বাবা-মাকে খুঁজছেন ১৮ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া বাগমারার সুমি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

তখন তাঁর বয়স ছিলো মাত্র চার বছর। এখন সেটি হয়েছে ২২। এর মধ্যে বিয়েও করেছেন তিনি। পেয়েছেন সরকারি চাকরি চাকরির পাশাপাশি স্বামী-সংসার নিয়ে সুখেই আছেন অনাথ সুমি। কিন্তু মন পড়ে থাকে তাঁর ফেলে আসা স্মৃতির টানে। তাই তো এখনো খুঁজে-ফেরেন ১৮ বছর আগে হারিয়ে আসা মা-বাবা ও ভাইকে। সেই তাড়নাই মাঝে-মাঝেই উদাসিন হয়ে ওঠে তাঁর মন। কিন্তা কিভাবে পাবেন হারিয়ে ফেলে আসা সেই মা-বাবা ও ছোট ভাইকে।

গল্প নয়, বাস্তবেই এমন একটি ঘটনার সম্মুক্ষিণ গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের দপ্তরের অফিস সহায়ক সুমি আক্তারের জীবনে ঘটে চলেছে। আর সেই ফেলে আসা স্মৃতির গল্পটি জানিয়েছেন কালের কণ্ঠকে। উদ্দেশ্য তাঁর মা-বাবাকে ফিরে পাওয়া।

সুমি ফোন করে জানান, সালটা তখন ২০০১-২০০২ হবে। ঠিক মনে নাই। তবে বয়স ছিল তাঁর মাত্র চার বছর। ওই সময়ে রাজশাহী শিশু সদনের সামনে কে বা কারা তাঁকে ফেলে রেখে যায়। এরপর শিশু সদনেই কাটে তাঁর তিন বছর। সেখান থেকে তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়্ গাইবান্ধা শিশু সরাকরি শিশু পরিবার (বালিকাতে)। এরপর সেখানে কাটে আরো ১১টি বছর। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত এই শিশু পরিবারে থেকেই পড়া-লেখার পাশাপাশি বেড়ে ওঠেন সুমি। এরপর ২০১৮ সালে গাইবান্ধ জেলা প্রশাসকের দপ্তরে অফিস সহায়কের চাকরিও পান তিনি। ওই বছরই একই কার্যালয়ের আরেক অফিস সহায়ক মুঞ্জরুল ইসলাম সঙ্গে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে বিয়েও দেওয়া হয় সুমির।

সুমি জানান, বিয়ের পর থেকে তিনি স্বামী-সংসার নিয়ে বেশ ভালোই আছেন। তাঁর স্বামীর বাড়ি গাইবান্ধা সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে। কিন্তু এখনো সুমির মন পড়ে থাকে ১৮ বছর আগে হারিয়ে ফেলে আসা সেই বাবা-মার কাছে।

সুমি জানান, তিনি যখন হারিয়ে যান, তখন কেউ তাঁর কাছে জানতে চাননি বাড়ি কোথায় বাবা বাবা-মায়ের পরিচয়। কিন্তু তার বাবা-মায়ের নাম এখনো মনে আছে তাঁর। হারিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর ছোট একটি ভাই ছিল এটিও মনে পড়ে। তাঁর মনে রাখা বাবা-মায়ের বাড়ি হলো রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার কোয়ালিপাড়া গ্রামে। এই গ্রামের আক্কাছ আলীর মেয়ে তিনি। আর মায়ের নাম ময়না বেগম। হারিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর একটি ছোট ভাই ছিল। এতোটুকুই মনে করতে পারেন তিনি। এর বেশি কিছু জানেন না। আর সেই বাবা-মা ও ছোট ভাইকে এখনো খুঁজে-ফেরন সুমি।

সুমি বলেন, ‘বয়স বাড়ার পাশাপাশি বাবা-মায়ের কথা খুব মনে পড়ে। কিন্তু আদৌ সেই ঠিকানাই বাবা-মা আছে কিনা জানি না। কিন্তু তাঁদের জন্য খুব কষ্ট হয় মাঝে-মাঝে। তাঁদের কথা ভেবে উতালা হয়ে ওঠে মন। কিন্তু এখনো খুঁজে পাইনি তাঁদের। একবার খুঁজে পেলে ছুটে যাবো তাঁদের বুকে। জড়িয়ে ধরবো মা-বাবাকে।’

তিনি বলেণ, ‘আমার বিশ্বাস আমি আমার মা-বাবা ও ভাইকে একদিন ঠিকই খুঁজে পাবো। আর সেদিন আমার চেয়ে কেউ খুশি হবে না। সেই দিনের আনন্দ হবে আমার বাঁধ ভাঙা। সেই সুখের মুহুর্তের জন্য আমি প্রহন গুনছি।’

সুমির এই আকুলতা তাঁর স্বামী মুঞ্জরুল ইসলামকেও জানিয়েছেন। তিনিও শশুর-শাশুড়িকে খুঁজে পেলে খুব আনন্দিত হবেন বলে কালের কণ্ঠকে জানান।

মুঞ্জরুল ইসলাম বলেন, ‘শশুর-শাশুড়িকে খুঁজে পেলে নিশ্চয় খুব ভালো লাগবে। প্রতিটি মেয়ে জামাই জামাই তাঁর শশুর-শাশুড়ির স্নেহ-ভালোবাসা পেতে চাই। আমিও সেটিই পেতে চাই। আশা করি হয়তো খুঁেজ পাবো শশুর-শাশুড়িকে।

স/আর