বাল্যবিয়ের শিকার সাতক্ষীরার কিশোরীরা

সাতক্ষীরা ঘুরে এসে…
জেসমিন আরা ফেরদৌস:

সরকারী আইন অনুযায়ী ১৮ বছর আগে মেয়েদের বিয়ে হওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ।কিন্তু  বিয়েই যেন একমাত্র নিয়তি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের মেয়েদের।প্রাথমিকের গণ্ডি না পেরুতেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে অধিকাংশ মেয়ের।জলবায়ু পরিবর্তন ও দরিদ্রতার শিকার এই ইউনিয়নের মেয়েরা। মাত্র ১২-১৪ বছর বয়সেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে গ্রামের অধিকাংশ মেয়ের। দুর্যোগ প্রবণ এলাকা হওয়ায় গ্রামের অধিকাংশ পরিবারই আর্থিকভাবে অসচ্ছল।বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘরবাড়ি হারিয়ে বাস্তুহারা হয়ে পড়েছেন অনেকে।আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়াকেই সমাধান বলে মনে করেন তারা।আর অল্প বয়সে বিয়ের কারণে ১৫-১৬ বছরেই তারা হয়ে যাচ্ছেন কিশোরী মা।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।

১৪ বছর বয়সী টুম্পা। ২ সন্তানের মা তিনি। তিনি বলেন,আমার ক্লাস ফাইভে থাকতে বিয়ে হয়েছে। আমাদের এখানে ভালো স্কুল কলেজ নেই। আবার এখানে সব সময় ঝড়,বন্যা লেগেই থাকে। তাই আমার বাবা মা আমাকে পড়াশোনা করাতে পারেননি। আমাকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন।

আরেক বালিকা বধু সুমি আক্তার। মাত্র ১২ বছর বয়সেই ক্লাস সিক্সে থাকতে বিয়ে হয়ে গেছে তার। তিনি বলেন, আমাদের এখানে যখন তখন ঝড়-তুফান হয়। তাই আমাদের সব সময় ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়৷ আমার বাবাও কাজ কাম হারিয়ে ফেলেছেন। তাই আমাকে আর পড়াশোনা করাতে পারেননি। আমার বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।

গাবুরা ইউনিয়নের সোরা গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর সখিনা বেগম৷ স্বামী শারিরীকভাবে অক্ষম হওয়ার  মাটি কাটার কাজ করে সংসার তিনিই চালান। তিনি সিল্কসিটিনিউজকে বলেন,আমার তিন ছেলে এক মেয়ে৷ আইলার সময় আমার সব ঘর-বাড়ি উড়ে গেছে৷ আমার স্বামী কাজ করতে পারেনা। তাই আমি আমার বড় মেয়ের ১৪ বছর বয়সে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। ওর এখন ২ টা বচ্চা আছে।

দরিদ্রতা এবং অসচেতনাকেই বল্য বিয়ের প্রধান কারণ বলে দাবি করেন স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি। এ অসচেতনতা দূর করতে তিনি কী পদক্ষেপ নিয়েছেন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কোন বাল্যবিয়ের কথা জানতে পারলে সেসব বাবা মাকে যেয়ে বুঝিয়ে থাকি যে,অল্প বয়সে মেয়ের বিয়ে দিলে মেয়ের বিভিন্ন রকম শারিরীক জটিলতা দেখা দিবে সেই সাথে সে যদি অপুষ্ট বাচ্চা জন্ম দেয় তাহলে তা সমাজের বোঝা হয়ে দাড়াবে। এছাড়াও আমরা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও তাদের বুঝিয়ে থাকি। কিন্তু তবুও আমরা এটা থামাতে পারছিনা। অনেক সময় গ্রাম ছেড়ে বাইরে গিয়ে লুকিয়ে তারা মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেন যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

অল্প বয়সে মা হওয়ার ফলে নানারকম শারিরীক জটিলতা দেখা দিচ্ছে কিশোরীদের৷ তারা জন্ম দিচ্ছেন অপুষ্ট শিশু। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাবুরা ইউনিয়নের ডুমুরিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সি.এইচ.সি.পি হেলেনা বিলকিস বলেন, আমি এখানে ১০ বছর থেকে কাজ করি।এখানে বাল্যবিয়ের প্রবণতা অনেক বেশি। বেশির ভাগ মেয়ে ১০-১২ বছরে বিয়ে হয়ে যায়। এবং ১৫ বছর হতে হতেই তারা ১-২ সন্তানের মা হয়ে যান৷ আর এতে করে তারা শারিরীকভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে। তাদের শরীর ভেঙে যায়। এর ফলে তারা অপুষ্ট এবং কৃশকায় সন্তানের জন্ম দেয়। বেশিরভাগ শিশুই কৃশকায় ও খর্বাকৃতি হয়ে জন্মে। এছাড়াও এসব কিশোরী মায়েরা লিউকোরিয়া ও জরায়ু ক্যান্সারের মতো জটিল সমস্যায় ভুগছে।

জেএ/এফ