বুধবার , ৬ জুলাই ২০১৬ | ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

বাপ-দাদার পেশা ছাড়ছেন ঢাকাই বেনারসীর তাঁতীরা

Paris
জুলাই ৬, ২০১৬ ১:০৩ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ঢাকার মিরপুরে বেনারসী পল্লী বলে পরিচিত যে শাড়ির বাজারটি একসময় ঢাকাই বেনারসীর জন্য প্রসিদ্ধ ছিল, সেখানে এখন ভারতীয় শাড়ির প্রাচুর্য।

ঝলমলে বম্বে বুটিকস, কাঞ্জিভরম, জর্জেট, নেট, লেহেঙ্গার ভিড়ে সেখানে ঢাকাই বেনারসী খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর।

ফলে মিরপুরের বেনারসী তাঁতী পল্লী ক্ষয়িষ্ণু হচ্ছে। সেখানে লেগেছে পেশা বদলের হিড়িক।

হাজার হাজার তাঁতী বাপ দাদার পুরনো পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছে রিকশা চালনা, মুদি দোকানদারী কিংবা সবজি বিক্রির মতো বিকল্প পেশায়।

সরেজমিন বেনারসী পল্লী:

মিরপুর দশ নম্বর গোলচক্কর পেরলেই রাস্তার পূর্ব পাশে দেখা যাবে পাশাপাশি কয়েকটি গলির মুখে লাগানো রয়েছে বড় বড় সাইনবোর্ড, যেখানে লেখা মিরপুর বেনারসী পল্লি।

গলি দিয়ে ঢুকে পড়লেই একের পর এক সারিবাঁধা সব শাড়ির দোকান। বাহারি সব দোকানের নাম। রকমারি সাজসজ্জা।

প্রতিটি দোকানের সামনেই দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রচার কর্মীরা। তারা খদ্দের আকৃষ্ট করতে চালাচ্ছে চেষ্টা তদ্বির।

একটি দোকানে দেখা যায়, আত্মীয়ার বিয়ের শাড়ি কিনছিলেন দিলারা শারমীন।

তিনি কনের বিয়ের দিনের জন্য খুঁজছেন লেহেঙ্গা।

দোকানী তাকে দেখাচ্ছিলেন বম্বে বুটিকস বলে পরিচিত একটি ভারতীয় লেহেঙ্গা।

পাশেই আরেক দোকানে বিয়ের কেনাকাটা করছিল আরেক জোড়া হবু দম্পতি।

কনের পছন্দ ভারতীয় বেনারসী।

বিক্রয় কর্মী মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন বলছেন, বেনারসী পল্লীতে এখন ভারতীয় শাড়ির চাহিদাই বেশী।

“ভারতীয় সিরিয়াল দেখেই তারা এই দিকে ঝুঁকছে”, বলছিলেন মি. নাসিরুদ্দীন।

 

সর্বত্র ভারতের প্রভাব:

দোকানগুলোতে ঘুরে ঘুরে দেখা যায় এক একটি দোকানে থরে থরে সাজানো ভারতীয় জর্জেট, বম্বে বুটিকস, কাঞ্জিভরম ইত্যাদি বাহারি সব নামের রংচঙে ভারতীয় শাড়ী।

এমনকি কাতান ও জামদানীও আজকাল ভারতেই তৈরি হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে।

বেনারসী পল্লীতে ভারতের প্রভাব এতটাই প্রকট যে কোন কোন দোকানের নাম এবং সাজসজ্জায় তার ছাপ পড়ছে।

বিগ বাজার নামক একটি শাড়ীর দোকানের সাইনবোর্ড, লোগো এবং সাজসজ্জার রঙের ব্যাবহার প্রায় হুবহু মিলে যাচ্ছে ভারতের বিখ্যাত সুপার শপ ‘বিগ বাজারে’র সঙ্গে।

মিরপুর এলাকায় কর্মরত তাঁতিদের একজন নেতা এবং তিন নং ওয়ার্ড প্রাথমিক বেনারসী তাঁতী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ রফিক বলছেন, “সত্যি কথা হল, বেনারসী পল্লী এখন ভারতীয় মার্কেট। এই জন্য আজকে বেনারসী শেষ”।

এই শতকের গোড়ার দিকেও বেনারসী পল্লীর দোকানীরা গোপনে ভারতীয় শাড়ি বিক্রি করলেও আজ আর তারা লুকোছাপার কোন চেষ্টাই করেন না, বলছিলেন মি. রফিক।

পেশা বদলাচ্ছেন তাঁতীরা:

জানা যাচ্ছে, মিরপুর ১০, ১১ এবং ১২ নম্বর ব্লকে এখন সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ হাজার খানেক তাঁত সচল রয়েছে।

বেনারসী পল্লী পেরিয়ে একটু পূব দিকে গেলেই জেনেভা ক্যাম্পে এখন হাতে গোনা কয়েকজন উর্দু ভাষাভাষী মানুষ তাঁত চালান।

এদের একজন ষাটোর্ধ তাঁতী মোহাম্মদ শামসুদ্দীন বলছেন, আগে এই তাঁত দিয়েই তার সংসার চলত। এখন নিজের হাতখরচও ওঠে না। তার ছেলেরা অন্যান্য পেশায় রয়েছে, তাদের রোজগারেই সংসার চলে।

অথচ ২০০৩ সালেও এই এলাকায় দশ হাজারের মতো তাঁতী ছিলেন।

তারা কোথায় গেলেন?

মি. শামসুদ্দীনের বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এসে চোখে পড়ে বহু মানুষ। কেউ সবজি বেচছে, কেউ রিকশা চালক, কেউ নরসুন্দর, কেউবা চটপটিওয়ালা।

কথা বলে জানা যায়, এরা সবাই একসময় বেনারসীর তাঁতী ছিলেন।

এদেরই একজন মোহাম্মদ রিয়াজ একটি পান-বিড়ির দোকান চালান।

তিনি বলছিলেন, “আপনারা সব ইন্ডিয়ান শাড়ী বেচেন। আমাদের বানানো শাড়ী আর চলেনা। তাই পেশা ছেড়ে দিলাম”।

তাঁতীদের নেতা মোহাম্মদ রফিক বলছেন, অনেক তাঁতী কাজ না পেয়ে নানা অপরাধের সাথেও জড়িয়ে পড়ছেন। অনেকেই বেছে নিয়েছেন মাদক বিক্রির মত পেশা।

মি. রফিক আরো বলছেন, সারা মিরপুরের সব তাঁত থেকে সপ্তাহে যে পরিমাণ শাড়ি বাজারে ঢোকে তা থেকে বেনারসী পল্লীর একশো পঁচিশটি দোকানের ভাগে গড়ে দুখানির বেশী পড়ে না।

তাহলে প্রতিটি দোকান থেকে ক্রেতারা যে প্রতিদিন গণ্ডায় গণ্ডায় কাতান আর বেনারসী কিনে আনেন, সেগুলো কোথাকার?

বলার অপেক্ষা রাখে না, এগুলো আসছে ভারত থেকে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

সর্বশেষ - অর্থ ও বাণিজ্য