বাগাতিপাড়া এখনও করোনামুক্ত উপজেলা

মঞ্জুরুল আলম মাসুম, বাগাতিপাড়া:

শেষ পর্যায়ে নাটোর জেলায় করোনার ভয়াল থাবা পড়েছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী জেলায় ১৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এই জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলায় করোনা (কোভিড-১৯) ভাইরাস আক্রান্ত কোন রোগী শনাক্ত হয়নি।

প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের সচেতনতা ও নিরাপত্তা প্রদানে উপেজলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের আন্তরিক প্রচেষ্টায় উপজেলাটিকে এখনও করোনামুক্ত রাখা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তাছাড়াও জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সংগঠণ, সামর্থ্যবান মানুষ কর্মহীন অসহায় মানুষদের খাদ্য সহায়তা প্রদান এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠণের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগও উপজেলাটিকে করোনামুক্ত রাখতে ভূমিকা পালন করেছে বলে স্থানীয়রা মনে করেন।

বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ এপ্রিল থেকে প্রথম এই উপজেলায় নমুনা সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়। ১৫ মে পর্যন্ত এ উপজেলায় ৬২ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪২ টি নমুনার ফলাফল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছেছে। এদের সবারই ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। নমুনা সংগ্রহের পর ফলাফল পেতে ৪ থেকে ৮ দিন পর্যন্ত সময় লাগায় বাঁকি ২০টির ফলাফল এখনও তাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি।

স্থানীয়রা জানান, এখন পর্যন্ত এই উপজেলায় করোনা সংক্রমিত রোগী পাওয়া না গেলেও পার্শ্ববর্তী উপজেলা নাটোর সদর ও লালপুর উপজেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাছাড়াও সম্প্রতি লকডাউন শিথিল করে নির্দেশনা দিয়ে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দোকান-পাট খুলে দেয়ায় ঈদের কেনা কাটায় সামাজিক দুরত্ব মানতে মানুষের অনীহা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এছাড়াও ব্যাংকে বেতন, বয়স্ক-বিধবাসহ বিভিন্ন ভাতাদী গ্রহন, টিসিবি পণ্য ক্রয়ে এমনকি বিদ্যুৎ বিল প্রদানের সময় পুরোপুরি সামাজিক দুরত্ব বজায় না থাকার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করা না গেলে এ উপজেলায়ও করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি থেকে যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কঠোর নজরদারী বৃদ্ধির প্রতি গুরুত্বারোপ করেন সচেতন মহল।

এ ব্যাপারে বাগাতিপাড়া মডেল থানার ওসি নাজমুল হক বলেন, করোনা মোকাবেলায় পুলিশের কাজকে এলাকার মানুষ আন্তরিকতার সাথে গ্রহন করেছেন। স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে প্রচারণার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে পুলিশ কাজ করছে। তাছাড়াও সাধারন মানুষের সচেতনতার কারনে বাইরে থেকে এলাকায় প্রবেশকারীদের তথ্য দ্রুত পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। ফলে তাদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগী এ উপজেলায় নেই। তবে পরবর্তীতেও যাতে আক্রান্ত না হয় সেজন্য থানা পুলিশ সজাগ রয়েছে।

তিনি বলেন, ঈদের কেনা-কাটার ক্ষেত্রে সামাজিক দুরত্ব বজায় না রাখার খবর পেলে দ্রুত সেখানে অভিযান চালানো হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রতন কুমার সাহা বলেন, পুরো উপজেলায় স্থানীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের অধীনে ১০২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছে। শুরু থেকেই স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে জনসাধারনের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি , পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, বহিরাগতদের হোম কোয়ারেন্টিনসহ নানাবিধ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এছাড়াও কোথাও সর্দি, জ্বর, শ্বাসকষ্টের রোগী পেলে বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে এবং রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা দেবী পাল বলেন, শুরু থেকেই বিদেশ ফেরত এবং করোনা আক্রান্ত জেলা থেকে আগতদের হোম কোয়ারেন্টিন এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়াও সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক সাধারন মানুষদের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এছাড়াও কর্মহীনদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমও অব্যহত রয়েছে।

এখন পর্যন্ত এ উপজেলায় করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি এবং আগামীতেও যাতে সংক্রমন না হয় সে ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।

বাগাতিপাড়ায় ঢাকা ফেরত পুলিশ কর্মকর্তার বাড়ি লক ডাউন