গায়ে ছিল ২০ কেজি ওজনের শিকল

ভেলায় চেপে আজমির যেতে যশোরে নদীতে ডুবে বাঘার জহুরুলের মৃত্যু

বাঘা প্রতিনিধি:

আধ্যাতিকতা অর্জনে ভারতের আজমির শরীফে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল রাজশাহীর বাঘার জহুরুল ইসলাম মন্ডলের (৩৪)। পীরের কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে গায়ে পড়েছিলেন ২০ কেজি ওজনের শিকল। গায়ে জড়ানো সেই শিকলে ছিল ৫টি তালা। এমন বেশভুষায় গত ১৬ মে যশোর সীমান্ত দিয়ে আজমির শরীরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন জহুরুল। যশোরের শার্শা উপজেলার ইছামতি নদীতে ভেলায় চড়ে আজমিরের উদ্দেশ্যে রওয়ানাও দেয় জহুরুল। কিন্তু ভেলা থেকে পড়ে যাওয়ায় ২০ কেজি ওজনের শিকলসহ পানিতে ডুবে মারা যায় পীরভক্ত জহুরুল। গত শুক্রবার শার্শা থানা পুলিশ বাঘা থানা পুলিশকে বিষয়টি জানালে পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ বাড়িতে নিয়ে এসে দাফন করে।

মৃত জহুরুল ইসলাম মন্ডল বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামের ফজল মন্ডলের ছেলে। আজ শনিবার (২১ মে) বাদ আসর জহুরুল ইসলাম মন্ডলের মরদেহ চেইনসহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এ বিষয়ে জহুরুল ইসলামের স্ত্রী রাশিদা বেগম জানান, আমার স্বামী ১৬ মে আজমির শরীফে যাওয়ার কথা বলে লোহার তৈরি শিকল শরীরে পরে বাড়ি থেকে বের হয়। সেই চেইনে ৫টি তালা লাগানো ছিল। লোহার সেই চেইনটির ওজন ছিল প্রায় ২০ কেজি। এর আগে লোহার চেইন ব্যবহার করেনি। বছর খানেক আগে যশোরে কাজে গিয়ে একজন পীরের কাছে বায়াত গ্রহণ করেন। তারপর থেকে লোহার চেইন ব্যবহার করতে শুরু করে।

জহুরুলের ভাই আমিরুল ইসলাম জানান, ভাইয়ের মরদেহটি শার্শার ইছামতি নদীতে ভাসতে দেখে স্থানীয় পুলিশকে খবর দেয় নদীর পাড়ের মানুষ। পরে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে। তার কাছে থাকা ব্যাগের ভেতরে পরিচয়পত্র পায়। সেই পরিচয়পত্রে নাম ঠিকানা দেখে বাঘা থানায় খবর দেন। পুলিশ বিষয়টি বাঘার পাকুড়িয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে জানায়। পরে চেয়ারম্যানের মাধ্যমে আমরা খবর পেয়ে লাশ বাড়িতে নিয়ে এসে দাফন করি।

জহুরুল ইসলামের আরেক ভাই সেন্টু আলী জানান, দাফনের আগে তার গায়ে লাগানো সেই চেইনের তালা খোলা সম্ভব হয়নি। গায়ে লাগানো চেইনে ৫টি তালাসহ তাকে দাফন করা হয়েছে। তবে তার মৃত্যুর কারণ আমরা জানতে পারিনি।

পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম মেরাজ জানান, জহুরুলের ফুটফুটে দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বড় মেয়েটির বয়স ১০ বছর আর ছোটটির বয়স ৫ বছর। আমি নিজেই তাকে এসব ছেড়ে নিজের সংসার, স্ত্রী-সন্তানের কথা চিন্তা করে ভালো হয়ে যাওয়ার জন্য অনেক বুঝিয়েছি। আমার কথা শুনে বছর খানেক ভালোই ছিল। হঠাৎ শুনি, গত কয়েকদিন আগে আজমির শরীরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে শরীরের ২০ কেজি ওজনের শিকল পড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। শার্শা থানা পুলিশের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ আমাকে জানিয়েছে, নদীতে কলাগাছের ভেলা ভাসিয়ে সেটিতে চড়ে নদী পাড়ি দিয়ে আজমির শরীরে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটি থেকে পড়ে আর উঠতে না পেরে মারা যায়।

এ বিষয়ে বাঘা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল করিম জানান, শার্শা থানা আমাদের অবগত করার পর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে জানাই। পরে তারা লাশ উদ্ধার করে এনে পারিবারিকভাবে দাফন করেন। তবে যেহেতু ওই ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। মৃত্যুও স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে। এজন্য পুলিশ এখানে কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পারিবারিকভাবে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার দাফন করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।