বাগমারার তিন পরিবার একমাস ধরে সমাজচ্যুত!

বাগমারা প্রতিনিধি:

লকডাউনের ভেতরে মসজিদে গিয়ে জুমআর নামাজ আদায় না করায় রাজশাহীর বাগমারার তিনটি পরিবারকে সমাজচ্যুত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সমাজের সর্দার তাঁদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়ে তাদের কে সামাজিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হয়। এতে করে পরিবারগুলোর স্বাভাবিক চলাচলে সমস্যা হওয়া ছাড়াও আসন্ন ঈদুল ফিতরের ফিতরা বিলিতে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে।

এই বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশের নির্দেশনা আমলে নেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে সমাজচ্যুত তিনব্যক্তি এই অভিযোগ করেন।

এদিকে, সমাজের সর্দার তাঁদের সমাজচ্যুত করার অভিযোগ স্বীকার করে উল্টো তাঁদের বিরুদ্ধে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ আনেন।

উপজেলার গণিপুর ইউনিয়নের চান্দেরআড়া গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, করোনাকালে সরকার সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মসজিদে নামাজের মুসল্লীর সংখ্যা নির্ধারণের নিয়ম চালুর পর তিনিসহ ওই গ্রামের দুই ব্যক্তি গত ১০ এপ্রিল স্থানীয় মসজিদে জুমআর নামাজ পড়তে যান নি। এছাড়াও তাঁদের মধ্যে একজন সর্দি কাশিতে আক্রান্ত ছিলেন। মসজিদে না যাওয়ার অপরাধে ওই দিন সমাজের সর্দার আবদুল হামিদ লোকজনদের ডেকে তাঁকেসহ রহিদুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম ও জহির উদ্দিনকে ভর্ৎসনা করেন।

এছাড়াও তাঁদের সমাজচ্যুত করে সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা হয়। তাঁদের স্বাভাবিক চলাচলে বাঁধা দেওয়া হয়। নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগীরা সর্দার আবদুর রাজ্জাক ও আরেক মাতব্বর মজিবর রহমানের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়।

এরপর পুলিশ তদন্ত শুরু করলে রহিদুল ইসলাম নামের একজনকে সমাজে ফিরিয়ে নেওয়া হলেও তাঁদের সমাজচ্যুত অবস্থায় রাখা হয়েছে। তবে তার কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেয়া হয়েছে বলে গুঞ্জন উঠেছে । রহিদুল কে সমাজে নিলেও দীর্ঘ একমাস ধরে অপর তিনটি পরিবার সমাজচ্যুত অবস্থায় রয়েছেন।

তাঁরা অভিযোগ করেন, তাঁরা স্বাভাবিক চলাফেরা ছাড়াও সামাজিক কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারছেন না। তাঁদের কে ক্ষেতে কাজ করতে অন্যদের নিষেধ হচ্ছে। নিরুপায় হয়ে তারা থানায় অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত কোন কাজ হয়নি। উল্টো তাঁদের বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।

তাঁরা জানান, ঈদুল ফিতরের আগে তাঁরা সামাজিকভাবে একত্রে ফিতরা দিয়ে সেগুলো বিতরণ করে থাকেন। তবে সমাজচ্যুত থাকায় তাঁদের ফিতরাও গ্রহণ করতে সর্দারসহ সমাজের অন্যরা অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এই অবস্থার কারণে তাঁরা সামাজিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

তবে সমাজের সর্দার আবদুল হামিদ মুঠোফোনে তিনটি পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রাখার অভিযোগ স্বীকার করলেও অন্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি উল্টো অভিযোগ করে বলেন, তাঁরা (সমাজচ্যুতরা) রাতের বেলায় এলাকার বিভিন্ন পানবরজে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, যৌনকর্মী ভাড়া করে নিয়ে এসে ফুর্তিকরাসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। নামাজও পড়েন না এজন্য তাঁদের সমাজ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে স্বাভাবিক চলাচল ও অন্যান্য কাজে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। নির্বিঘ্নে তাঁরা কাজ করছেন।

গণিপুর ইউপি সদস্য আবদুস সোবহান মণ্ডল বলেন, এই যুগেও এই ধরণের অমানবিক কাজ করা উচিত হয়নি। চেয়ারম্যানসহ আমরা ওই সমাজের সর্দার কে বলেছি।

অভিযোগের তদন্তকারী থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মোসলেম আলী বলেন, তিনি সরেজমিনে তদন্তে গিয়ে সমাজচ্যুতদের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। তাঁদের সমাজে ফিরিয়ে নিয়ে পূর্বের মতো স্বাভাবিকভাবে বসবাসের জন্য অনুরোধ করেছেন। বিষয়টি সুরাহার জন্য স্থানীয় একজন স্কুল শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়েছেন।

স/অ

আরো পড়ুন …

এই দুর্দিনেও বাগমারার মানুষের পাশে নেই উপজেলা চেয়ারম্যান