বাগমারায় অপরিকল্পিত পুকুর খনন: জলাবদ্ধতায় বাড়িঘর-ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

রাশেদুল হক ফিরোজ, বাগমারা:


রাজশাহীর বাগমারায় দীর্ঘদিন ধরে অপরিকল্পিত যত্রতত্র পুকুর খননে এলাকা জুড়ে জলাবদ্ধতায় চলতি মওসুমের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি প্রবাহের পথ, ব্রীজ-কালভাট ও স্লুইজ গেট বন্ধ করে মাছচাষের কারণে পানি নিস্কাশন বন্ধ হয়ে পড়েছে। এতে করে পানিবদ্ধতায় অনেক আবাদি জমি ও বাড়ি-ঘর হুমকিতে রয়েছে।

জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন জানিয়েছেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফ আহম্মেদ।

জানা গেছে, উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের নন্দনপুর, বালানগর, দেউলিয়া, সগুনা গ্রামের মধ্য দিয়ে গোপালপুর হয়ে পানি প্রবাহের দাঁড়া (ক্যানেল) ফকিরনী নদীতে পড়েছে। যুগ যুগ ধরে গণিপুর ইউনিয়নের পুড়াকয়া, মাধাইমুড়ি, আক্কেলপুর ও বাসুপাড়া ইউনিয়নের নন্দনপুর, বালানগর, সগুনা, গোপালপুর মোহম্মাদপুর সহ পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন নিয়ে ১৫/১৬টি গ্রামের নীচু এলাকার পানি এই পথে প্রবাহিত হয়। সম্প্রতি প্রভাবশালী মহল সগুনা গ্রামের নিকট রাস্তার উপর কালভাট, পোড়াকোয়া গ্রামের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত রাস্তার উপর ব্রিজ, বালানগর রাস্তার উপরের ব্রিজসহ কয়েকট ব্রিজ-কালভার্টের মুখ বন্ধ করে দিয়ে মাছচাষ করায় পানি প্রবাহের রাস্তা বন্ধ হয়ে পড়েছে।

কৃষকরা জানান, গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া দাঁড়াতে অন্তত ১৫টি পুকুর খনন করা হয়েছে। এতে করে পানি প্রবাহের জায়গা বন্ধ হয়ে আশে পাশের জমিতে বর্ষায় ব্যাপক ক্ষতি সন্মুখীন হয়েছেন তারা।

অভিযোগকারী বাসুপাড়া ইউনিয়নের নন্দনপুর গ্রামের কৃষক খলিল উদ্দিন, সাহেব আলী, সাকিম, মসলেম উদ্দিন, জহুরুল, আবুল কাশেম ও বালানগর গ্রামের ময়েন উদ্দিন, আলতাফ হোসেন, আকবর আলী জানান, পানি প্রবাহের জায়গা জুড়ে গত কয়েক বছর ধরে পানি নামতে না পারায় জলাবদ্ধতা তৈরী হয়ে ব্যাপক ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। এবারে অতি বৃষ্টির কারণে এই ক্ষতির পরিমান আরো বেড়ে গেছে বলে তারা দাবি করেন। টানা বর্ষনে খাল-বিল ও পুকুর পরিপূর্ণ হয়ে পানি নামার অব্যবস্থাপনায় বৃষ্টিতে নিম্ন অঞ্চলের ধান ও পাট, পানবরজ, মরিচ, শাক-শবজির ক্ষেত তলিয়ে বছর বছর কৃষককের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফসলি জমিতে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে মোহম্মাদপুর, সগুনা, দ্বীপনগর, নন্দনপু, মাধাইমুড়ি, বালানগরসহ উপজেলার শত শত বিঘা বেশী ভাগ জমি অকেজো হয়ে পড়ে থাকছে।

কৃষকরা দাবি করে জানান, স্থানীয় গ্রামের পুকুর ব্যবসায়ী ভবানীগঞ্জ এলাকার আজাহার আলী, সাাঁইপাড়া গ্রামের লুৎফর রহমান, দেউলা গ্রামের জালাল উদ্দিন, বাবুল, সাঁইপাড়া গ্রামের আব্দুল জব্বারসহ ৭/৮ জন পুকুরের ব্যবসার নামে পানি প্রবাহিত দাঁড়ায় বাঁধ দিয়ে পুকুর সৃষ্টি করে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে মাছ চাষ শুরু করেছে। মাছ চাষের নামে মাথা ভাঙ্গা কালভাট, গোপালপুর-দেউলিয়া সড়কের স্লুইজ গেট, বালানগরের কালভাট, মোহম্মাদপুর-সগুনাসহ অন্তত ৬/৭টি ব্রীজ-কালভাট পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। প্রভাবশালীরা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে পুকুর খনন করেছে বলে তারা দাবি করেন।

তারা অভিযোগ করে বলেন, প্রভাবশালীদের হাত থেকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ও ফসলি জমিতে নিয়ম বর্হিভূত অপরিকল্পিত পুকুর খনন বন্ধের জন্য দফায় দফায় ভুক্তভোগী কৃষকরা স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লি¬ষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের লিখিত আবেদন করেছেন। এতে কোন সুফল মিলেনি বলেও তারা দাবি করেন।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরিফ আহম্মেদ বলেন, আমি আগে এই উপজেলায় ছিলাম না। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।