বাঘা পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর বাঘা পৌর মেয়র আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ভুয়া প্রকল্প দাখিল করে বিল উত্তোলনসহ হাট-বাজার ও পৌর মার্কেট ইজারার অর্থ লোপাট, এডিপি প্রকল্পের টাকা আত্মসাত করেছেন বলে দুদকে অভিযোগ কার হয়েছে।

বিমান ট্রাভেল এজেন্সিতে ৮৬ হাজার টাকা বাঁকি পরিষধ না করা, ডেঙ্গু ও চলমান করোনা সংকট এর নামে ভুয়া ভাওচার দাখিল করে অর্থ হাতিয়ে নেয়া ও চলমান ৬ কোটি টাকা ব্যায়ে ১৬টি কাজে অনিয়মের এসব অভিযোগ এনে তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জেলা প্রশাসকসহ বেশ কয়েকটি দপ্তরে অভিযোগ করেছেন সচেতন নাগরিক ফরামের নেতা সৈকত মাহামুদসহ স্থানীয় এক ঠিকাদার।

অভিযোগে জানা গেছে, বাঘা পৌর মেয়র আব্দুর রাজ্জাক পৌরসভার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে পৌর প্রকৌশলীর মাধ্যমে অনিয়ম দুর্নীতি করে চলেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে মেসার্স রিপা এন্টার প্রাইজ এর প্রোপ্রইটর রবিউল ইসলাম ১ জুন বাঘা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। যার নম্বর ৮। সেখানে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে কদমতলা ডাব্লু বিএম রাস্তা উন্নয়ন কাজ না করে ৩ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা এবং একটি বিপি কোটেশান কাজে ২ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা রিপা এন্টার প্রাইজের লাইসেন্সের নামে ভুয়া বিল উত্তোলনের কথা উল্লেখ করায় তাকে হুমকি দেয়ার অভিযোগে তিনি এই জিডি করেন।

এর আগে মেয়র আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সচিব, দুর্ণীতি দমন কমিশন ও জেলা প্রশাসকসহ বেশ কয়েকটি দপ্তরে অভিযোগ করেন সচেতন নাগরিক ফরামের নেতা সৈকত মাহামুদ। তিনি তাঁর অভিযোগে উল্লেখ করেন, ২০১৮-২০১৯ এবং ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে পৌর সভার চন্ডিপুর গুরুহাট তাঁর নিজেস্ব ঠিকাদারকে ১ কোটি ৩১ লাখ টাকায় ইজারা দেন। এই ইজারা দেয়ার পর এখনো ৬০ লক্ষ টাকা অনাদায় রয়েছে এবং ইজারা বাবদ এখন পর্যন্ত আয়কর ভ্যাট ব্যাংকে জমা হয়নি। অনুরুপ ভাবে বাঘার হাট দুই বারে ৮০ লাখ টাকা ইজারা দেয়া হলেও অনাদায় রয়েছে ৩০ লাখ টাকা।

অন্যদিকে বাঘা বাজারে পৌর সভার অর্থায়নে পৌর মার্কেট নির্মানের পর ২৩টি দোকান বাবদ ১ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেলেও ব্যাংকে জমা হয়েছে মাত্র ৬০ লাখ টাকা। বাঁকি ৪০ লক্ষ টাকা মেয়র আব্দুর রাজ্জাক তাঁর নিজ প্রয়োজনে খরচ করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়া ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে এডিপি প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার ভুয়া বিল দাখিল করে সরকারি টাকা আত্মসাৎ সহ বাঘা শাহি দিঘি উন্নয়ন এবং বাঘা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেট নির্মান কাজ অসম্পন্ন রেখে ঠিকাদারকে বিল প্রদানের অভিযোগ করেন সৈকত মাহামুদ। যার সত্যতা স্বীকার করেন বাঘা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনজারুল ইসলাম।

বাঘা অনলাইন ভিসা এজেন্সির পরিচালক রাসেল রহমান জানান, পৌর মেয়র আব্দুর রাজ্জাক বিভিন্ন সময় তার কাছ থেকে রাজশাহী হতে ঢাকাসহ ইন্ডিয়া যাওয়ার জন্য বিমানের টিকিট ক্রয় করেন। এই মর্মে তিনি তাঁর কাছে ৮৬ হাজার টাকা পাওনা রয়েছেন। অথচ তিনি সেই টাকা পরিষদ করছেন না।

বাঘা পৌর সভার কার্যসহকারি জিন্নাত আলী বলেন, বর্তমানে শহর উন্নয়ন অবকাঠামো খাতে বাঘা পৌর সভার অধিন প্রায় ৭ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। এ সমস্ত কাজের মধ্যে রয়েছে রাস্তা ও ড্রেন নির্মান।

সম্প্রতি পাকুড়িয়া এলাকায় ২৫ লক্ষ টাকা ব্যায়ে একটি রাস্তার কাজ দেখভাল করতে গিয়ে ব্যাপক অনিয়ম হওয়াই তিনি সেই কাজ বন্ধ করে দেন। এর কিছুক্ষন পর পৌর সভার প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম তাকে সেখান থেকে ফোন করে পৌর সভায় ডেকে নেন। এরপর ইচ্ছে মতো অনিয়ম করে সেই কাজ সম্পুর্ণ করেন সংশ্লিষ্ঠ ঠিকাদার।

বাঘা পৌর সভার প্যানেল মেয়র শাহিনুর রহমান পিন্টু অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনী ইসতেহারে আব্দুর রাজ্জাক তাঁর নিজের নামে একটি মোটর সাইকেল দেখাতে পারেনি। অথচ বর্তমানে তিনি ৩০ লাখ টাকা মুল্যের পাইভেট কারে ঘুরে বেড়ান। বলিহার গ্রামে একতলা বাড়িকে দ্বিতীয় তলায় রুপ দিয়েছেন। তিনি প্রতিমাসে একাধিকবার বিমান যোগে ঢাকায় যান এবং হোটেল ওয়েসটিন-এ রাত কাটান। যার একাধিক প্রমান তার কাছে রয়েছে ।

বাঘা পৌর যুবলীগের সভাপতি শাহিন আলম, ঠিকাদার কামাল হোসেন ও হিমেল জানান, যে সব লাইসেন্স নবায়ন নাই এ রকম ৬টি লাইসেন্সে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার ভুয়া কোটেশান প্রকল্প দেখানো সহ আংশিক কাজ করে অর্থ উত্তোলন করেছেন মেয়র আব্দুর রাজ্জাক। যা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। তিনি আরো বলেন, আব্দুর রাজ্জাক সম্প্রতি একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে রাতে ডিজে পার্টি করে তাঁর হাতদিয়ে টাকা ছেটানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

এসব অভিযোগ বিষয়ে পৌর সভার প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ ভিত্তিহীন। এ বিষয়ে মেয়রের সাথে কথা বলবেন। তিনি সব প্রশ্নের উত্তর দিবে। তবে চলমান দু’একটি কাজে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি ঠিকাদারকে বলে সে গুলো ঠিক করে দিয়েছেন বলে দাবি করেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে বাঘা পৌরসভার মেয়র আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হচ্ছে তা সঠিক না। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারাই অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না বলে দাবি করেন তিনি।

স/অ