বাঘার ফুটপাতে মিষ্টির দোকানের সেই বিসিএস ক্যাডারের পিতাকে সংবর্ধনা


আমানুল হক আমান, বাঘা প্রতিনিধি:

রাজশাহীর বাঘায় পিতার ফুটপাতে মিষ্টির দোকানে ছুটিতে এসে বিসিএস ক্যাডারসহ দোকানদারি করা দুই ভাইয়ের গর্বিত পিতা উত্তম কুমার পালকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব বাবা দিবসে গর্বিত বাবা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ঢাকার একটি হোটেলে এই সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ফাউন্ডেশনের পক্ষে গর্বিত বাবাকে সম্মাননা তুলে দেন যুব ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি।

এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-১৬ এর সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের এমডি দিলিপ কুমার আগরওয়ালা, নিটল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল মাতলুব, পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ শরাফত, চিত্র নায়িকা বিদ্যা সিনহা সাহা মিন প্রমুখ।

রাজশাহীর বাঘায় পিতার ফুটপাতে মিষ্টির দোকানে ছুটিতে এসে বিসিএস ক্যাডারসহ দুই ভাই দোকানদারি করছেন। এ সংবাদ ৩০ এপ্রিল দেশের জনপ্রিয় অন-লাইন মিডিয়া সিল্কসিটি নিউজ ও  দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশ হয়। এই সংবাদ প্রকাশের পরই দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। তারপর ১৯ জুন বিশ্ব বাবা দিবসে গর্বিত বাবা ফাউন্ডেশনের উদ্দ্যেগে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, অমিত কুমার পাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। পরে তিনি ৩৫ তম বিসিএস পরীক্ষায় পাশ করে সান্তাহার সরকারি কলেজে যোগদান করেন। এই কলেজ থেকে তিনি ১৬৪ তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার চার মাস মেয়াদে বুনিয়াদী প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে দেশ সেরা হিসেবে নির্বাচিত হয়ে চেয়ারম্যান অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। অপরদিকে অমিত কুমার পালের ভাই, মৃনাল কুমার পাল মিঠন এমবিবিএস শেষে করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টানি করছেন। তিনি ৪৪তম বিসিএসের জন্য প্রস্ততি নিচ্ছেন।

তারা দুই ভাই রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌর বাজারের স্বর্গীয় হিতেন কুমার পালের নাতী ও বাবু উত্তম কুমার পাল ও বাসনা রানী পালের ছেলে। তাদের বাবা উত্তম কুমার পাল আড়ানী বাজারের ফুটপাতের ক্ষুদ্র মিষ্টি বিক্রেতা। মা গৃহিণী।
বোন মিতা রানী পাল সম্প্রতি সরকারি একটি অফিসের অফিসার পদে যোগদান করেছেন। তারা দুই ভাই ছুটিতে বাড়িতে এসে পিতার ফুটপাতের মিষ্টির দোকানে বসে দোকানদারি করেন। তারা দুই ভাই আড়ানী উচ্চ বিদ্যালয় ও ডিগ্রি কলেজে থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।

এ বিষয়ে অমিত কুমার পাল বলেন, আমরা অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান। বাবা ফুটপাতে মিষ্টি বিক্রি করে দুই ভাই ও এক বোনকে মানুষ করেছেন। আমি ৩৫তম বিসিএস শিক্ষা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একটি কলেজে যোগদান করেছি। সেখান থেকে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ পরীক্ষায় দেশ সেরা হয়েছি। আমরা কোনো কিছুকে খাটো করে দেখি না। সুযোগ পেলেই দুই ভাই বাবার ফুটপাতের দোকানে বসে সহযোগিতা করি। এই সংবাদটি প্রথমে  দেশের জনপ্রিয় অন-লাইন মিডিয়া সিল্কসিটি নিউজ ও যুগান্তরে প্রকাশ হওয়ার পর বিভিন্ন মিডিয়ায় আমাদের নিয়ে লেখালেখি করা হয়েছে। তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তবে আমার বাবাকে বাবা দিকসে সম্মানিত করায় আমরাও সম্মানিত হয়েছি।

এ বিষয়ে মৃনাল কুমার পাল মিঠন বলেন, বাবার ব্যবসা ছোট হলেও ছুটিতে এসে দুই ভাই সহযোগিতা করি। অনেক সময় ফুটপাতে দোকান হলেও ভিড় হয়। বাবা একা মানুষ কোন দিকে যাবে! তাই বাবার অন্য ব্যস্ততায় দোকান সামলাতে দুই ভাই সহযোগিতা করি। সুযোগ পেলেই সহযোগিতা করি। এতে বাবাকে সংবর্ধিত করা হয়েছে। আমার বাবা গর্বিত বাবা হিসেবে সম্মাননায় ভূষিত করেছেন। এতে আমরাও গর্বিত।

পিতা বাবু উত্তম কুমার পাল বলেন, আমার ছেলে মেয়েদের কখনো ভালো প্রাইভেট, ভালো পোশাক, খাদ্য, ঘুমানোর ভালো জায়গা দিতে পারেনি। আমার ও আমার স্ত্রী বাসনা রানীর সার্বিক প্রচেষ্টায় আজ ছেলে ভালো জায়গায় এসেছে। আমাকে সম্মানিত করেছেন। এতে আমি অনেক অনেক গর্বিত।

এস/আই