রাবি ভর্তি পরীক্ষা

বাসস্ট্যান্ড, স্টেশনেই কেটেছে রাত

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাবি:

মেয়েরে ভর্তি পরীক্ষার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে এসেছেন শিউলি বেগম। রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাসস্ট্যান্ডে এসে পৌঁছান তারা। রাজশাহীতে পরিচিত কেউ না থাকায় সকাল পর্যন্ত সেখানেই মা-মেয়ে অপেক্ষা করেন। যত কষ্টই হোক না কেন মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাক এমন স্বপ্নই এই মায়ের।

বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে জানা গেছে, পরীক্ষা উপলক্ষে গত রবিবার (৩ অক্টো) সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে ভর্তীচ্ছু ও তাদের অভিভাবকেরা আসতে শুরু করেন। অনেকেই পরিচিত জনদের কাছে এসে উঠেছেন। আর যারা মেস কিংবা হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করতে পারেননি তারা বাসস্ট্যান্ড ও স্টেশনে বসে থেকে এবং আশে-পাশের মসজিদগুলোতে কোনো রকমে রাতটা পার করেছেন।

ক্যাম্পাসে কথা হয় শিউলি বেগমের সঙ্গে। মেয়েকে পরীক্ষার হলে ঢুকিয়ে বাইরে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। বলছিলেন, রাজশাহীতে পরিচিত কেউ নেই। ভেবেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছুলে একটা ব্যবস্থা হয়েই যাবে। কিন্তু পৌঁছুতেই অনেক রাত হয়ে যায়। তাই বাসস্ট্যান্ডেই ছিলাম। সেখানে আমার মত বেশ কয়েকজন ছিল। তবে যত কষ্টই হোক না কেন, মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে এটাই স্বপ্ন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার (০৪ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়। এ বছর তিনটি ইউনিটে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ২৭ হাজার ৬৪৬ জন। এদের অনেকের সঙ্গেই আছেন অভিভাবক। সব মিলিয়ে অন্তত দু’লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে রাজশাহীতে।

পর্যাপ্ত হোটেল ও মেসে সিট না থাকা এবং আবাসিক হলসমূহ বন্ধ থাকায় এ বছর ভর্তীচ্ছু ও অভিভাবকদের আবাসন সংকট চরমে। যেসব হোটেল রয়েছে সেগুলো অনেক আগেই বুকিং হয়ে গেছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি ছাত্রী হলের কমন রুম, রিডিং রুম, টিভি রুমগুলোতে ভর্তীচ্ছু ছাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা করে প্রশাসন। এতে অন্তত তিন হাজার ছাত্রীর থাকার ব্যবস্থা হয়। তবে হলে প্রবেশের জন্য সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সময় বেধে দেওয়া হয়। তাই যারা নির্দিষ্ট এই সময়ের মধ্যে উপস্থিত হতে পারেননি তাদেরকে ওই অবস্থাতেই রাত কাটাতে হয়েছে।

ক্যাম্পাসের মসজিদে কথা হয় নীলফামারী থেকে আসা ভর্তীচ্ছু আলমগীর ও তার বন্ধু শাকিলের সঙ্গে। রবিবার রাতে রাজশাহীতে পৌঁছেছেন তারা। রাত করে কোনো জায়গা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের মহাসড়কের ফুটপাতে পেপার বিছিয়ে বসে থেকে রাত পার করেছেন তারা। আলমগীর বলছিলেন, সেখানে তার মতো অন্তত পনেরো জন ভর্তীচ্ছু গত রাতে ফুটপাতে বসেই কাটিয়েছেন।

জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আবাসিক হলসমূহ খোলা সম্ভব হচ্ছে না। রাজশাহীতে মেস ও হোটেলগুলো মিলিয়ে মোটামুটি ৭০ শতাংশ ভর্তীচ্ছু ও অভিভাবকদের থাকা সম্ভব। বাকিদের আত্মীয়-স্বজন কিংবা অন্য যেকোনো ভাবে থাকতে হবে।

মেস মালিক সমিতির সভাপতি এনায়েতুর রহমান জানান, ‘হল বন্ধ থাকায় হলের শিক্ষার্থীরাও এখন মেসে থাকছে। তাই সিট সংকট দেখা দিয়েছে। আর ভর্তীচ্ছুদের কষ্টের কথা ভেবে এ বছর মেসগুলোতে থাকার জন্য কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না। অভিভাবকরা থাকলে দু’শ থেকে পাঁচশ টাকা পর্যন্ত ভাড়া দিতে হবে।’ তবে পৌঁছুতে গভীর রাত হওয়ায় এসব মেসগুলোতেও যোগাযোগ করতে পারেননি অনেকেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ভর্তি পরীক্ষার সময় আবাসনের সমস্যা হয়ে থাকে। ভর্তীচ্ছু ছাত্রীদের ভোগান্তির কথা ভেবে ছাত্রী হলগুলোতে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর মেসগুলোতে ফ্রি থাকতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।