বাটলার-মঈন-সাকিব নৈপুণ্যে পাকিস্তানের হার

ট্রেন্টব্রিজ থেকে হেডিংলি—ভেন্যু বদলালেও ইংল্যান্ড-পাকিস্তান সিরিজে রানবন্যা থামেনি। দুই দিন আগে ট্রেন্টব্রিজে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তান আগে ব্যাট করে রেকর্ড ২৩২ রান করে ৩১ রানে ম্যাচ জিতেছিল। রবিবার (১৮ জুলাই) হেডিংলিতে আগে ব্যাট করে ইংল্যান্ড করেছে ২০০ রান। জবাবে পাকিস্তান ১৫৫ রানে অলআউট হয়ে গেছে। ৪৫ রানের বিরাট জয় নিয়ে সিরিজ সমতা ফিরিয়েছে স্বাগতিকরা।

ছোট মাঠ, ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ব্যবধান গড়ে দিলেন ইংল্যান্ডের তিন স্পিনার। ম্যাট পার্কিনসন, আদিল রশিদ ও মঈন আলির স্পিনের সামনে দুইশ ছাড়ানো লক্ষ্য তাড়ার চ্যালেঞ্জটা নিত পারল না পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা। ৪৫ রানে হেরেছে বাবর আজমের দল।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ২০০ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। আগে ব্যাট করে পাকিস্তানের বিপক্ষে এটাই তাদের সর্বোচ্চ রানের স্কোর। ইংল্যান্ডের বড় সংগ্রহ গড়ায় সবচেয়ে বড় অবদান জস বাটলারের। তিন ভূমিকাতেই সমান কার্যকর ছিলেন তিনি। ওয়েন মর্গ্যানের অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া এই কিপার-ব্যাটসম্যান ওপেনিংয়ে খেলেন ৫৯ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। মাঝে তাণ্ডব চালান মঈন ও লিয়াম লিভিংস্টোন।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কখনও দেড়শ কিংবা এর বেশি রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে না পারা পাকিস্তান থামে ১৫৫ রানে। স্বাগতিকদের তিন স্পিনার মিলে ১১ ওভারে ৮৭ রান দিয়ে নেন ৫ উইকেট। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের পর দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন মঈন। দুটি উইকেট নেন রশিদ, একটি পার্কিনসন।

ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি ইংল্যান্ডের। একটি করে ছক্কা-চার মেরে প্রথম ওভারেই ইমাদ ওয়াসিমের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন জেসন রয়। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ১ রানে ফিরেন ডেভিড মালান। পঞ্চম ওভারে মোহাম্মদ হাসানকে চার মারেন মঈন, সেই ওভারেই ছক্কার পর টানা দুটি চার মারেন বাটলার। গতি পায় ইংল্যান্ডের ইনিংস। হারিস রউফের পরের ওভারে মঈন মারেন চারটি চার। টানা দুই ওভারে রান আসে ১৯ করে।

লেগ স্পিনার শাদাব খানকে চার-ছক্কা মারার পর হাসনাইনের স্লোয়ারে মিড অফে ধরা পড়েন মঈন। ১৬ বলে এক ছক্কা ও ছয় চারে ৩৬ রান করেন এই অলরাউন্ডার। ভাঙে ৬৭ রানের জুটি।

চালিয়ে যেতে থাকেন বাটলার। রউফের ওভারে দুই চার ও এক ছক্কায় নেন ১৫ রান। ১০ ওভারে ৩ উইকেটে তুলে ফেলে ১০৫ রান। ৩৩ বলে ফিফটি করার পর ওয়াসিমকে দুই ছক্কায় ওড়ান বাটলার। হাসনাইনের পরের ওভারে ক্যাচ দিয়ে থামেন বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যান। ৩৯ বলে খেলা তার ৫৯ রানের ইনিংসে দুই ছক্কার পাশে চার সাতটি।

এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে দুইশ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ডের ইনিংস। শেষ ছয় ব্যাটসম্যানের কেউ যেতে পারেননি ১৫ পর্যন্ত। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান লিভিংস্টোন তিন ছক্কা ও দুই চারে ২৩ বলে করেন ৩৮ রান।

৫০ রানের উদ্বোধনী জুটিতে বড় রান তাড়ায় দলকে ভালো শুরু এনে দেন বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। এরপর আর তেমন কোনো জুটি পায়নি পাকিস্তান।

ছক্কা মেরে ডালা মেলার আভাস দিয়ে সাকিব মাহমুদের পরের বলে ক্যাচ দেন বাবর। ভাঙে শুরুর জুটি। পেসারদের বিপক্ষে সাবলীল হলেও স্পিনে ভুগছিলেন রিজওয়ান। দারুণ এক ফিরতি ক্যাচ নিয়ে তার ভোগান্তির ইতি টানেন লেগ স্পিনার রশিদ। এর আগেই তার বলে স্টাম্পড হন সোহেব মাকসুদ। মঈনকে ছক্কার চেষ্টায় সীমানায় ক্যাচ দেন মোহাম্মদ হাফিজ। বোল্ড হয়ে যান ফখর জামান। লেগ স্পিনার পার্কিনসনকে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় স্টাম্পড হন আজম খান।

১৪ ওভারে ১০৫ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে এরকম ছিটকে যায় পাকিস্তান। সেখান থেকে দলকে দেড়শ রানে নিয়ে পরাজয়ের ব্যবধান কিছুটা কমান শাদাব। তিনি ছাড়া শেষ সাত ব্যাটসম্যানের মধ্যে দুই অঙ্ক পর্যন্ত যেতে পারেন কেবল ইমাদ।

আগামী মঙ্গলবার ম্যানচেস্টারে হবে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড: ১৯.৫ ওভারে ২০০ (রয় ১০, বাটলার ৫৯, মালান ১, মঈন ৩৬, লিভিংস্টোন ৩৮, বেয়ারস্টো ১৩, কারান ৯, জর্ডান ১৪, রশিদ ২, মাহমুদ ৩*, পার্কিনসন ৫; ইমাদ ৪-০-৩৭-২, আফ্রিদি ৩.৫-০-২৮-১, হাসনাইন ৪-০-৫১-৩, রউফ ৪-০-৪৮-২, শাদাব ৪-০-৩৩-১)।

পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৫৫/৯ (রিজওয়ান ৩৭, বাবর ২২, মাকসুদ ১৫, হাফিজ ১০, ফখর ৮, আজম ১, ইমাদ ২০, শাদাব ৩৬*, আফ্রিদি ২, রউফ ০, হাসনাইন ০*; রশিদ ৪-০-৩০-২, জর্ডান ১-০-১২-০, কারান ৩-০-২২-১, মাহমুদ ৪-০-৩৩-৩, মঈন ৩-০-৩২-২, পার্কিনসন ৪-০-২৫-১)।

ফল: ইংল্যান্ড ৪৫ রানে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা।

ম্যান অব দা ম্যাচ: মঈন আলি।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ