বাগাতিপাড়া পৌরসভার মেয়র সাময়িক বরখাস্ত

বাগাতিপাড়া প্রতিনিধি :
বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প (এডিপি) এর অর্থ ব্যয়ে অনিয়মসহ নানা অভিযোগে বরখাস্ত হয়েছেন নাটোরের বাগাতিপাড়া পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেন। গত ২১ জানুয়ারী স্থানীয় সরকার বিভাগ তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারী করেছে। শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাটোরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম রাব্বী।

মোশাররফ হোসেন বাগাতিপাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক। তিনি উপজেলার পেড়াবাড়িয়া মহল্লার মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে।

স্থানীয় সরকার বিভাগ পৌরশাখা-২ এর উপ সচিব ফারজানা মান্নান স্বাক্ষরিত এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পৌরসভার স্বার্থের পরিপন্থি কার্যকলাপ সংঘটন, সরকারী দায়িত্ব পালন না করা, সরকারী নির্দেশনা অমান্য করা, জাতীয় দিবসগুলোতে অংশগ্রহন না করা এবং এডিপি’র অর্থ ব্যয়ে অনিয়ম করাসহ নানা অভিযোগে গত ২১ জানুয়ারী তাকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, কারন দর্শানোর জবাব সন্তোষজনক নয় এবং এডিপি’র অর্থ ব্যয়ে অনিয়মের কথা স্বীকার করে মোশাররফ হোসেন ক্ষমা চেয়েছেন। এদিকে বরখাস্তের আদেশ কপি জেলা প্রশাসক, মেয়র, উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালে পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠার পর টানা ১৭ বছর ধরে মোশাররফ হোসেন চেয়ারে রয়েছেন। প্রতিষ্ঠার পর ২০০৪ সালের ২৬ জুলাই তিনি প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পান। ২০০৬ সালে পৌরসভাটির প্রথম নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সালে পদবী পরিবর্তন হয়ে মেয়র হন। নির্বাচনের পর ২০১১ সালে তার মেয়াদ শেষ হলেও মামলার কারণে নির্বাচন না হওয়ায় মেয়র হিসেবে তিনিই দায়িত্ব পালন করেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, পৌরসভাটি বাতিলের পক্ষে ২০০৮ সালে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির তৎকালীন সংসদ সদস্য আবু তালহা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি ডিও লেটার দেন। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে বাগাতিপাড়া পৌরসভা না রাখার পক্ষে গেজেট প্রকাশিত হলে স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী ওই গেজেটের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকেই বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যেই রয়েছে। ফলে আর কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, মেয়াদ শেষের কয়েকমাস আগে মোশারফ হোসেনের নিজ দলের স্থানীয় এক নেতা এই মামলাটি করেছেন।

সাময়িক বরখাস্তের বিষয়ে মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, তিনি এখনো পত্র পাননি। পত্র পেলে তিনি চিন্তা করে দেখবেন কি করা যায়। এডিপির অর্থ ব্যয়ে অনিয়মের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি জানান, তিনি কোনো অনিয়ম করেননি এবং অনিয়মের ব্যাপারে ক্ষমাও চাননি। তিনি বলেন, তিনি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, ইচ্ছে করলেই তাকে বরখাস্ত করা যায় না।

এবিষয়ে নাটোর জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ জানান, বরখাস্তের বিষয়টি তিনি জেনেছেন। এ সংক্রান্ত চিঠি তিনি ( মোশাররফ হোসেন) না পেয়ে থাকলেও পরবর্তীতে তিনি পেয়ে যাবেন। বরখাস্তের কারনে পৌরসভার প্যানেল মেয়র ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয় থেকে আর্থিক স্বাক্ষর করার ক্ষমতা দেওয়াসহ এ বিষয়ে প্যানেল মেয়রকে চিঠি দেওয়া হবে।