বাঘা প্রতিনিধি:
পিছিয়ে থাকার সময় অনেক আগেই শেষ হয়েছে। তাইতো শূন্য হাতে শুরু করে এখন সফল উদ্যোক্তা ফাতেমা মাসুদ লতা। তবে এই সফলতার পেছনে রয়েছে শ্রম ও আনন্দ সুখের অনেক কাব্য। তাদেরই একজন বুটিক হাউসের স্বত্বাধিকারী ফাতেমা মাসুদ লতা। তিনি জানিয়েছেন শখ নিয়ে সময় কাটানো থেকে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প।
এমনিভাবে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকনারায়নপুর গ্রামে নকশী কাঁথা, বেড কভার, থ্রি-পিচ, ফতোয়া, হ্যান্ড ব্যাগ তৈরীতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বুটিক শিল্পের নারী শ্রমিকরা। এ কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নারী শ্রমিকরা।
চকনারায়নপুর গ্রামে বুটিক কারখানায় কাজ করতে আসা জেসমিন খাতুন বলেন, একজন বুটিক সূচশিল্পী সপ্তাহে পারিশ্রমিক পান প্রায় দেড় হাজার টাকা। ফলে একজন শিল্পী মাসে আয় করতে পারেন প্রায় ছয় হাজার টাকা। তারা সংসারে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি এই কাজ করে যে, টাকা পাওয়া যায়, সেটা বাড়তি আয়। ফলে এই গ্রামের এখন অনেককেই সুখের আলো দেখছে বলে জানান।
জানা গেছে, ১৯৯০ সালে উপজেলার চকনারায়পুর গ্রামের ফাতেমা মাসুদ লতা নামের এক নারী মায়ের দেওয়া দুই হাজার টাকা দিয়ে একটি শেলাই মেশিন ক্রয় করেন। তার বছর তিনেক পর ১৯৯৪ সালে বুটিক কুটির শিল্প করেন। সেখানে এলাকার দরিদ্র নারীরা কাজ করার জন্য এগিয়ে আসে। বর্তমানে এ কারখানায় প্রায় শতাধিক নারী কাজ করছেন। বর্তমানে কুটির শিল্পের নাম দেওয়া হয়েছে আশার আলো মহিলা উন্নয়ন সংস্থা।
এ বিষয়ে কলিগ্রামের লতা খাতুন (৩০) নামের এক সূচি শ্রমিকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রায় ছয় বছর আগে বিয়ে হয়েছে। বিয়ের দুই বছরের মাতায় একটি ছেলে হয়। ছেলের বাবা নজরুল ইসলাম একজন দিন মুজুর ও মৌসুমী ভিক্তিক খেজুর গাছ লাগানো শ্রমিক। আট মাসের সন্তান রেখে ভারতের কুচবিহার জেলার দিনহাটা নাম স্থানে খেজুর গাছ লগানোর কাজে যায়। সেখানে থেকে তাকে বিজিএফ ধরে নিয়ে যায়। তারপর তাকে ২৬ মাসের জেল দিয়েছে ভারত আদালত। লতা খাতুন নিরুপায় হয়ে পড়ে। অবশেষে চকনারায়নপুর গ্রামের বুটিক কুটির শিল্পে কাজ নেই। বর্তমানে সে কাজ করছে আর যতটুকু আয় হচ্ছে তা দিয়ে কোন রকম সংসার চলছে।
শ্রমিক মমতাজ বেগম বলেন, স্বামী পাগল ফলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে অতি কষ্টে সংসার চলছিল। এই সময় বুটিকের কাজ শিখে তাকে আর সংসার নিয়ে ভাবতে হয় না। মমতাজরে মতো অনেকে বুটিকের কাজ করে ভালোভাবে দিন কাটাতে পারছে। ঢাকার আড়ংসহ বিভিন্ন মার্কেটে এসব বিক্রি হচ্ছে। প্রত্যন্ত পল্লীতে এ ধরনের ক্ষুদ্র শিল্পের বিকাশে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। ওই শিল্পের পরিধি বাড়াতে তিনি বিভিন্ন এনজিও’র সাথে যোগাযোগ করছেন।
আশার আলো মহিলা উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক ফাতেমা মাসুদ লতা বলেন, ছাত্রজীবন থেকে গ্রামের হতদরিদ্র নারীদের ভাগ্যোন্নয়নের স্বপ্ন দেখতেন। তাই ১৯৯০ সালে নারীদের নিয়ে কাজ শুরু করি। এলাকায় গরিব, দিনমজুর ও হতদরিদ্র মানুষের বসবাস। এলাকার গরিব মানুষের কর্মসংস্থানের কথা ভেবে এ কাজ শুরু করি। এখানকার হতদরিদ্র নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এপলিক শাড়ী, নকশী কাঁথা, বেড় কভার, থ্রি-পিচ, লেডিস ফতোয়া, সর্ট কামিজ, কুশন কভার, ওয়ালমেট, রিং ব্যাগ, শপিং ব্যাগ, পার্টস-১, মোবাইল ব্যাগ, বটুয়া ব্যাগ, টিফিন ব্যাগ, টুনি ব্যাগ-১, কলেজ ব্যাগ তৈরীর কাজ শুরু করেন। গৃহকর্মের পাশাপাশি নারীরা এ কাজে শ্রম দিয়ে অতিরিক্ত উপার্জনের সুযোগ পাচ্ছেন।
ইতিমধ্যে ফাতেমা মাসুদ লতা নারী উন্নয়নে উদ্দ্যোগ গ্রহনের জন্য ওআইসিতে নাম তালিকাভূক্ত হয়েছে। তিনি ২০১১ সালে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ২০১৫ সালে সমাজ উন্নয়ন ও ২০১১ সালে কর্মসংস্থানের উপরে শ্রেষ্ট নারী নির্বাচিত হন। তিনি বর্তমানে উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী।
ফাতেমা মাসুদ লতা জানান, ব্যবসার পাশাপাশি সংসারের দেখভাল করতে হয়েছে। ফলে অবসর বলে কিছু ছিল না। তবে ব্যবসা মেয়েদের জন্য খুব কঠিন, এমনটি কখনো মনে হয়নি। চেষ্টা থাকলে যেকোনো নারীই ব্যবসা বা কর্মক্ষেত্রে সফল হতে পারবেন।’ এসব কথা যখন বলছিলেন, তখন তার মুখে সাফল্যর তৃপ্তির হাসি। বললেন, ‘পরিচিত কোনো মেয়ে যখন চাকরি করার কথা বলেন, আমি তাঁদের উৎসাহ দিই ব্যবসা করো। কারণ, আমাদের একটাই লক্ষ্য, চাকরি করব না, চাকরি দেব। তার মতে কেউ যদি শতভাগ সততার সঙ্গে কাজ করে, সাফল্য তার মুঠোবন্দী হতে বাধ্য।
বাঘা উপজেলা আ.লীগের সদস্য মাসুদ রানা তিলু জানান, এলাকায় বুটিক তৈরির কারখানা গড়ে ওঠায় অনেক দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ওই শিল্পকে প্রসারিত করার উদ্যোগ নেয়া হলে প্রত্যন্ত গ্রামেও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। তাহলে এই ধরনের ক্ষুদ্র শিল্প গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।