতে পারেন না। তাঁর ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।

জি/আর