রাজশাহী বাগমারা উপজেলা

বাবার ভ্যানে মেয়ের লাশ, ১৮ কিমি পথ চালিয়ে থানায় পৌঁছে দিলেন বাবা!

নিহত গৃহবধু। পুরনো ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঔরশজাত নিহত মেয়ের মরদেহ কতটা ভারি তা জানেন শুধু বাবা-মা। কিন্তু যদি নিহত মেয়ের লাশ নিজের ভ্যানযোগে ১৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে হতভাগা বাবাকেই থানায় পৌঁছে দিতে হয় তা কতটা বেদনাবিধুর হতে পারে! এমন একটি হতবিহ্বল ঘটনা ঘটেছে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায়। স্বামীর বাড়িতে আত্মহত্যা কিংবা হত্যার শিকার মেয়ের লাশ রাতের অন্ধকারে নিজের চালিত ভ্যানে করে ১৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাগমারা থানায় পৌঁছে দেন উপজেলার যোগিপাড়া ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের ভ্যানচালক আবদুল মালেক! গত সোমবার (১৮ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টায় বাগমারা থানা পুলিশের নির্দেশে নিহত মেয়ের লাশ তিনি নিজেই ভ্যান চালিয়ে থানায় পৌঁছে দিয়েছেন। তবে পুলিশ বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

নিহত ওই গৃহবধূর নাম হোসনেয়ারা খাতুন (১৬)। সাত মাস আগে পাশের বীরকুৎসা গ্রামের জাহিদুল ইসলামের ছেলে রানা ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। আজ মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) দুপুরে জেলা পুলিশের একটি গাড়িতে করে নিহত গৃহবধূর মরদেহ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল মর্গে নেয়া হয়। পরে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে জামাতা, মেয়ের শ্বশুর ও শাশুড়িকে আসামি করে নিহতের বাবা আব্দুল মালেক বাগমারা থানায় একটি আত্মহত্যার প্ররোচনায় মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিয়ের পর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। সন্ধ্যায় শ্বশুরবাড়ি থেকে ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তখন পারিবারিক অশান্তির কারণে হোসনেয়ারা গলায় ফাঁস দিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছে বলে রানা ইসলামের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। অন্যদিকে নিহত গৃহবধূর বাবার অভিযোগ, তার মেয়েকে পিটিয়ে হত্যার পর এলাকায় আত্মহত্যার খবর প্রচার করা হয়েছে। এ নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করতে অনেক সময় লাগে। লাশ থানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করতে রাত তখন ১১টা। এতো রাতে লাশ বহনের জন্য কোনো যানবাহন পাওয়া যাচ্ছিলো না। অবশেষে বাগমারা থানা পুলিশের নির্দেশে নিহতের বাবা ভ্যানচালক আব্দুল মালেক নিজে ভ্যান চালিয়ে লাশ থানায় পৌঁছে দেন। সময় লেগে যায় পুলিশের।

নিহত গৃহবধূর বাবা আবদুল মালেক অভিযোগ বলেন, ‘ঈদের আগে মেয়ের জামাই একটি স্মার্টফোন কিনে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটি দিতে না পারায় মেয়ের জামাই ও তার শ^শুর বাড়ির লোকজন মেয়েকে নানাভাবে অত্যাচার করতো। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরে আত্মহত্যার খবর প্রচার করা হয়। মেয়ের লাশ ঘরের বারান্দায় ফেলে মেয়ের জামাইসহ তার পরিবারের লোকজন পালিয়ে যায়। আমি মেয়ে হত্যার বিচার দাবি করছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তারা একে অপরকে পছন্দ করে অল্প বয়সেই বিয়ে করেছে। অল্প বয়সে বিয়ে না হলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটতো না।’

বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকতর্কা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘গৃহবধূ নিহতের ঘটনায় উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আবার গৃহবধূর স্বামীর বাড়ির লোকজন বলছে, গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আপাতত গৃহবধূ নিহতের ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে থানায় একটি নিয়মিত মামলা হয়েছে। মামলায় ওই গৃহবধূর স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে আসামি করা হয়।’

পুলিশের নির্দেশে মেয়ের লাশ বাবা নিজে তার ভ্যানে করে থানায় পৌঁছে দেয়া কতটুকু মানবিক এই বিষয়ে জানতে চাইলে চাইলে রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. ইফতে খায়ের আলম বলেন, ‘আসলে ঘটনাটা ঠিক তেমন না। বাবা ভ্যান চালায় এটি সত্য। কিন্তু আমি যেটি জানতে পারলাম, অন্য ভ্যানে করে নিহত গৃহবধূর লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভ্যানের ওপর মেয়ের লাশের পাশে বসে থানায় গিয়েছিল নিহতের বাবা। তারপরও আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’

এএইচ/এস