বাঘায় ফের রস ছাড়ায় তৈরী হচ্ছে ভেজাল গুড়, চলছে রমরমা ব্যবসা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

না আছে আখের রস, না খেজুরের রস। চিনির সঙ্গে চুন, ফিটকারি, ডালডা ও হাইড্রোজ মিশিয়েই তৈরি হচ্ছে গুড়। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌর এলাকা ও তার আশপাশের গ্রামগুলোতে এরকম গুড়ের শতাধিক কারখানা রয়েছে। আড়ানি বাজারে গড়ে ওঠা ৩০টিরও বেশি পাইকারী আড়ত থেকে এসব গুড় সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। সব মিলিয়ে ভেজাল গুড়ের এক বিরাট শিল্প তৈরি হয়েছে এ এলাকায়।

 গত বছরের ৩ অক্টোবর র‌্যাব এই এলাকার চারটি কারখানা ও আড়ানি বাজারে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ভেজাল গুড় উদ্ধার করে নদীতে ফেলে দেয়।

 জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কর্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাসান আল মারুফ বলেন, নিঃসন্দেহ তাঁরা ভেজাল পণ্য তৈরি করছেন। আড়ানি পৌর এলাকার আশপাশে গড়ে উঠেছে ভেজাল গুড়ের শতাধিক কারখানা। স্থানীয় আড়ত থেকে গুড় যাচ্ছে সারা দেশে।

 গুড়ের কারখানা মালিক সমিতির হিসাব অনুযায়ী ওই এলাকায় আখের গুড় তৈরির ৭০টি কারখানা বর্তমানে চালু আছে, আখের গুড় কাারখানার শতাধিক মালিক সমিতির সদস্য। আর খেজুর গুড় তৈরির কারখানার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে গুড় তৈরির সঙ্গে জড়িত শ্রমিকেরা জানিয়েছেন এই গুড়ের ১০৫ টি কারখানা রয়েছে। বেশির ভাগই চালু। আড়ানী বাজারে এই গুড় বেচাকেনার জন্য অন্তত ৩০টি আড়ত রয়েছে।

 রাত থেকেই শুরু হয় এই গুড়ের আড়তদারি। গত সোমবার (১২ মে) ভোর চারটার দিকে আড়ানী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি আড়ত খোলা রয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্যানে বা ভটভটিতে করে গুড় আসছে। গুড়বোঝাই গাড়িগুলো সার বেঁধে রাস্তার ওপরই দাঁড়ায়। সেখানেই চলে বেচা-কেনা

 একজন ভ্যানচালক বললেন, চারভ্যান গুড় বিক্রি হলো ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। এই গুড় ভ্যানেই যাবে নাটোর। সেখান থেকে ট্রাকে যাবে ময়মনসিংহের খাজা কারাখানায়।

 রাস্তার পাশে মৌসুমী ট্রেডার্সে আখের গুড় ঢুকানো হচ্ছিল। কথায় কথায় একজন কর্মচারী বললেন, যে রং চাইবেন সেই রঙের গুড় তৈরি করে দেওয়া যাবে। শুঁকে দেখা গেল, এই গুড়ে আখের গুড়ের কোনো গন্ধ নেই।

 গত মঙ্গলবার সকাল সাতটার দিকে খোর্দ্দবাউসা গ্রামের একটি বড় কারখানায় ঢুকে দেখা যায়, চারটি চুলায় জ্বাল দিয়ে তৈরি হচ্ছে আখের‌ গুড়। আট-দশজন কর্মচারী কাজ করছেন। তাঁরা জানান চিনির সঙ্গে চুন দিয়েই রং তৈরি করেন। খেজুরের গুড় তৈরি করতে হলে চুনটা একটু বেশি দিতে হয়।

 এসব গুড় নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সাবেক শিক্ষক জোহা এম এম হোসেন বলেন, চিনির সঙ্গে চুন মিশিয়ে কাউকে খাওয়ালে অবশ্যই তার ক্ষতি হবে। এই গুড় অবশ্যই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

 এই গুড়ের কারখানার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হাচ্ছে না জানতে চাইলে বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন রেজা বলেন, অভিযোগ আসছে। তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন। সূত্র: প্রথম আলো

আরও পড়ুন: